এই সময়, নয়াদিল্লি: লোকসভা নির্বাচনের প্রথম দফার ভোটগ্রহণ পর্ব শেষ হয়েছে শুক্রবার৷ বাকি ছ’দফার ভোটে নিজেদের সেরাটা তুলে ধরার জন্য এবার তৈরি হচ্ছে শাসক-বিরোধী সব দল৷ এই আবহে বিজেপি, কংগ্রেস-সহ দেশের প্রভাবশালী রাজনৈতিক দলগুলির নেতানেত্রীদের আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে দাঁড়িয়েছে উত্তরপ্রদেশের আমেঠি লোকসভা কেন্দ্র৷গান্ধী পরিবারের স্মৃতি বিজড়িত এই কেন্দ্রে গতবারের বিজয়ী বিজেপি প্রার্থী তথা কেন্দ্রীয় মন্ত্রী স্মৃতি ইরানির এবারের চ্যালেঞ্জার কে হবেন, তা নিয়ে কৌতূহলের অবসান হয়নি এখনও৷ কংগ্রেস এখনও জানায়নি আমেঠিতে তাদের দলের প্রার্থী কে হবেন৷ শতাব্দী প্রাচীন দলের এই সিদ্ধান্তহীনতাকে হাতিয়ার করে সরাসরি রাহুল গান্ধীকেই নিশানা করেছেন বিজেপির শীর্ষ নেতৃত্ব৷
শুক্রবার কেরলের ওয়ানাড় কেন্দ্রে নির্বাচনী প্রচারে গিয়ে বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি জেপি নাড্ডার প্রশ্ন, ‘কংগ্রেসের নেতা রাহুল গান্ধী তাঁদের পরিবারের স্মৃতিধন্য আমেঠি কেন্দ্র ছেড়ে কেন এই ওয়ানাড় কেন্দ্রে এসে ভোট লড়ছেন? তাহলে কি আমরা ধরে নেব যে, উনি নিজের পুরোনো নির্বাচনী কেন্দ্র আমেঠিতে জেতার ক্ষেত্রে একেবারেই আশাবাদী নন?
তাই নিরুপায় হয়েই দিল্লি থেকে দূরে কেরালার ওয়ানাড় কেন্দ্রে এসে ভোটে লড়াই করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন পরিবারবাদের সমর্থক, তুষ্টিকরণের রাজনীতি করা কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী৷ এই ধরনের নেতাকে ওয়ানাড়ের জনতা প্রত্যাখ্যান করবেন, আমি নিশ্চিত৷’
তাত্পর্যপূর্ণ হলো, আমেঠিতে স্মৃতি ইরানির বিরুদ্ধে তিনি লড়াই করবেন কি না, তা স্থির করার ভার দলের হাইকম্যান্ডের উপরেই ছেড়ে দিয়েছেন রাহুল গান্ধী নিজে৷
গতবার এই আমেঠিতেই স্মৃতি ইরানির কাছে ৫৫,০০০-এর বেশি ভোটের ব্যবধানে পরাজিত হয়েছিলেন রাহুল৷ তাঁর মান রক্ষা করেছিল কেরালার ওয়ানাড়৷ এবারও রাহুল ওয়ানাড়ে প্রার্থী হয়েছেন৷ সেখানে আবার তাঁর প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বীদের মধ্যে রয়েছেন ‘ইন্ডিয়া’ জোটের শরিক সিপিআইয়ের শীর্ষ নেতা ডি রাজার স্ত্রী অ্যানি রাজা। এনিয়ে বাম-কংগ্রেসের মধ্যে আকচাআকচি চলছে যথেষ্টই।
কিন্তু ওয়ানাড়ের পাশাপাশি রাহুল এবারও আমেঠিতে প্রার্থী হবেন কি না, সেই সিদ্ধান্ত এখনও ঝুলে রয়েছে। কংগ্রেস হাইকম্যান্ড এনিয়ে কবে সিদ্ধান্ত নেবে, তাও এখনও পরিষ্কার নয়। আবার রাহুল যে হাইকম্যান্ডের কথা বলেছেন, তার সদস্য তিনি নিজেও৷ এই মর্মেই ফের রাহুল গান্ধীকে নিশানা করছে গেরুয়া শিবির৷
আসলে রাহুল গান্ধী আমেঠিতে বিজেপির হেভিওয়েট প্রার্থী, কেন্দ্রীয় মন্ত্রী স্মৃতি ইরানির বিরুদ্ধে লড়াই করতে ভয় পাচ্ছেন, এই অভিযোগ করে শুক্রবার বিজেপির এক প্রথম সারির নেতার কটাক্ষ, ‘কংগ্রেসের কাছে বিষয়টি কার্তিক কলিং কার্তিকের মতো৷ রাহুল লড়াই করবেন কি না, সেই সিদ্ধান্ত নেবে কংগ্রেসের হাইকম্যান্ড৷ সেখানে কে আছেন? সনিয়া গান্ধী, কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়গে, সাধারণ সম্পাদক (সংগঠন) কেসি বেণুগোপাল এবং প্রাক্তন কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গান্ধী নিজে৷ তাহলে প্রশ্নটা কি দাঁড়াল, যুদ্ধে নামার আগে সেনাপতিই জানেন না তাঁর দল কোন পথে চলবে?’
প্রিয়াঙ্কা গান্ধীর স্বামী রবার্ট ভাদরা একাধিকবার জানিয়েছেন, আমেঠির মানুষ এবং দলীয় নেতৃত্ব চাইলে তিনি আমেঠিতে প্রার্থী হতে রাজি আছেন। কিন্তু তাঁর বক্তব্যেও এখনও সিলমোহর দেননি কংগ্রেস নেতৃত্ব। যদিও এক বর্ষীয়ান কংগ্রেস নেতার বক্তব্য, ‘ওদের (বিজেপি) এত ভয় পাওয়ার কী আছে? প্রার্থী দিলে তো দেখতেই পাবে সবাই। তার আগে রাহুল দাঁড়াবেন কি না, এতেই এত ভয় পাচ্ছে কেন বিজেপি?’