• ভেঙে যাওয়া সংসার জোড়া লাগাল একরত্তি, ৫ বছরের মেয়ের দিকে তাকিয়ে মামলা প্রত্যাহার মা-বাবার
    বর্তমান | ১৮ এপ্রিল ২০২৪
  • সুকান্ত বসু, কলকাতা : মামলার মাঝপথে বাবা একবার এসেছিলেন শ্বশুরবাড়ি মায়ের সঙ্গে কথা বলতে। মেয়ের জন্য গোটা কয়েক চকোলেট আর খেলনা এনেছিলেন। অনেকদিন পর বাবাকে দেখে পাঁচ বছরের মেয়েটি কেঁদে ফেলেছিল। বাচ্চারা অত কিছু বোঝে না। বাবা-মার ঝগড়া-অশান্তি মাথায় ঢোকেনি ওর। ফলে ঝাঁপিয়ে প‌঩ড়েছিল বাবার কোলে। সেদিন সবার সামনেই আর্দ্র হয়েছিল বাবার চোখও। ‘যেতে নাহি দিব’ কবিতার মতো দুটো ছোট হাতে তার দুই পৃথিবীকে কাছে টেনে এনেছিল শিশুটি। এই টান অগ্রাহ্য করার ক্ষমতা কোনও বাবা-মারই থাকে না। এই দম্পতিরও ছিল না। ফলে দূরত্ব কমল। পাঁচ বছরের ছোট্ট মেয়েটি শিরিষের আঠার মতো জুড়ে দিল তাঁদের। বাচ্চাটির ভালোবাসার অমোঘ টানেই ফের সংসার শুরু করলেন মা-বাবা।

    স্বামীর বিরুদ্ধে দায়ের করা খোরপোশ ও পারিবারিক হিংসার মামলা প্রত্যাহার করলেন মা স্বপ্না পাল। সম্প্রতি আলিপুরের বিচার বিভাগীয় ম্যা঩জিস্ট্রেট (জেএম) আদালত এই আর্জিতে সিলমোহর দেয়। তারপর শিশুকন্যাকে নিয়ে স্বপ্নাদেবী ফিরে গেলেন জীবনতলা থানা এলাকায় তাঁর শ্বশুরবাড়ি। সেখানে স্বামী সজল পাল থাকেন। এই দম্পতি ফের নতুন করে শুরু করলেন সংসার। যৌথভাবে জানালেন, ‘সমস্যা বহুদূর গড়িয়েছিল। মেয়ের মুখের দিকে তাকিয়ে ভাঙা সংসার ফের জোড়া লাগল। মেয়েকে বড় করে তোলাই তাঁদের লক্ষ্য।’

    আদালত সূত্রে জানা গিয়েছে, সজল পালের স্টেশনারি দোকান রয়েছে জীবনতলায়। তিনি ও স্বপ্নাদেবী একই গ্রামের বাসিন্দা। দেখাশোনা করে বিয়ে। কয়েক বছরের মধ্যে তাঁদের কন্যা সন্তান জন্মায়। স্বপ্নাদেবীর অভিযোগ, তাঁর উপর নির্যাতন চালান শ্বশুরবাড়ির সদস্যরা। তারপর চার বছরের শিশুকন্যাকে নিয়ে বাপের বাড়ি আঠারো বাকি গ্রামে চলে আসেন। ২০২২ সালের নভেম্বর মাসে আদালতে মামলা করেন। এক অন্তর্বর্তী রায়ে আদালত সজলবাবুকে মাসে পাঁচ হাজার টাকা খোরপোশ দেওয়ার নির্দেশ দেয়। তিন হাজার টাকা স্ত্রীর ও দু’হাজার শিশুকন্যার প্রয়োজনে খরচের জন্য। মামলার শুনানি চলাকালীন সজলবাবু এক বন্ধুকে নিয়ে একদিন শ্বশুরবাড়ি যান। কন্যাকে কোলে নেন। স্ত্রীর সঙ্গে কথাও হয়। তারপর মামলা মিটিয়ে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় এই দম্পতি। তাঁরা দু’জনে ঠিক করেছেন, কন্যাকে মানুষের মতো মানুষ করে তুলতে হবে। ওর জন্যই একসঙ্গে এবং সুস্থভাবে বেঁচে থাকা জরুরি।                                                                                                               
  • Link to this news (বর্তমান)