এই সময়, কলকাতা ও নয়াদিল্লি: ভোট-মঞ্চের পর্দা সরছে। ভোট-গ্রহণ শুরু। আগামী পাঁচ বছর দিল্লির মসনদের উপর কাদের দখলদারি থাকবে—সাত দফার সেই যুদ্ধের প্রথম দফা আজ, শুক্রবার। ভোট-প্রার্থী, ভোটার এবং নির্বাচন কমিশন—ভোট-মঞ্চে তৈরি সব পক্ষই। আজ পশ্চিমবঙ্গের আলিপুরদুয়ার, কোচবিহার ও জলপাইগুড়ি এই তিনটি আসনে নির্বাচন। সবার ফোকাসের কেন্দ্রবিন্দুতে অবশ্য কোচবিহার। কারণ, শাসক-বিরোধী রাজনৈতিক চাপানউতোর ও সংঘর্ষে এই লোকসভা কেন্দ্রটি, বিশেষ করে এই কেন্দ্রের অন্তর্গত শীতলখুচি বেশ কিছুদিন ধরেই উত্তপ্ত।পশ্চিমবঙ্গের তিনটি কেন্দ্র-সহ প্রথম দফায় গোটা দেশের ২১টি রাজ্যের ১০২টি লোকসভা আসনেও আজ ভোট-প্রার্থীদের ভাগ্য নির্ধারণ হবে। এই রাজ্যগুলির মধ্যে মণিপুরের একটি আসনেও আজ ভোটগ্রহণ হবে। গোষ্ঠী-সংঘর্ষে বিধ্বস্ত মণিপুরে প্রথম দফায় একটি আসনে শান্তিপূর্ণভাবে করানোই এই মুহূর্তে নির্বাচন কমিশনের কাছে সব থেকে বড় চ্যালেঞ্জ। কমিশন অবশ্য মণিপুরের ক্ষেত্রে কোনও ঝুঁকি নিতে চায়নি। দু’টি লোকসভা আসনের মণিপুরে ভোট হচ্ছে দু’দফায়!
ফোকাসের কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে কোচবিহার
সব মিলিয়ে ভোটগ্রহণ প্রক্রিয়া চলবে ১ জুন পর্যন্ত। ফল প্রকাশ ৪ জুন। অধিকাংশ রাজ্যে একাধিক দফায় ভোটগ্রহণ হলেও বড় রাজ্যগুলির মধ্যে তামিলনাড়ুর ৩৯টি আসনেই আজ ভোট হবে। ৮০টি লোকসভা আসনের উত্তরপ্রদেশে ৮টি কেন্দ্রে প্রথম দফায় নির্বাচন। শুক্রবার লোকসভা ভোটের প্রথম দফায় ভাগ্য নির্ধারণ হতে চলেছে দেশের একঝাঁক রাজনৈতিক হেভিওয়েটের।
সেই তালিকায় বিজেপির নীতিন গড়কড়ি, সমাজবাদী পার্টির চন্দ্রশেখর আজাদ, ডিএমকে নেত্রী কানিমোঝি, বিহারের এলজেপি নেতা চিরাগ পাসোয়ান, প্রবীণ কংগ্রেস নেতা কমলনাথের ছেলে নকুলনাথের মতো আরও অনেকেই আছেন। বাংলায় এই তালিকায় রয়েছেন কোচবিহারের বিজেপি প্রার্থী তথা কেন্দ্রের বিদায়ী স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী নিশীথ প্রামাণিকও।
ফোকাসের কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে কোচবিহার
শুক্রবার বাংলার যে তিনটি আসনে ভোট, তার সবক’টিই আপাতত বিজেপির দখলে। ২০১৯ লোকসভা ভোটে উত্তরবঙ্গের এই তিনটি কেন্দ্রেই বিজেপি জিতেছিল। এ বার বিজেপি গড়ে তৃণমূল থাবা বসাতে পারে কি না, সে দিকেই নজর রাজনৈতিক মহলের। ২০২১ বিধানসভা ভোটের দিনই কোচবিহারের শীতলখুচিতে কেন্দ্রীয় বাহিনী সিআইএসএফের গুলিতে প্রাণ গিয়েছিল চারজন গ্রামবাসীর। যা নিয়ে উত্তপ্ত হয়ে উঠেছিল বঙ্গ-রাজনীতি।
এ বারও প্রথম দফা লোকসভা ভোটের আগে অগ্নিগর্ভ কোচবিহারের ওই এলাকা। একদিকে কমিশনের তরফে কোনও ঝুঁকি না-নিয়ে শীতলখুচিতে সিআইএসএফের পরিবর্তে অন্য কেন্দ্রীয় বাহিনীকে মোতায়েন করা হচ্ছে। আবার এরমধ্যেই রাজনৈতিক সংঘর্ষও চলছে সেখানে। বিজেপির অভিযোগ, তৃণমূল তাদের কর্মীদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে হুমকি দিচ্ছে। জোড়াফুলের পাল্টা অভিযোগ, জেলার বিভিন্ন জায়গায় সন্ত্রাস করছে গেরুয়া শিবিরই। মারুগঞ্জে কেন্দ্রীয় বাহিনীর ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। ভেটাগুড়িতে বিজেপি নিয়মিত বোমাবাজি করছে বলে তৃণমূলের অভিযোগ।
ভোটের আগের দিন রাতে বিজেপি নেতারা বাড়ি বাড়ি গিয়ে টাকা বিলি করতে পারে বলেও স্থানীয় প্রশাসনের কাছে আশঙ্কা প্রকাশ করে এসেছেন কোচবিহার জেলা তৃণমূল নেতৃত্ব। বৃহস্পতিবার রাতে গোসানিমারিতেও এক তৃণমূল কর্মীকে কোপানোর অভিযোগ উঠেছে। এর আগে বুধবার রাতেও শীতলখুচি থানার সতীপুকুর এলাকায় উত্তেজনা ছড়ায়। বিজেপির দাবি, তৃণমূলের বাইকবাহিনী এলাকায় ঢুকে সাধারণ মানুষকে হুমকি দিচ্ছিল।
এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে দু’পক্ষের সংঘর্ষও বাধে। পরে পুলিশ এসে পরিস্থিতি সামাল দেয়। মাথাভাঙ্গার ছাটখাটের বাড়ি এলাকায় তৃণমূলের বিরুদ্ধে বিরোধীদের ফেস্টুন ছিঁড়ে ফেলার অভিযোগ উঠেছে ভোটের আগের দিন। যদিও অভিযোগ অস্বীকার করেছে রাজ্যের শাসক দল। কোচবিহারের ১৯৬টি বুথই স্পর্শকাতর বলে চিহ্নিত করেছে জাতীয় নির্বাচন কমিশন। এই বুথগুলিতে কড়া নজরদারি রাখা হচ্ছে বলেও জানিয়েছে তারা।
নির্বাচন কমিশন সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রথম দফার নির্বাচনে বাংলায় মোট ভোটারের সংখ্যা ৫৬ লক্ষ ২৬ হাজার ১০৮ জন। এর মধ্যে ১ লক্ষ ১৫ হাজার ২৪৪ জন ভোটারের বয়স ১৮ থেকে ১৯ বছর। নির্বাচন কমিশন ভোটগ্রহণ পর্বে নজরদারির জন্য সমস্ত বুথেই ওয়েব কাস্টিংয়ের ব্যবস্থা করেছে। ফলে দিল্লি-কলকাতা সর্বত্রই কমিশন ঘরে বসে কোন বুথে কেমন ভোট হচ্ছে, তার উপর নজর রাখতে পারবে। সেক্ষেত্রে কোথাও কোনও অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটলে দ্রুত হস্তক্ষেপ করতে পারবে কমিশন। তিন কেন্দ্রে ২৬৩ কোম্পানি কেন্দ্রীয় বাহিনী এবং ১০ হাজার ১৫০ জন রাজ্য পুলিশ নিয়োগ করা হয়েছে।