গরম মাত্রাছাড়া হতেই কলকাতায় শুরু হয়েছে বিদ্যুৎ বিভ্রাট। শহর ও তার সন্নিহিত এলাকায় গত কয়েক দিনে অনেক জায়গাতেই বিদ্যুৎ না থাকার অভিযোগ করেছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। মোটের উপর একই ছবি জেলাগুলিতেও। তীব্র দাবদাহের সঙ্গে বিদ্যুৎ না থাকার ক্ষোভ সিইএসসি-র এক্স হ্যান্ডলে উগরে দিয়েছেন বহু গ্রাহক।এই পরিস্থিতিতে শুক্রবার সিইএসসি ও পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য বিদ্যুৎ বণ্টন সংস্থার আধিকারিকদের জরুরি বৈঠকে তলব করেছিলেন রাজ্যের বিদ্যুৎমন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস। সেখানে তিনি সিইএসসি-র আধিকারিকদের নির্দেশ দিয়েছেন, কোথাও কোনও ফল্ট বা যান্ত্রিক গোলযোগ হলে তা মেরামতের সময়ে জেনারেটরের মাধ্যমে বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক রাখতেই হবে।
সূত্রের খবর, এদিনের বৈঠকে সমস্ত তথ্য জোগাড় করে প্রস্তুতি নিয়েই বসেছিলেন মন্ত্রী। গরম পড়তেই কেন বিদ্যুৎ চলে যাওয়ার ঘটনা ঘটছে, তা নিয়ে তিনি কিছুটা উষ্মাও প্রকাশ করেন।
পরে এক বিবৃতিতে বিদ্যুৎ দপ্তরের তরফে বলা হয়েছে, ‘এদিনের বৈঠকে সিইএসসি কর্তৃপক্ষকে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ পরিষেবা দেওয়ার জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে কোথাও যদি যান্ত্রিক গোলযোগ হয়, সঙ্গে সঙ্গে তা গ্রাহকদের এসএমএসের মাধ্যমে জানানো ও যান্ত্রিক গোলযোগ মেরামতের সময়ে উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন জেনারেটরের মাধ্যমে বিদ্যুৎ সরবরাহ বজায় রাখার নির্দেশ দিয়েছেন মন্ত্রী। মোবাইল রিপেয়ারিং ভ্যান ও লোক সংখ্যা বাড়ানোরও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে সিইএসসি কর্তৃপক্ষকে।’
এ ব্যাপারে সিইএসসি-র এগজ়িকিউটিভ ডিরেক্টর (ডিস্ট্রিবিউশন) অভিজিৎ ঘোষ জানিয়েছেন, তাঁরা ইতিমধ্যেই ১০০টি জেনারেটর বিভিন্ন এলাকায় মোতায়েন করেছেন, যাতে কোথাও ফল্ট হলে দ্রুত সেখানে জেনারেটর পাঠিয়ে বিদ্যুৎ সরবরাহ চালু করা যায়। তবে একই সঙ্গে তিনি বলেন, ‘আমাদের এলাকায় কোথাও লোডশেডিং হচ্ছে না। ওভারলোডিংয়ের কারণে ট্রিপ করার জন্য কিছু জায়গায় বিদ্যুৎ সরবরাহ বিঘ্নিত হওয়ার ঘটনা ঘটেছে। সেটা কম সময়ের জন্য।’
তাঁর সংযোজন, ‘গ্রাহকদের কাছে আমরা বারংবার আর্জি জানাচ্ছি, এসি লাগালে আমাদের জানান। সে ক্ষেত্রে কোথাও বাড়তি লোডের প্রয়োজন হলে, আমরা তা সরবরাহের ব্যবস্থা করতে পারব।’ গত বছরের তুলনায় এবছর গরমে কলকাতায় এসি-র বিক্রি প্রায় ৫০ শতাংশ বেড়ে গিয়েছে। অথচ গত এক মাসে তাঁরা মাত্র ১৬ হাজারের মতো এসি লোডের আবেদন পেয়েছেন বলে জানিয়েছেন অভিজিৎবাবু।
অর্থাৎ, আর্জি জানানো সত্ত্বেও বহু গ্রাহক বাড়তি লোডের কথা জানাচ্ছেন না। গত বছর ১৬ জুন সিইএসসি এলাকায় চাহিদা পৌঁছেছিল ২,৬০৬ মেগাওয়াটে, যা সংস্থার ইতিহাসে সর্বোচ্চ। বৃহস্পতিবার সিইএসসি এলাকায় চাহিদা ছিল ২,৩৪০ মেগাওয়াট। এসি ব্যবহারের কারণে সিইএসসি এলাকায় দিন ও রাতের সর্বোচ্চ চাহিদার ফারাকও অনেকটা কমে গিয়েছে।
এসি-র বিপুল ব্যবহার বণ্টন সংস্থার কাছে আরও বড় মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। সংস্থার এক পদস্থ কর্তার কথায়, ‘গত বছর ১৬ জুন আমাদের এলাকায় বিদ্যুতের সর্বোচ্চ চাহিদা পৌঁছেছিল ৯,১৮১ মেগাওয়াটে, যা সংস্থার ইতিহাসে সর্বোচ্চ চাহিদা ছিল। এই বুধবারই আমাদের এলাকায় সর্বোচ্চ চাহিদা পৌঁছেছিল ৯,৫৪০ মেগাওয়াটে।
অর্থাৎ, মধ্য এপ্রিলেই চাহিদা গত বছরের সর্বোচ্চ চাহিদার থেকে প্রায় ৪০০ মেগাওয়াট বেড়ে গিয়েছে।’ তাঁর সংযোজন, ‘সবথেকে বড় কথা আমাদের এলাকায় পিক হচ্ছে রাত ১১টা থেকে ১১টা ৪০-এর মধ্যে। অর্থাৎ, এসি-র বাড়তি লোডের কারণেই পিকের সময় বদলে গিয়েছে।’
আসলে কলকাতার আশেপাশে উত্তর ও দক্ষিণ শহরতলিতে ও নিউ টাউনে যে সমস্ত বড় আবাসন প্রকল্প হচ্ছে, তার অধিকাংশই বণ্টন সংস্থার এলাকার মধ্যে পড়ে। এই সমস্ত আবাসনে এসি-র বিপুল ব্যবহার রাতে বিদ্যুতের চাহিদা এক লাফে অনেকটাই বাড়িয়েছে।
ওই কর্তা জানিয়েছেন, গত বছর গরমে কয়লার জোগানের একটা সমস্যা ছিল। এবার সেটা নেই। পিডিসিএল-এর তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলিতে সাড়ে ৭ লক্ষ টনের মতো কয়লার মজুত রয়েছে। খোলা বাজারে বিদ্যুতের দামও গত বছরের থেকে এখনও কম। এই অনুকূল পরিস্থিতিতে না জানিয়ে বিপুল সংখ্যক এসি ব্যবহারের জন্য বাড়তি লোডের চাহিদাই চিন্তা বাড়াচ্ছে সংস্থার আধিকারিকদের।
সেই কারণে সিইএসসি-র মতো বণ্টন সংস্থাও গ্রাহকদের বারবার আর্জি জানাচ্ছে, এসি লাগালে তা তাদের জানাতে। তা হলে বিদ্যুতের প্রকৃত চাহিদা বুঝে সরবরাহ সুনিশ্চিত করা সম্ভব হবে।