এই সময়: ছিল কুমির, হয়ে গেল দৈত্যাকৃতি একটা সাপ! সেই সাপ এখন আর জ্যান্ত নয় বটে, তবে ছিল সাংঘাতিক। পৃথিবীর বুক খুঁড়ে প্রাণিজগতের যে ইতিবৃত্ত পাওয়া যায়, তার ভিত্তিতে গবেষকরা এই সাপকে সর্বকালের অন্যতম 'লার্জেস্ট' তকমা দিচ্ছেন। জীবাশ্মবিদদের আরও বক্তব্য, যে সময়ে এই সাপ পৃথিবীর বুকে চরে বেড়াত, কমবেশি সেই সময়েই মিথ হয়ে যাওয়া আরও একটি সাপ পৃথিবীতে ছিল- 'টাইটান বোয়া'। অতএব 'টাইটান বোয়া'র প্রবলতম প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে ভারতের মাটিতে পাওয়া 'বাসুকি ইন্ডিকাস'ই দাপিয়ে বেড়াত, এমন একটি ধারণা তৈরি হয়েছে। গুজরাটের পানান্ধ্রো লিগনাইট মাইনে ২০০৫ সালে গবেষকরা একটি বিশাল জীবাশ্ম পান। এত দিন ধরা হতো, এই জীবাশ্মটি একটি কুমিরের। কিন্তু ক্রমাগত গবেষণায় আইআইটি রুরকির বিজ্ঞানীদের হাতে লেগে যায় জ্যাকপট!'সায়েন্টিফিক রিপোর্টস' জার্নালে প্রকাশিত গবেষণাপত্রে লেখা হয়েছে, 'ম্যাডসোইডে' নামে অবলুপ্ত প্রজাতিভুক্ত ছিল এই বিশাল সাপ। এ পর্যন্ত পাওয়া বিভিন্ন সাপের জীবাশ্মের ভিত্তিতে 'টাইটান বোয়া'কেই সবথেকে বড় সাপ মনে করা হতো। কিন্তু 'বাসুকি'র আগমনের পরে পুরো হিসেবটা উল্টেপাল্টে গিয়েছে। গুজরাটে পাওয়া জীবাশ্ম থেকে পরিষ্কার, 'টাইটানে'র থেকে দৈর্ঘ্যে কোনও অংশে কম ছিল না 'বাসুকি'। ভারতে জীবাশ্ম পাওয়া গেলেও 'বাসুকি' আফ্রিকাতেও পাড়ি দিয়েছিল বলে মনে করেন বিজ্ঞানীরা।
এ-ও মনে করা হয়, ডাইনোসরদের অবলুপ্তির পরে (প্রায় ৬৫ মিলিয়ন বছর আগে) এবং মেগ্যালোডনের (দৈত্যাকৃতি হাঙর) আবির্ভাবের আগে (প্রায় ২৩ মিলিয়ন বছর আগে) 'টাইটান বোয়া' পৃথিবীতে ছিল। অর্থাৎ, সময়ের হিসেবে 'বাসুকি'র আবির্ভাব কমবেশি 'টাইটানে'র সময়েই হয়েছিল, এমনটা মনে করা যেতে পারে।
প্রায় ৪৭ মিলিয়ন বছর আগে 'গন্ডোয়ানা' ভূখণ্ডে এই প্রজাতির সাপ ছিল। সাপের শিকড় সম্পর্কে 'গন্ডোয়ানা'র সেই 'ম্যাডসোইডে' প্রজাতির গুরুত্ব যে অপরিসীম, সে কথা 'রয়্যাল সোসাইটি ওপেন সায়েন্স' জার্নালে ২০১৮ সালে প্রকাশিত একটি গবেষণাপত্রে বলা হয়েছে। 'বাসুকি' ভারতের মাটি ছেড়ে অন্যত্র গিয়েছিল কেন? গবেষকদের বক্তব্য, উচ্চ তাপমাত্রার কারণেই একসময়ে মাইগ্রেট করতে শুরু করেছিল এই সাপ। যে সময়ে এই প্রকাণ্ড সাপেরা পৃথিবীতে ছিল, সে সময়ে পৃথিবীর গড় তাপমাত্রা ২৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মতো।
আইআইটি রুরকির ডিপার্টমেন্ট অফ আর্থ সায়েন্স-এর চেয়ার প্রফেসর সুনীল বাজপেয়ীর বক্তব্য, 'টাইটান বোয়া অধুনা কলম্বিয়া অঞ্চলে বাস করত বলে আমরা জানি। আর বাসুকি ছিল খাঁটি ভারতীয়। মাঝের এই এতটা অঞ্চল টাইটান বা বাসুকি কেউ পার করেছিল কি না, তা বলা কঠিন। অন্তত করেছিল বলে মনে করার এখনও পর্যন্ত কোনও কারণ নেই। তবে বাসুকির ক্লোজ়েস্ট রিলেটিভ ছিল টাইটানই।'
বাসুকি যদি আজকের দিনের 'কনস্ট্রিক্টার' গোত্রের পূর্বপুরুষ হয়, তা হলে কোন প্রজাতির? পাইথন না বোয়া? গবেষকদের একটি বড় অংশ মনে করেন, 'বাসুকি' ছিল পাইথনেরই পূর্বসূরি। বাজপেয়ী জানিয়েছেন, ২০০৫ সালে জীবাশ্মের বিপুল সাইজ় দেখে তাঁরা এটিকে কোনও কুমিরের বলেই ধরে নিয়েছিলেন। কিন্তু কোনও নির্দিষ্ট সিদ্ধান্তে আসতে পারেননি। ফলে ২০২২ সালে জীবাশ্মটি নিয়ে নতুন করে পরীক্ষা শুরু হয়। পাওয়া যায় 'বাসুকি'কে।