Panta Bhat : বাংলার ঐতিহ্য চেনাতে শহরে পান্তা ভাত ফেস্ট
এই সময় | ১৮ এপ্রিল ২০২৪
তাপস প্রামাণিক
খাদ্যরসিক হিসাবে বাঙালি জাতির বরাবরই সুনাম রয়েছে। কিন্তু সময় বদলানোর সঙ্গে বাঙালির খাদ্যাভাসও বদলেছে। তার ফলে বাঙালি খাবারের প্রতি টান কমছে নতুন প্রজন্মের। বাঙালি খানা ছেড়ে মোগলাই, চাইনিজ় কিংবা কন্টিনেন্টাল খাবারের দিকে ঝুঁকছেন অনেকে। তার ঠিক বিপরীত স্রোতে হেঁটে এই ভরা গরমে বাংলার ঐতিহ্যবাহী পান্তা ভাতের স্বাদ চেনাতে উদ্যোগী একদল মানুষ।আগামী ২০-২১ এপ্রিল দক্ষিণ কলকাতার বাঁশদ্রোণীতে দু’দিনের পান্তাভাত ফেস্টিভ্যালের আয়োজন করছে পৌষ্টিক লাইফ নামে একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন। বঙ্গভূমির বৈশাখী পান্তা উৎসবে খাবারের সঙ্গে উপরি পাওনা থাকবে পান্তাভাতের গল্প এবং থিম থং। এর অন্যতম আয়োজক সুদীপ চট্টোপাধ্যায় জানাচ্ছেন, পান্তা উৎসবে ঢেঁকি ছাঁটা ভাদই চালের ভাত ছাড়াও বিভিন্ন ধরনের মেনু থাকবে।
এর মধ্যে রয়েছে তেঁতুলের হাত অম্বল, পেঁয়াজ কুচি শুকনোলঙ্কা পোড়া দিয়ে আলুসেদ্ধ মাখা, নটে শাক ভাজা, বড়ি ভাজা, নারকেল বড়া, আমোদি মাছ ভাজা, বেগুনপোড়া, কাঁচা আম দিয়ে মটর ডালের চচ্চড়ি, মৌরলা মাছের রসা, চিংড়ির ঝাল চচ্চড়ি এবং কাউনের চালের পায়েস। এছাড়াও থাকছে বাড়ির তৈরি আমতেল, কাসুন্দি, ছাঁচি পেঁয়াজ, শুকনোলঙ্কা পোড়া, কাঁচা লঙ্কা এবং গন্ধরাজ লেবু।
সুদীপের কথায়, ‘পান্তাভাত আমাদের বাঙালির ঐতিহ্যবাহী সংস্কৃতির একটা অঙ্গ। আজকের নতুন প্রজন্ম সেটা ভুলতে বসেছে। সেটা বাঁচিয়ে রাখতেই আমরা এই পান্তা উৎসবের আয়োজন করছি। বাঁশদ্রোণীর কাছে মাতৃছায়া সংগ্রহশালায় এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে।’ এই মুহূর্তে তীব্র দহনে জ্বলছে গোটা দক্ষিণবঙ্গ। দিনে রাস্তায় বেরোলেই চড়া রোদে ডিহাইড্রেশনে অনেকে অসুস্থ হয়ে পড়ছেন। এই পরিবেশে শরীর ঠান্ডা রাখতে পান্তার জুড়ি মেলা ভার। তার প্রিপারেশনও অনেক সহজ।
ভাত রান্না করার পর তাতে জল ঢেলে রাখলেই পরের দিন সেটা পান্তা ভাতে রূপান্তরিত হয়। গরমের সময়ে সেটা শরীরের তাপমাত্রা ঠিক রাখতে সাহায্য করে। প্রবীণ চিকিৎসক প্রদীপ রায়চৌধুরী জানিয়েছেন, সাধারণ ভাতের তুলনায় পান্তাভাতে পুষ্টিগুণ বেশি থাকে। এতে প্রচুর পরিমাণ আয়রন, পটাসিয়াম, ক্যালসিয়াম, ভিটামিন সি এবং ভিটামিন বি পাওয়া যায়। সেজন্য এই খাবার অনেক বেশি স্বাস্থ্যসম্মত। বিশেষ করে গরম কালে পান্তাভাত খুব উপকারি।
এক সময়ে গ্রাম বাংলায় পান্তাভাত খাওয়ার খুবই চল ছিল। ধীরে ধীরে সেটা বাঙালির খাদ্যভাসের মধ্যে সেটা ঢুকে পড়ে। উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরীর বিখ্যাত কিশোরগল্প ‘পান্তাবুড়ির কথা’-তেও বাঙালির পান্তাভাত প্রীতির কিছুটা নিদর্শন মেলে। এক চোর এসে রোজ পান্তাবুড়ির পান্তাভাত খেয়ে যেত। তাই বুড়ি রাজার কাছে নালিশ জানাতে গিয়েছিলেন। রামকৃষ্ণ পরমহংসদেব, স্বামী বিবেকানন্দ, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের মতো মনীষীরাও পান্তাভাতের ভক্ত ছিলেন বলে শোনা যায়।