কাঁকড়ার ডালে বাজিমাত, দেশের সেরা পুষ্টিকর খাবারের দৌড়ে সুন্দরবনের বধূর এই পদ
এই সময় | ১৯ এপ্রিল ২০২৪
সুন্দরবনের প্রত্যন্ত গ্রাম্যবধূর হাতের রান্না ‘কাঁকড়া-ডাল'। দেশজুড়ে সেরা পুষ্টিকর খাবারের রেসে সেই খাবারই এবার জায়গা করে নিল। দেশব্যাপী পুষ্টিকর খাবারের প্রতিযোগিতা চালু করেছে সর্বভারতীয় সংস্থা। আর সেখানেই মৈপিঠ কোস্টাল থানার পূর্ব গুড়গুড়িয়ার বাসিন্দা গঙ্গারানি হালদারের তৈরি আদ্যোপ্রান্তে বাঙালি রান্না কাঁকড়া ডালের রেসিপি পাঠায় একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন।এই প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়েছিল গোটা দেশের ৮০০ রেসিপি। আর সেখানেই জায়গা করে নিয়েছে গঙ্গারানির সেই রান্না। আগামী সপ্তাহে মুম্বইয়ে পাড়ি দিতে চলেছেন গঙ্গারানি। ২৭ এপ্রিল তিনি হাজির হবেন বিচারকদের সামনে। নিজের হাতে রান্না করতে চলেছেন কাঁকড়া ডাল।
শ্বশুর, শাশুড়ি, স্বামী, দুই সন্তানকে নিয়ে সংসার করছেন গঙ্গারানি। তাঁর স্বামী কৃষক। ৪৫ বছরের গঙ্গারানি গৃহবধূ। তবে রান্না করতে ভালোবাসেন তিনি। নিত্যদিন তাঁর অধিকাংশ সময় কাটে রান্নাঘরে। নিজের ভাবনা থেকে তিনি প্রায়ই তৈরি করেন বিভিন্ন রান্না।
সুন্দরবন ঘেঁষা এলাকাতে কাঁকড়া অত্যন্ত সহজলভ্য। আর বাড়িতে প্রায়ই এই রান্না হত। একদিন তিনি কাঁকড়ার সঙ্গে ডাল মিশিয়ে তৈরি করেন কাঁকড়া ডাল। পরিবারের লোকজনের পাশাপাশি তিনি বাড়িতে যে সমস্ত অতিথি আসতেন তাঁদের এই পদ রেঁধে খাওয়াতেন। এই ভাবেই তাঁর বাড়িতে আসা এক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের কয়েক জন সদস্য কাঁকড়ার ডাল খান। আর তাঁরা একদিকে যেমন গঙ্গারানির এই ডালের স্বাদে মজেন তেমনই তাঁর হাতের গুণ চিনতে পারেন এবং এই রেসিপি সটান পাঠিয়ে দেওয়া হয় প্রতিযোগিতার জন্য।
জয়নগরের ওই স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের তরফে অমিতাভ রায় বলেন, 'সুন্দরবন ঘেঁষা এলাকায় কৃষক-মৎস্যজীবীদের নিয়ে দীর্ঘ দিন ধরেই কাজ করছে আমাদের সংগঠন। সেই সূত্রেই ওই পরিবারের সঙ্গে আমাদের আলাপ। কাজের ফাঁকেই এক দিন গঙ্গারানির বাড়িতে খেতে গিয়ে কাঁকড়ার ডালের সঙ্গে প্রথম পরিচিতি। স্বাদও অত্যন্ত দুর্দান্ত। এরপরেই ঠিক করি কাঁকড়া ডালের রেসিপিটিকে প্রতিযোগিতায় পাঠাব। গোটা দেশের সেরা পাঁচ রেসিপিতে জায়গা করে নিয়েছে এই কাঁকড়া ডাল।'
সুন্দরবনে তৈরি এই খাবার গোটা দেশের মধ্যে সেরা হবে বলে আশাবাদী তিনি। এদিকে যাঁকে নিয়ে তোলপাড় পড়ে গিয়েছে সেই গঙ্গারানি কী বলছেন? তিনি বলেন, 'দুই ধরনের ডাল এবং কাঁকড়া দিয়ে এই পদ তৈরি হয়। তবে খুব বেশি মশলা লাগে না। হালকা খাবার দিয়েই তা তৈরি।' বাড়িতে কোনও অতিথি এলে এই খাবার বানিয়ে দিতেন তিনি। তবে বম্বে গিয়ে এই খাবার তৈরি করতে হবে তা স্বপ্নেও ভাবতে পারেননি তিনি। স্বাভাবিকভাবেই খুশি গঙ্গারানি। এদিকে স্ত্রীর মুকুটে এই নয়া পালকে খুশি স্বামী অশোক হালদার। তাঁর কথায়, সামান্য রান্না এত বড় মঞ্চে স্বীকৃতি পাবে তা কোনওদিন ভাবতেও পারিনি। সংগঠনটিকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি।