পৃথিবীর বৃহত্তম গণতান্ত্রিক দেশ হিসেবে ভারতকে সবাই চেনে। ভারতের সাধারণ নির্বাচনে কোন দল ক্ষমতায় আসবে, সে দিকেই তাকিয়ে গোটা বিশ্ব। কারণ ভারত এখন বিশ্ব অর্থনীতির অন্যতম চালিকাশক্তি। ভারতের ভোট নিয়ে এ দেশে এখন প্রচুর চর্চা হচ্ছে। কাগজে বড় বড় আর্টিকল প্রকাশিত হচ্ছে। আমিও রোজ ভোটের খবর রাখছি।কোন দলের হয়ে কারা ভোটে লড়ছেন, প্রচারে কে, কী বলছেন, টিভি চ্যানেলের ওপিনিয়ন পোলে কারা এগিয়ে, কোনও খবরই আমার অজানা নয়। আমি এখন নেদারল্যান্ডসের দ্য হেগ শহরের বাসিন্দা হলেও কলেজ জীবন পর্যন্ত কেটেছে হুগলির চুঁচুড়ায়। ফলে বাংলায় ভোট কেমন হয়, তা আমার অজানা নয়। নেদারল্যান্ডসের ভোট ব্যবস্থা সম্পর্কেও আমার একটা ধারণা তৈরি হয়েছে।
ভারতের মতো নেদারল্যান্ডসেও মানুষের ভোটে সরকার তৈরি হয়। তবে দুই দেশের ভোটের ছবিটা পুরোপুরি আলাদা। ভারতে থাকার সময়ে বেশ কয়েকবার লোকসভা এবং বিধানসভায় ভোট দিয়েছি। ভোটের সময়ে দেখেছি, বুথের সামনে লম্বা লাইন। কড়া সিকিউরিটি। বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মীদের ক্যাম্পে বসে থাকা—এই ছবি আমার আছে খুবই কমন।
ভোট দিতে গিয়ে আমি সে ভাবে সমস্যায় পড়িনি ঠিকই, তবে মিডিয়ায় ভোটের সময়ের হিংসা ও অশান্তির ছবি দেখেছি। নেদারল্যান্ডসের ভোটে এ রকম কোনও দৃশ্য কোনও দিনই চোখে পড়েনি। কারণ এখানে ভোট হচ্ছে, অনেকেই সেটা টেরও পান না।
নেদারল্যান্ডসে ভোটের প্রচারে দেশের অর্থনীতি এবং ফরেন পলিসি নিয়ে আলোচনা হয়। স্বাস্থ্য, শিক্ষা, ইমিগ্রেশন, ক্লাইমেট চেঞ্জ নিয়ে ডিবেট হয়। ভোট প্রচারে যে যেমন খুশি খরচ করতে পারে না। সব কিছুর ঊর্ধ্বসীমা আছে। সব দলকে জানাতে হয়, তারা কোথা থেকে টাকা পেয়েছে।
ভারত তথা বাংলায় ভোটের সময়ে রাস্তাঘাটে বড় বড় হোর্ডিং, ব্যানার, ফ্লেক্স টাঙানো হয়। জনসভায় প্রচুর লোককে জড়ো করা হয়। মাইকে ভাষণ দেন নেতারা। নেদারল্যান্ডসে সে রকম কিছুই দেখা যায় না। হোর্ডিং, ব্যানার প্রায় নেই। মাইক বাজানোর তো প্রশ্নই নেই। তবে টেলিভিশন চ্যানেলে যে ডিবেটগুলো হয়, তা প্রচুর সংখ্যক মানুষ দেখেন।
নেদারল্যান্ডসে পুরো ভোট প্রক্রিয়াটাই হয় অটোম্যাটিক ওয়েতে। ভোটকর্মীদের সে ভাবে দরকার হয় না। ভোটের ১৪-১৫ দিন আগে যাঁদের ভোটাধিকার রয়েছে, তাঁদের কাছে ভোটার রেজিস্ট্রেশন কার্ড ডাকে পৌঁছে যায়। কোন দলের কারা ভোটে লড়ছেন, সেই তালিকাটাও পাঠিয়ে দেওয়া হয়। সকাল ৭.৩০ থেকে ভোট শুরু হয়। চলে রাত ৯টা পর্যন্ত। এক দিনেই ভোট হয়।
ভোটের দিন কোনও ছুটি থাকে না। স্কুলও খোলা থাকে। এখানকার মানুষ এতটাই সচেতন যে, ৮০-৯০ বছয় বয়সি প্রবীণকেও আমি লাইনে দাঁড়িয়ে ভোট দিতে দেখেছি। ভোটারদের আটকানো কিংবা ভয় দেখানোর কোনও অভিযোগ ওঠে না। কেউ ভোটারদের প্রভাবিত করার চেষ্টাও করে না।
ভারতে ভোটের ফল ঘোষণার পর বড় বড় বিজয় মিছিল বেরোয়। আবির মেখে আনন্দ করেন বিজয়ী দলের সমর্থকরা। নেদারল্যান্ডসে এ রকম কিছুই দেখা যায় না। ভোটের ফল রাজনৈতিক দলগুলো প্রেস কনফারেন্স করে জানিয়ে দেয়।