এই সময়: মারাত্মক গরমে হিট স্ট্রোকের শিকার হয়ে কেউ অসুস্থ হয়ে পড়লে আগে তাঁর শরীর ঠান্ডা করুন। হাসপাতালে তার পরে নিয়ে যাবেন। মধ্য, দক্ষিণ ও পূর্ব ভারতের বিস্তীর্ণ এলাকা যখন তাপপ্রবাহের কবলে, তখন এই মর্মে নির্দেশিকা জারি করলো কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রক। হিট স্ট্রোকের উপসর্গ ও ইমার্জেন্সি ম্যানেজমেন্ট নিয়ে গুচ্ছ পরামর্শ দেওয়া হলো তাতে। বলা হয়েছে, অসুস্থকে ছায়ায় নিয়ে গিয়ে ঠান্ডা জল বা বরফ ব্যবহার করে তাঁর শরীরের তাপমাত্রা কমাতে হবে যত দ্রুত সম্ভব। কেননা, শরীরের তাপমাত্রা ১০৪ ডিগ্রি ফারেনহাইট বা তার বেশি হয়ে গেলে আশপাশে থাকা লোকজনের প্রাথমিক কর্তব্য হলো অসুস্থের শরীরের 'কুলিং' নিশ্চিত করা। কেননা, অন্যথায় চিকিৎসার সুযোগও মিলবে না।স্বাস্থ্য মন্ত্রকের তৈরি বিশেষজ্ঞ কমিটির তৈরি ওই নির্দেশিকায় জানানো হয়েছে, হিট স্ট্রোকের ছোবলে দেখা গিয়েছে, এই কুলিংয়ের অভাবে বিভিন্ন বয়সে ৪০-৬৪ শতাংশ ক্ষেত্রে মৃত্যু এড়ানো সম্ভব হয় না। তাই মনে করিয়ে দেওয়া হয়েছে, অসুস্থকে দ্রুত বাতানুকুল ঘরে নিয়ে গেলে যতটা লাভ হয়, তার চেয়েও বেশি লাভ হয় স্নান করলে কিংবা ঘাড়ে, কানে, বগলে আইস প্যাক দিলে। বিশেষজ্ঞ কমিটির তৈরি গাইডলাইন বলছে, শরীরের তাপমাত্রা ৯৭.৭-৯৯.৫ ডিগ্রি ফারেনহাইট রেঞ্জে স্বাভাবিক থাকে। তাপমাত্রা ১০০ ডিগ্রি পেরোলেই শুরু হয় শারীরিক-মানসিক পরিবর্তন। একদিকে যেমন শরীরের বিপাক প্রক্রিয়া বিঘ্নিত হয়, অন্যদিকে তেমনই মস্তিষ্কের সেরিবেলাম অংশে গোলযোগ দেখা দেয় বলে মানসিক বিভ্রান্তি এবং সিদ্ধান্তহীনতা ভর করে। সঙ্গে অসম্ভব দুর্বল লাগে, মাথা ঘোরে, ভারসাম্য হারিয়ে যায়।
ক্রিটিক্যাল কেয়ার বিশেষজ্ঞ তন্ময় বন্দ্যোপাধ্যায় জানাচ্ছেন, হিট স্ট্রোকের উপসর্গ দেখা দেওয়ার পরে সময় নষ্ট হলে বিপদ। আধঘণ্টার মধ্যে কুলিং প্রক্রিয়া চালু করতে হয়। অন্যথায় প্রাণসংশয় একপ্রকার অনিবার্য। চিকিৎসকরা জানাচ্ছেন, ঘাম হলে লীন তাপ হারিয়ে ত্বক ও শরীর ঠান্ডা হয়। কিন্তু শুকনো গরমে শরীরের তাপমাত্রা স্বাভাবিক রাখার যে প্রক্রিয়া, সেই ঘাম হওয়াটাই বন্ধ হয়ে যায়। এতে শরীরে মজুত জলের ভাঁড়ারে যেমন টান পড়ে, তেমনই শরীরে লবণের ভারসাম্য বিঘ্নিত হয়। শরীরে তখন তৈরি হতে শুরু হয় অক্সিডেটিভ স্ট্রেস এবং হিট-শক প্রোটিন। সেটাই বারোটা বাজিয়ে দেয়।
তাই দ্রুত শরীরকে ঠান্ডা করা প্রয়োজন। তবে প্যারাসিটামল, অ্যাসপিরিন ইত্যাদির মতো ওষুধ প্রয়োগ করে শরীরের তাপমাত্রা এ ক্ষেত্রে কমানো যায় না। উল্টে কমাতে গেলে হিতে বিপরীত হতে পারে। বরং মুখ, ঘাড়, বগল, কুঁচকি ভিজিয়ে অথবা বরফ দিয়ে ঠান্ডা করার পাশাপাশি হাওয়া করতে হয় রোগীকে। এতে শরীরে ধীরে ধীরে ঘাম বেরোনোর প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত হয় এবং শরীর ঠান্ডা হতে শুরু করে। অন্যথায় প্রথমে স্নায়বিক সমস্যা দেখা দেয়, তার পর একসময়ে হৃদযন্ত্র কাজ করা বন্ধ করে দেয়।