আজকাল সাইবার ক্রাইমের নিত্য নতুন টেকনিকে বিভ্রান্ত হয়ে পড়ছেন সাধারণ মানুষ। রোজ কোথাও না কোথাও, কেউ না কেউ শিকার হচ্ছেন এই সাইবার প্রতারকদের। এমনকী সোশ্যাল মিডিয়াতেও ফাঁদ পেতে বসেছে অপরাধীরা। অনেকেই না জেনে পা দিচ্ছেন তাদের জালে।
সম্প্রতি এমন বেশ কয়েকটি প্রতারণার ঘটনা সামনে এসেছে, যেখানে দেখা যাচ্ছে অপরাধীরা কোনও না কোনও ভাবে নানা অছিলায় অ্যাপ ডাউনলোড করিয়ে দিচ্ছে মোবাইলে। দেশের বিভিন্ন শহরের মতো কলকাতাতেও কিছুদিন আগে এরকম অ্যাপ ডাউনলোড করার ঘটনা ঘটেছে। কোনও ওটিপি কিংবা অন্যান্য ইনফরমেশন জানতে না চেয়ে বেশ কিছু অ্যাপ গ্রাহকের মোবাইলে ইনস্টল করতে বলা হয়েছে যেটাকে বলা হচ্ছে মিরর অ্যাপ্লিকেশন।
অর্থাৎ সেই অ্যাপটি প্রকারান্তরে আপনার মোবাইলের আয়না হিসেবে কাজ করে। এই অ্যাপটি মূলত সমস্যা সমাধানের জন্য তৈরি করা হলেও এখন তা বহু মানুষের সমস্যার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিশেষ করে প্রবীণ নাগরিকদের ঠকানোর জন্য এই প্রযুক্তি বেশি করে ব্যবহার করা হচ্ছে। একবার এই অ্যাপ নিজের মোবাইলে ব্যবহার শুরু করলে অন্যপ্রান্তে থাকা প্রতারক সহজেই আপনার মোবাইলের পুরোপুরি কন্ট্রোল নিয়ে নিতে পারবে।এরপর বিদ্যুতের বিল মেটানো, ক্রেডিট কার্ডের লিমিট বাড়ানো কিংবা লোন দেওয়ার নামে প্রাথমিক ভাবে বিশ্বাস অর্জন করবে গ্রাহকের। কাউকে এই জালে একবার জড়িয়ে নিতে পারলে শুরু হবে আসল খেল। টাকা আদায়ের পরিমাণ বাড়তে থাকবে দিনকে দিন। সাইবার ক্রাইম বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, এই মিরর অ্যাপ হিসেবে মূলত তিনটি অ্যাপ কাজ করে।
যেমন, এনি ডেস্ক, টিম ভিউয়ার এবং মিঙ্গল ডেস্ক। এই সব অ্যাপ্লিকেশন একবার কারও মোবাইলে ইনস্টল করা হলে প্রযুক্তির সহায়তায় সেই মোবাইল বা কম্পিউটার প্রতারকদের কব্জায় চলে যায়। ফলে ওই ফোন থেকে আপনার সব অ্যাক্টিভিটিজ জেনে নিতে পারবে অন্যপ্রান্তে থাকা প্রতারক। এমনকী, ব্যাঙ্ক ট্র্যানজ়াকশনের সময়ে মোবাইলে আসা ওটিপি আপনি না জানালেও সহজে জেনে যাবে প্রতারকরা।
এক্ষেত্রে ভুল করেও যদি অ্যাপ ডাউনলোড করে ফেলেন তবে একটা জিনিস নজরে রাখা খুব প্রয়োজন। তা হলো, যে কোনও অ্যাপ ইনস্টল করলে সে জন্য বেশ কিছু পারমিশনের ক্ষেত্রে আপনাকে ‘ওকে’ বোতামটি প্রেস করতে হয়। আর সঙ্গে সঙ্গেই ওই অ্যাপ অত্যন্ত গোপনে মোবাইল থেকে বিভিন্ন ধরনের ইনফরমেশন চুরি করে নেওয়া শুরু করে।
এই পরিস্থিতি সামাল দেওয়া যায় মাত্র একটি পদ্ধতিতে। কোনও মতে অ্যাপ ইনস্টল করার সময়ে পারমিশন দেওয়া চলবে না। যদি ভুল করেও তা দেওয়া হয়ে থাকে তাহলে আর কিছু করার থাকে না গ্রাহকের। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, কলকাতা-সহ রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে সম্প্রতি বেশ কয়েকজন নাগরিককে নানা ধরনের সুবিধা পাইয়ে দেওয়ার নাম করে এ ভাবে নানা অ্যাপ ডাউনলোড করিয়ে নেওয়া হয়েছে।
পরে যখন তাঁরা বুঝতে পেরেছেন, ততদিনে টাকা গায়েব হয়ে গিয়েছে অ্যাকাউন্ট থেকে। এ রকম বেশ কয়েকটি অ্যাপ প্লে স্টোরেও রয়েছে বলে তথ্য প্রযুক্তির সঙ্গে যুক্ত বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন। ফলে সেখান থেকেও অ্যাপ ইনস্টল করতে হলে রিভিউ দেখে নেওয়া প্রয়োজন।