Heat Wave : কম ঘামেও জলশূন্য হচ্ছে শরীর, হাসপাতালে বাড়ছে রোগীর সংখ্যা
এই সময় | ১৮ এপ্রিল ২০২৪
এই সময়: দুপুরে শুষ্ক, বিকেলের পরে আর্দ্র। গরমের এই জোড়া ফলায় বিদ্ধ হয়ে শহরবাসীর শরীর বিগড়োচ্ছে প্রায়ই। কখনও ঘামের অভাবে লু থেকে অসুস্থ হয়ে, আবার কখনও ঘেমেনেয়ে জলশূন্যতার শিকার হয়ে হাসপাতালের দ্বারস্থ হচ্ছেন অনেকেই। পরিস্থিতির গুরুত্ব বুঝে স্বাস্থ্য দপ্তরও মঙ্গলবার ‘হিট রিলেটেড ইলনেস’ নিয়ে রাজ্যস্তরে বৈঠক করেছে। ঠিক করা হয়েছে, মহকুমা, জেলা ও মেডিক্যাল কলেজ স্তরের হাসপাতালে পর্যাপ্ত ফ্লুইড ও ন্যূনতম পাঁচটি করে ডেডিকেটেড বেড রাখতে হবে।বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মহানগরের বাতাসে এখন আর্দ্রতা আছে বটে। তবে কলকাতার গড়পড়তা আবহাওয়ায় যেমনটা দেখা যায়, সে তুলনায় তা কমই। তাই ঘাম হচ্ছে ঠিকই, কিন্তু কুলকুল করে ঘামছেন না কেউ। বিশেষত দুপুরে। ফলে ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের দোরগোড়ায় দাঁড়িয়ে থাকা কলকাতায় শহরবাসীর শরীর ‘কুল’ থাকছে না, বেড়ে যাচ্ছে গা-হাতের তাপমাত্রা।
আর সেখান থেকেই শুকনো গরমে অনভ্যস্ত শরীরে হিট এগজশন আর হিট স্ট্রোকের পরিস্থিতি তৈরি হচ্ছে। যার সাফ প্রতিফলন দেখা যাচ্ছে শহরের হাসপাতালগুলোয়। গরমে কাহিল লোকজনের ভিড় বাড়ছে ইমারজেন্সি, আউটডোর আর ইনডোর ওয়ার্ডে।
আবহাওয়া দপ্তর সূত্রে খবর, বাংলার, বিশেষ করে দক্ষিণবঙ্গের এই অবস্থার নেপথ্যে ভিলেন হলো পশ্চিমের শুকনো হাওয়া। আলিপুর হাওয়া অফিস জানাচ্ছে, এই হাওয়া প্রধানত ছোটনাগপুর মালভূমির দিক থেকে বয়ে আসছে। এই কারণেই বাতাসে জলীয় বাষ্পের পরিমাণ সামান্য। ওই শুকনো বাতাসের প্রভাবেই মানুষের শরীরে ঘাম কমে গিয়েছে।
পরিসংখ্যান বলছে, ইদানীং বাতাসে সর্বনিম্ন আপেক্ষিক আর্দ্রতার পরিমাণ শতকরা ৫০ ভাগও থাকছে না— সোমবারে যা ছিল ৩৪ শতাংশ আর মঙ্গলবারে ৩৯ শতাংশ। বিজ্ঞানের নিয়মে এত কম আর্দ্রতা মূলত দেখা যাচ্ছে দুপুর ২টো-৩টে নাগাদ, ঠিক যখন দিনের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা পারা ছোঁয়।
আবার দুপুরের আগে-পরে থাকছে গরমের সঙ্গে আর্দ্রতাও। আর এতেই শরীর আরও কাহিল হয়ে পড়ছে লোকজনের। অনেকে অসুস্থ হয়ে হাসপাতালেও পৌঁছচ্ছেন। তাঁদের একাংশের শারীরিক পরিস্থিতি বিচার করে ভর্তিও করে নিচ্ছেন চিকিৎসকরা। বিপি পোদ্দার হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানাচ্ছেন, গরমে অসুস্থ হয়ে মোট ৫৯ জন রোগী রবি, সোম ও মঙ্গলবার মিলিয়ে এসেছেন তাঁদের আউটডোর ও ইমার্জেন্সিতে।
এর মধ্যে ২৩ জন ভর্তি হয়েছেন। তাঁদের মধ্যে ২১ জনই জলশূন্যতার শিকার। ওই ৫৯ জনের মধ্যে ৬৩ শতাংশ রোগীই প্রবীণ। নিউ আলিপুরের ওই বেসরকারি হাসপাতাল গোষ্ঠীর উপদেষ্টা সুপ্রিয় চক্রবর্তী বলেন, ‘এই পরিস্থিতি বলে আমরা সামার-কেয়ার আউটডোর চালু করেছি।’
পিয়ারলেস হাসপাতালের সিইও সুদীপ্ত মিত্র জানান, তাঁদের আউটডোরে গড়ে ২০-২৫ জন রোগী আসছেন গরমে অসুস্থ হয়ে। বেশির ভাগেরই পেটের সমস্যা। মেডিকা হাসপাতালের ক্রিটিক্যাল কেয়ার ও ইন্টারনাল মেডিসিন বিভাগের অধিকর্তা তন্ময় বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘পয়লা বৈশাখ থেকেই নিত্য দু’-তিন জন রোগী গরমে অসুস্থ হয়ে আসছেন। মূলত হিট এগজ়শন। তাঁদের স্যালাইন দিয়ে সাধারণত পরিস্থিতি সামলাতে হচ্ছে।’
আমরি হাসপাতাল গোষ্ঠীর এক মুখপাত্র জানান, এমন আর্দ্র-শুষ্ক মিশ্র গরম চলতে থাকলে চিকিৎসকদের আশঙ্কা, আগামী কয়েক দিনে অসুস্থের সংখ্যাটা আরও বাড়বে।আনন্দপুর ফর্টিস হাসপাতালের ইমার্জেন্সি মেডিসিনের প্রধান চিকিৎসক সংযুক্তা দাস জানাচ্ছেন, গরমে অসুস্থ হয়ে কিছু রোগী রোজই আসছেন হাসপাতালে। তবে কেউ গুরুতর অসুস্থ নয়। বাড়িতেই চিকিৎসা সম্ভব বলে যথাযথ পরামর্শ দিয়ে তাঁদের ফেরত পাঠানো হচ্ছে।
উডল্যান্ডস হাসপাতালের সিইও তথা ম্যানেজিং ডিরেক্টর রূপালি বসু বলেন, ‘গত তিন দিনে দু’ জন রোগী প্রবল গরমে অসুস্থ হয়ে ভর্তি হয়েছেন। তাঁদের ডিহাইড্রেশন হয়ে গিয়েছিল। আমাদের একজন নার্সও অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন গরমে। তাঁকে অবশ্য ইমার্জেন্সি ওয়ার্ডেই চিকিৎসা করে সুস্থ করে তোলা গিয়েছে।’
ডিসান হাসপাতালের কর্তারা জানাচ্ছেন, পরিস্থিতির গুরুত্ব বুঝে গরমের রোগীকে ভর্তি নেওয়ার জন্য দু’টি পৃথক বেড রাখা হয়েছে এখন। গত তিন দিনে ৬ জন এসেছেন অসুস্থ হয়ে। তাঁদের স্যালাইন দেওয়া হয়েছে। সল্টলেকের মণিপাল হাসপাতালের ইমার্জেন্সি মেডিসিনের চিকিৎসক পারমিতা কাঞ্জিলাল চক্রবর্তী বলেন, ‘রবিবার থেকে বুধবার দুপুর পর্যন্ত গরমে অসুস্থ হয়ে পড়ে চার জন হাসপাতালের ইমার্জেন্সিতে এসেছেন। আউটডোরে এসেছেন আরও দু’ জন। সাধারণত বয়স্করা গরমে বেশি অসুস্থ হলেও মাঝবয়সিদেরও এবার অসুস্থ হয়ে পড়তে দেখা যাচ্ছে।’