• তাপমাত্রা ৪০ নাকি ৪৬? ‘ফিল লাইক’ নিয়ে দিনভর চর্চা
    বর্তমান | ১৮ এপ্রিল ২০২৪
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা: খাতায় কলমে বলছে, ‘কলকাতার তাপমাত্রা ৩৯.৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস।’ পাশাপাশি আবার এটাও বলছে, ‘ইটস ফিল লাইক ৪৬।’ অর্থাৎ গরমের অনুভব, বাস্তব তাপমাত্রার তুলনায় সাড়ে ছ’ডিগ্রি বেশি। 

    ফলে ঘেমে নেয়ে একসা মানুষ। কড়া রোদে বেগুনপোড়া মুখ। জামা ভিজে সপসপ করছে। প্রত্যেকেরই মেজাজ তিরিক্ষি। আর সর্বত্র আলোচনা, ‘ফিল লাইক এত বেশি কেন?’ এর নেপথ্যে কেউ দেন, গ্লোবাল ওয়ার্মিংয়ের থিয়োরি। কেউ বলেন, গাছ কাটার কথা। কারও বক্তব্য, এসি হচ্ছে মূল ভিলেন, বুঝলেন দাদা।  

    ধর্মতলার ডেকার্স লেন। ফ্রায়েড রাইস আর পনির খাচ্ছেন কয়েকজন। গরম বেশি বলে চিকেন না খাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। দরদর করে ঘামছেন। রুমাল দিয়ে মুছছেন। আর চামচ মুখে তুলে বলছেন, ‘এর থেকে শুধু লস্যি খেলে ভালো হতো।’ ফোন বের করে বারবার গুগল অ্যাপ খুলে তাপমাত্রা দেখছেন তাঁরা আর ফিল লাইক ইত্যাদি নিয়ে আলোচনা করছেন। সেখানেই শোনা গেল, গ্লোবাল ওয়ার্মিং ইত্যাদি বিষয়ের বিশেষজ্ঞ মতামত। শুধু ডেকার্স লেন নয়। অফিস-কাছারি, ট্রেন-বাস, পার্ক-ফুটপাত, সর্বত্র ভয়ানক দাবদাহে ফুটতে থাকা মানুষের এই একটাই প্রশ্ন, ‘ফিল লাইক’ এত বেশি কেন? এ নিয়ে দিনভর আলোচনা, বিচার-বিশ্লেষণ। 

    চাঁদিফাটা রোদে মনে হচ্ছে যেন কলকাতা নয়, এ শহর এখন থর মরুভূমি। রাস্তায় গলে যাচ্ছে পিচ। লম্বা পথে দূরের দিকে তাকালে রাবণের চিতা চোখে ধাঁধা ধরাচ্ছে। মনে হচ্ছে ধোঁয়ায় তিরতির করে কাঁপছে দূরের রাস্তা। গত সপ্তাহেও দিব্যি ছিল মৃদুমন্দ আবহাওয়া। কয়েকদিনের মধ্যে ভোল বিলকুল পাল্টে গেল! সুর্যের তেজ কড়া হয়েই চলেছে। তাপমাত্রা পাল্লা দিয়ে বাড়ছে। চলছে তাপপ্রবাহ। শহরে কার্যত লু’র পরিস্থিতি। জলের বোতল কিনে পকেট খালি হয়ে যাচ্ছে সবার। আইসক্রিম-কোল্ড ড্রিংক্সের দোকানে লাইন। হাঁসফাঁস করতে করতে ঠান্ডা জলে গলা ভেজাচ্ছেন কেউ। কেউ ঠান্ডা পানীয়ের বোতল কিনে ব্যাগে ভরছেন। ধর্মতলার নিউমার্কেটে একাধিক আইসক্রিমের দোকানে উপচে পড়া ভিড়। শ্রীরাম আর্কেডের উল্টোদিকের আইসক্রিম পার্লারে লম্বা লাইন পড়েছে। কয়েক ঘণ্টাতেই খালি হয়ে যাচ্ছে আইসক্রিমের গাড়ি। এক বিক্রেতার কথায়, ‘দুপুরের দিকে বিক্রি সব থেকে বেশি। গত কয়েকদিন বেলা দু’টোর মধ্যে ১৫০ পিস আইসক্রিম বিক্রি হয়েছে।’

    আপাতত কালবৈশাখীর পূর্বাভাস নেই। আলিপুর আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, এই পরিস্থিতি আগামী ররিবার পর্যন্ত চলবে। তারপরও রেশ থাকতে পারে। এই ফুটন্ত, সিদ্ধ হওয়া পরিস্থিতি থেকে কবে মিলবে নিস্তার? কোনও আশার বাণী শোনাচ্ছেন না আবহাওয়াবিদরা। ভূমি থেকে জলীয় বাষ্প টেনে টেনে নাকি বের করছে শুষ্ক হাওয়া। ফলে মাটির উপরিতলের আর্দ্রতা অসহনীয় হয়ে ঘর্মাক্ত করছে শহরকে। তার উপর সূর্যদেব অকৃপণ হয়ে দিচ্ছেন ঝলসে। সবমিলিয়ে ছেড়ে দে মা কেঁদে বাঁচি অবস্থা সবার।

    এই পরিস্থিতি থেকে বাঁচতে যথাসম্ভব রোদ এড়িয়ে চলতে বলছেন চিকিৎসকরা। ছাতা, রোদ চশমা ব্যবহার করতে বলছেন। ‘ওড়নায় মুখ ঢাকুন, ভেজা রুমাল রাখুন হাতে, বারবার জল খান’-পরামর্শ তাঁদের।
  • Link to this news (বর্তমান)