গণদেবতাকে দেখভালের দায়িত্ব নেতাদের: মত বিতর্কসভায়
এই সময় | ১৯ এপ্রিল ২০২৪
এই সময়: ভোট আসে ভোট যায়, শাসক বদলায়। তবে দিন বদলায় কি? মূলত এই প্রশ্নকে সামনে রেখেই 'এই সময়' ভোট ফিউশন ডিবেটের প্রথম বিতর্কসভার বিষয় ভাবনা ছিল, 'ভোট মানেই ভাঁওতা, চাকরি, খাদ্য, বাসস্থান অধরা!'সভার এই মতের পক্ষে এবং বিপক্ষে যাঁরা বললেন, তাঁরা কেউ রাজনীতিক নন, তারকাও নন। শহরের কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের একঝাঁক পড়ুয়ার কথায় উঠে এলো নানা মতামত। তার মূল নির্যাস, 'ভোট গণতন্ত্রের উৎসব হলে, গণদেবতার দেখভাল করাই নেতাদের কাজ, দায়িত্বও বটে।'
বিষয় ভাবনার পক্ষে বলতে গিয়ে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী রেশমিতারা খাতুন তুলে আনেন ভোটের ইতিহাস। রেশমিতারার কথায়, '১৯৫২ সাল থেকে ভারতের মানুষ লাইন দিয়ে ভোট দিচ্ছেন। একাধিক দল সরকার গড়েছে। ভোট এলেই সব রাজনৈতিক দল মানুষকে কাজের নানা প্রতিশ্রুতি দেন।' এরপই তাঁর প্রশ্ন, 'তারপরও এত মানুষের হাতে কাজ নেই কেন বলুন তো? ক্ষুধা সূচকে ভারত কেন শুধুই নামছে। কেন রাস্তায় এত মানুষের বাস? ভোট দিয়ে হচ্ছেটা কী?'
তবে ভোট না দিলে যে যে সরকারি সুবিধেগুলো পাওয়া যায় সেগুলোর কী হবে? আজও বহু মানুষ রেশন, ওষুধ, সামাজিক প্রকল্পের সুবিধে দিচ্ছে তো সরকারই- এই প্রশ্ন উসকে দিয়ে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র আদিত্য মণ্ডলের প্রশ্ন, 'দেশের ১৪০ কোটি মানুষের প্রতিনিধি তা হলে কী ভাবে ঠিক হবে? ভোট না হলে মানুষ সরকারি পরিষেবা কী ভাবে পাবেন? তাহলে কি আমরা একটা কোনও ফ্যাসিস্ট দেশের কথা কল্পনা করছি?'
রেশমিতারা এবং আদিত্য যে প্রশ্নগুলো তুলেছেন, তার সারবত্তা অবশ্যই আছে। তবে দেশের ভোটের প্রক্রিয়া নিয়েও যে নানা প্রশ্ন রয়েছে, সে কথা উঠে এসেছে প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী আনন্দরূপা ধরের কথায়। সভার মতের পক্ষে তাঁর বক্তব্য, 'ভোট এলেই রাজনৈতিক দলের নেতারা মানুষের ভালো করার জন্যে উঠেপড়ে লাগেন। তাঁরা মিথ্যে প্রতিশ্রুতি দেন, সেটাই আসলে ভাঁওতা।
কেন্দ্রের শাসকদল হোক অথবা রাজ্যের শাসকদল, যাঁরা ইলেক্টোরাল বন্ডের নামে হাজার হাজার কোটি টাকা কর্পোরেটগুলির থেকে নেন, সেই শাসকদলগুলি ভোটে জেতার পর কার জন্য কাজ করবে? যারা তাদের ভোট জিততে পয়সা দেয় তাদের জন্য, নাকি মানুষের জন্য?' এই প্রসঙ্গেই তিনি তুলে আনেন ওষুধের দাম বৃদ্ধি-সহ একাধিক প্রসঙ্গ।
প্রেসিডেন্সির আর এক পড়ুয়া মহম্মদ আদিল আখতারের কথায় উঠে এসেছে মানুষকে ভোটব্যাঙ্ক হিসেবে ধরার প্রবণতা। আদিলের কথায়, 'বছর বছর ধরে আমাদের একদল নেতা কেবল ভোটব্যাঙ্ক হিসেবেই ধরে এসেছেন। আমরাও ভোট দিয়েছি লাইন দিয়ে। তবে ভোটের পর, সেই নেতারাই চাকরি, খাদ্য, বাসস্থানের কথা বেমালুম ভুলে গিয়েছেন। কাজের দাবিতে, খাদ্যের দাবিতে, স্বাস্থ্যের দাবিতে মানুষের নিত্য সংগ্রাম মানুষকেই লড়ে নিতে হচ্ছে।'
তবে কি সব ভাঁওতার দায় রাজনৈতিক দলের নেতাদেরই? নাকি মানুষেরও কোনও দায় আছে? কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র মহম্মদ জিসানের কথায় উঠে এসেছে সেই প্রসঙ্গই। জিসানের বক্তব্য, 'পৃথিবীর বৃহত্তম গণতন্ত্র বলে এই যে আমরা এত বড়াই করি, আচ্ছা কেন বলুন তো এখনও পর্যন্ত ৬৭.১১ শতাংশের বেশি মানুষ ভোট দিতে যান না? যাঁরা ভোটকে ভাঁওতা ভাবেন, তাঁরা কি তাঁদের নাগরিক কর্তব্যপালন করছেন? নিশ্চই সব রাজনৈতিক দলেই কিছু পচা চাল আছে। কিন্তু মানুষের হাতেও তো ক্ষমতা আছে সেই পচা চাল বেছে ফেলে দেওয়ার। সেই দায়িত্ব কেন পালন হচ্ছে না?' ফলে নেতারা কেবল নিজেরাই জিতবেন আর আখের গোছাবেন, এমন দিন পাল্টাতেই সজাগ ভূমিকা নিতে চান আনন্দরূপা, জিসান, আদিত্যদের মতো নবীনরা।