২৩৯ বার ঘায়েল হয়েও থামেননি পদ্মরাজন, লড়তে চান মমতার বিরুদ্ধে
এই সময় | ১৯ এপ্রিল ২০২৪
তাপস প্রামাণিক
সবাই ভোটে লড়েন জেতার জন্যে। কিন্তু তিনি অন্য রকম। ভোটে দাঁড়ানোটা তাঁর নেশা। এ পর্যন্ত ২৩৯ বার ভোটে লড়েছেন। প্রত্যেক বারই হেরেছেন। লিমকা বুক অফ রেকর্ডসেও নাম উঠছে এত বার হারের কারণে। প্রার্থী অবশ্য এত হারেও গর্বই অনুভব করেন।তামিলনাড়ুর সালেম জেলার কে পদ্মরাজনের ভোটে দাঁড়ানো রূপকথার গল্পের মতো। সাইকেল মেরামতের দোকানের মালিক পদ্মরাজন প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী পিভি নরসিমহা রাও, বর্তমান প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী, কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী, তামিলনাড়ুর প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী জয়ললিতা-সহ দেশের বহু নামকরা রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বের বিরুদ্ধে ভোটে লড়েছেন। এ বারও তামিলনাড়ুর ধর্মপুরী লোকসভা কেন্দ্রে নির্দল প্রার্থী তিনি। এ যাবৎ ১২টি রাজ্য থেকে ভোটে লড়েছেন। সেটাও রেকর্ড। ২০২৬-এর বিধানসভা ভোটে লড়তে চান বাংলায় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধেও।
কিন্তু এত কিছু থাকতে হঠাৎ ভোটে দাঁড়ানোর নেশা কেন?
টেলিফোনে ‘এই সময়’কে পদ্মরাজন জানিয়েছেন, ১৯৮৮ সালে নিজের সাইকেল দোকানে বসে আইডিয়াটা প্রথম মাথায় এসেছিল। লোকসভা, বিধানসভা, সমস্ত স্তরের নির্বাচনে তিনি প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন। কোনওটাতেই জিততে পারেননি।
হারবেন জেনেও প্রত্যেক বার গ্যাঁটের কড়ি খরচ করে ভোটে লড়েন কেন? পদ্মরাজনের জবাব, ‘সবাই তো জেতার জন্যে লড়েন। আমার লক্ষ্য হারের রেকর্ড গড়া। আমি শুধু মানুষকে একটাই বার্তা দিতে চাই, ভোটে যে কেউ লড়তে পারেন। যাঁদের টাকা আর পেশীবল আছে, শুধু তাঁরাই ভোট লড়বেন, তা নয়।’
তামিল নিম্নমধ্যবিত্ত পরিবারে বেড়ে ওঠা পদ্মরাজন বেশি দূর পড়াশোনা করেননি। কোনও মতে স্কুলের গণ্ডি টপকে ঢুকে পড়েন সাইকেল মেকানিকের পেশায়। পরবর্তীতে ডিস্টেন্স এডুকেশনে ইতিহাসে স্নাতক হন। তবে নিজের পেশা ছাড়েননি।
প্রতিবার ভোটে হারতে খারাপ লাগে না?
নির্বিকার পদ্মরাজনের জবাব, ‘অনেকে আমাকে নিয়ে তামাশা করে। কেউ বলে, মাথায় গোলমাল আছে। বন্ধুরাও মজা করে। আমি ও-সব গায়ে মাখি না। আমি মনে করি, এটা আমার গণতান্ত্রিক অধিকার।’
৬৫ বছরের পদ্মরাজন বলেন, ‘যে দিন প্রথম ভোটে দাঁড়ানোর সিদ্ধান্ত নিই, শুনে আমার পরিবারের লোকেরাও অবাক হয়েছিলেন। আমার মতো একজন সাধারণ সাইকেল দোকানি ভোটে দাঁড়াবে, এটা তাঁরা ভাবতে পারেননি। এখন সবাই বুঝে গিয়েছেন। কেউ কিছু বলেন না।’
বড় বড় নেতাদের বিরুদ্ধে ভোটে দাঁড়াতে গিয়ে অনেক বার বিপদেও পড়েছেন। তাতেও তাঁকে টলানো যায়নি। পদ্মরাজন জানিয়েছেন, ১৯৯১ সালে লোকসভার উপনির্বাচনে অন্ধ্রপ্রদেশের নান্দিয়াল থেকে পিভি নরসিমহা রাওয়ের বিরুদ্ধে প্রার্থী হয়েছিলেন। সে বার মনোনয়ন জমা দেওয়ার পরেই কিছু লোক তাঁকে অপহরণ করে। কোনও রকমে পালিয়ে বাঁচেন।
২০০৪ সালে উত্তরপ্রদেশের লখনউ কেন্দ্র থেকে অটলবিহারী বাজপেয়ীর বিরুদ্ধে ভোটে লড়েছিলেন। ২০১৪-য় গুজরাটের ভদোদরায় নরেন্দ্র মোদীর বিরুদ্ধেও প্রার্থী হন। ২০১৯ সালে কেরালার ওয়ানাড়ে রাহুল গান্ধীর বিরুদ্ধে লড়ে ১৮৮৭টি ভোট পেয়েছিলেন। এ ছাড়াও জয়ললিতা, এম কে স্ট্যালিন, সিদ্দারামাইয়া, বাসবরাজ বোম্মাই, কুমারস্বামী, ইয়েদুরাপ্পা, পিনারাই বিজয়ন, কে চন্দ্রশেখর রাওয়ের মতো প্রথম সারির নেতাদের বিরুদ্ধেও নানা সময়ে ভোটে লড়েছেন। এত বার ভোটে লড়লেও কোনও দিনই অবশ্য তিনি প্রচারে যাননি।
পদ্মরাজনের ছেলে শ্রীজেশ বাবাকে নিয়ে উচ্ছ্বসিত। তিনি বলেন, ‘বাবা যে নির্দল প্রার্থী হিসাবে ভোটে লড়াই করেন, এর জন্যে আমরা গর্বিত। প্রত্যেকটা ভোটে হয়তো তিনি পরাজিত হন, কিন্তু আমি মনে করি, সেই পরাজয়ের মধ্যেই সাফল্যের বীজ লুকিয়ে আছে।’