• ভোটে ‘কালো টাকা’ রুখতে দামোদর ও অজয় নদের বালিঘাটে অভিযান?
    দৈনিক স্টেটসম্যান | ১৮ এপ্রিল ২০২৪
  • মোল্লা জসিমউদ্দিন:  চলতি লোকসভা নির্বাচন আবহে কেন্দ্রীয় এজেন্সিগুলির অতি সক্রিয়তা নিয়ে বারবার প্রশ্ন তুলছে রাজ্যের শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেস৷ আয়কর দপ্তর থেকে এনআইএ, কিংবা সিবিআই থেকে ইডি৷ প্রত্যেক কেন্দ্রীয় সংস্থা গত একমাস ধরে বাংলার বিভিন্ন প্রান্তে টানা অভিযান চালাচ্ছে৷ কেন্দ্রীয় নির্বাচন কমিশনের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, ৩০ মার্চ পর্যন্ত বাজেয়াপ্ত হওয়া নগদের পরিমাণ ৭ কোটি ৮৭ লক্ষ টাকা৷ উদ্ধার হয়েছে ১২ লক্ষ ৭০ হাজার লিটার মদ৷ যার বাজারমূল্য ৩৩ কোটি ৮৬ লক্ষ টাকা৷ ভোটের মুখে ২৭ কোটি ৩২ লক্ষ টাকা মূল্যের দামী ধাতুও বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে৷ এপর্যন্ত ২৪ কোটিরও বেশি টাকা বাজেয়াপ্ত হয়েছে রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে৷
    এছাড়াও প্রায় ৩৬ কোটি টাকা অন্যান্য সামগ্রী বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে৷ সবমিলিয়ে রাজ্যে বাজেয়াপ্ত হয়েছে নগদ-সহ ১৪৭.১৯ কোটি টাকার সামগ্রী৷ ভোটের বিনিময়ে টাকা কিংবা মদ! নির্বাচনের আগের রাতে টাকা ছডি়য়ে ভোট কিনে নেওয়ার ট্রেন্ড চলে আসছে বছরের পর বছর ধরে৷ এবছরের তার অন্যথা হচ্ছে না৷ তবে সেই প্রবণতা রুখতে এবার বাংলার ছটি কেন্দ্রকে ‘আর্থিক স্পর্শকাতর’ বলে ঘোষণা করেছে নির্বাচন কমিশন৷ স্বাভাবিকভাবেই এই ছয় কেন্দ্রে কড়া নজর রাখছে কেন্দ্রীয় নির্বাচন কমিশন৷ ওয়াকিবহাল মহল মনে করছে পূর্ব বর্ধমান জেলায় দামোদর ও অজয় নদের বেআইনি বালিঘাটগুলিতে অভিযান চলতে পারে৷ কেননা বেআইনি অর্থ এবং এই অর্থে পুষ্ট ম্যাসলম্যানদের প্রভাব প্রতিটি নির্বাচনে দেখা যায়৷ অর্থ বিনা ম্যাসলম্যানরা যেন ‘মণিহারা ফণী’৷ তাই কেন্দ্রীয় নির্বাচন কমিশন নিযুক্ত আর্থিক নজরদারি কমিটি এই সব বেআইনি বালিঘাটগুলিতে নজর রাখতে পারে বলে অনেকেই মনে করছেন৷
    গত একমাসে জেলার ডিএলআরও, এসডিএলআরও, বিএলআরও অফিস সহ পুলিশ-প্রশাসনের আধিকারিকদের বেআইনি বালিঘাট নিয়ে লিখিত অভিযোগ জমা পড়েছে বলে জানা গেছে৷ সেইসব দাখিল অভিযোগ গুলির পরিপেক্ষিতে কি কি ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে? তাও নাকি অনেকে খোঁজ খবর নিচ্ছেন৷ বিশেষ সুত্রে জানা গেছে, রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীকে কেউ কেউ এইসব বালিঘাট সংক্রান্ত জমাকৃত অভিযোগ পাঠিয়েছেন৷ তাই রাজ্যের শাসক দল তৃণমূলের কট্টর বিরোধী হিসাবে পরিচিত বিরোধী রাজনৈতিক নেতা শুভেন্দু এই সমস্ত অভিযোগগুলি নিয়ে চুপচাপ বসে থাকবেন, তা অনেকেই বিশ্বাস করেন না৷ যদিও শাসক দলের নেতা-কর্মীরা জানিয়েছেন-?তারা এইসব বেআইনি বালিঘাটে যুক্ত নয়, তাই তাদের এইসব নিয়ে ফালতু চিন্তার কোন প্রসঙ্গ আসেনা?৷ আগামী ১৩ মে সারা দেশে লোকসভার চতুর্থ দফা নির্বাচন রয়েছে৷ ওই দিন রাজ্যে ৮টি লোকসভা আসনে ভোট হবে৷ এর মধ্যে বোলপুর, বর্ধমান পূর্ব এবং বর্ধমান দুর্গাপুর, আসানসোল আসন অন্যতম৷ দক্ষিণবঙ্গে দামোদর ও অজয় নদের উপকূলীয় এলাকার মধ্যে পড়ছে এই চারটি লোকসভার অধীনে একাংশ এলাকা৷
    বোলপুর লোকসভার অধীনে নানুর-কেতুগ্রাম-আউশগ্রাম, বর্ধমান পূর্ব লোকসভার অধীনে কাটোয়া-রায়না, বর্ধমান দুর্গাপুর লোকসভার অধীনে গলসি প্রভৃতি এলাকা গুলিতে দামোদর-অজয় নদের বালিঘাট দখল-বেদখল ঘিরে হানাহানির ইতিহাস রয়েছে৷ প্রতিটি নির্বাচনে বোমাবাজি-সশস্ত্র বাহিনীর দৌরাত্ম দেখা যায় নদ-নদীর চরে৷ কিছু বালিঘাট ভুমি সংস্কার দপ্তরের অনুমোদন থাকলেও বেশিরভাগ বালিঘাট চলে বেআইনি ভাবে৷ আবার বৈধ ঘাট গুলি যে পরিমাণ জায়গা উল্লেখ থাকে, তা থেকে বেশি জায়গা জুড়ে চলে বালিলুট৷ এই বালিলুট নিয়ে গত একমাসে পূর্ব বর্ধমান জেলার ডিএলআরও, এসপি, ডিএম, এসডিও, এসডিএলআরও, আইসি, বিএলআরও অফিসে বহু অভিযোগ জমা পড়েছে বলে জানা গেছে৷ অভিযোগ, নির্বাচনী ব্যস্ততা দেখিয়ে সিংহভাগ অভিযোগ সেভাবে গুরত্ব দেয়নি পুলিশ-প্রশাসন৷ বিশেষ সুত্রে জানা গেছে, এই নিস্ক্রিয়তা সামনে রেখেই বিরোধী রাজনৈতিক দল সর্বপরি শাসক দলের বিক্ষুব্ধ গোষ্ঠী আসরে নেমে পড়েছে৷ বিষ্ণুপুর লোকসভার বিদায়ী সাংসদ সৌমিত্র খাঁ পূর্ব বর্ধমান জেলার খন্ডঘোষে দামোদরের বালিলুট নিয়ে প্রায়শই সরব হয়েছেন৷ উল্লেখ্য, আগামী ২৫ মে সারা দেশে লোকসভার ষষ্ঠ দফার নির্বাচনে বিষ্ণুপুর লোকসভা আসনে নির্বাচন রয়েছে৷ এই লোকসভার অধীনে পড়ছে পূর্ব বর্ধমান জেলার খন্ডঘোষ৷
    বিশেষ সুত্রে আরও জানা গেছে যে, রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী কে অনেকেই পুলিশ-প্রশাসনের কাছে জমা হওয়া বালিলুট নিয়ে অভিযোগপত্রগুলি পাঠিয়েছেন৷ ওয়াকিবহাল মহল মনে করছে লোকসভা নির্বাচনে কালো টাকা এবং ম্যাসলম্যান রুখতে এইসব অভিযোগগুলি কেন্দ্রীয় নির্বাচন কমিশনের গোচরে আনা হতে পারে৷ আগামী চতুর্থ দফা নির্বাচনে বোলপুর-বর্ধমান পূর্ব-বর্ধমান দুর্গাপুর আসনের সিংহভাগ বিধানসভা এলাকায় বিরোধী রাজনৈতিক দল বিশেষত বিজেপি সাংগঠনিকভাবে অত্যন্ত দুর্বল৷ তাই এক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় এজেন্সির টার্গেট হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে জেলাস্তরের শাসক দলের কোনও কোনও বর্ষীয়ান নেতা আশঙ্কা করছেন৷
    এবারের লোকসভা নির্বাচনে কেন্দ্রীয় নির্বাচন কমিশন আর্থিক নজরদারি কমিটি রেখেছে৷ এই কমিটিতে নবতম সংযোজন কেন্দ্রীয় আর্থিক তদন্তকারী সংস্থা ইডি৷ সাম্প্রতিক সময়কালে সর্বপরি লোকসভা নির্বাচন আবহে যেভাবে সিবিআই-ইডি-এনআইএ-আয়কর দপ্তর অভিযানের মাত্রা বৃদ্ধি ঘটিয়েছে৷ সেখানে পূর্ব বর্ধমান জেলায় দামোদর ও অজয় নদের বেআইনি বালিঘাটের রসদ খুঁজতে এবং ম্যাসলম্যান রুখতে অভিযান চালাতে পারে কমিশন নিযুক্ত আর্থিক নজরদারি কমিটি বলে মনে করছে ওয়াকিবহাল মহল৷
  • Link to this news (দৈনিক স্টেটসম্যান)