Lok Sabha Election 2024 : বিজ্ঞাপনে বৈশাখী ঝড় সোশ্যাল মিডিয়ায়, টাকার তথ্য চমকপ্রদ
এই সময় | ২১ এপ্রিল ২০২৪
প্রথম দফার ভোট শেষ হয়েছে ১৯ এপ্রিল। আর সেই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে ১৫ মার্চ থেকে ১৫ এপ্রিল এই এক মাসের মধ্যে মোট সাড়ে ৩৬ কোটি টাকা গুগল এবং মেটা (ফেসবুক) রাজনৈতিক বিজ্ঞাপনের ইনকাম হিসেবে নিজেদের ঘরে জমা করে ফেলেছে। মোট টাকার সিংহভাগ বিজেপি খরচ করলেও পিছিয়ে নেই কংগ্রেসও। এ ক্ষেত্রে বিজেপির ঘাড়ের উপরেই শ্বাস ফেলছে হাত-শিবির। প্রথম দফায় ভোটের প্রচারের জন্য গুগল, মেটা মিলিয়ে গত এক মাসে বিজেপি খরচ করেছে ১৪.৭ কোটি টাকা। অন্যদিকে, কংগ্রেস খরচ করেছে ১২.৩ কোটি টাকা। সোশ্যাল মিডিয়ার প্রচারে বাংলার শাসকদল তৃণমূলের স্থান সারা দেশে পঞ্চম। যদিও কত টাকা তৃণমূল এই খাতে খরচ করেছে, তার স্পষ্ট হিসেব পাওয়া যায়নি। বিজ্ঞাপনের এই তালিকায় নাম নেই সিপিএমের। অর্থাৎ তারা যদি কোনও টাকা খরচ করেও থাকে, তা এতটাই নগন্য যে গুগল ও মেটার তথ্যে সেটা আলাদা করে উল্লেখ করা হয়নি।গুগল অ্যাড ট্রান্সপারেন্সি সেন্টার এবং মেটা অ্যাড লাইব্রেরির রিপোর্ট অনুযায়ী, দেশে সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রচারের ঝড় সব থেকে বেশি ওঠে প্রথম দফার ভোট শুরুর ঠিক এক সপ্তাহ আগে থেকে। তবে তথ্য বলছে, সেই ভোটের প্রচার এখন আর শুধুমাত্র দেওয়াল লিখনেই সীমাবদ্ধ নয়। মানুষের কাছে পৌঁছতে ভারতীয় নির্বাচনী ব্যবস্থায় সোশ্যাল মিডিয়ার বিজ্ঞাপন একটা বড় জায়গা করে নিয়েছে। এই খাতে দেশের মধ্যে সব থেকে বেশি টাকা খরচ হয়েছে তামিলনাড়ুতে। সেখানকার শাসকদল ডিএমকে সোশ্যাল মিডিয়ায় বিজ্ঞাপন দেওয়া নিরিখে তৃতীয় স্থানে রয়েছে। সেই রাজ্যে খরচ হওয়া ১৭ কোটি টাকার মধ্যে ডিএমকে একাই বিজ্ঞাপনের পিছনে ঢেলেছে ১১ কোটি। তালিকার চতুর্থ স্থানে রয়েছে অন্ধ্রপ্রদেশের শাসকদল ওয়াইএসআর কংগ্রেস। পঞ্চম স্থানে বাংলার শাসকদল তৃণমূল।
প্রচার মাধ্যম হিসেবে অবশ্য রাজনৈতিক দলগুলির এক নম্বর পছন্দ ভিডিয়ো বিজ্ঞাপনই। তাই গুগল এবং তারই ভিডিয়ো স্ট্রিমিং সংস্থা ইউটিউবে ব্যাপক হারে বিজ্ঞাপন দেওয়া হয়েছে একমাস ধরে। হিসেব বলছে, মোট ১৪.৭ কোটি টাকা মধ্যে বিজেপি ইউটিউবে বিজ্ঞাপন দেখাতেই খরচ করেছে সাড়ে ন'কোটি টাকার মতো। আর কংগ্রেস মোট বিজ্ঞাপনের ৭৮ শতাংশ টাকা খরচ করেছে গুগল-ইউটিউবের পিছনে। বিজেপির প্রচারে গুরুত্ব পেয়েছে মোদীর গ্যারান্টি, দেশের উন্নত পরিকাঠামো, যুব সম্প্রদায়ের উন্নতি, কাশ্মীরে ৩৭০ ধারা বিলোপ এবং রাম মন্দির। কংগ্রেসের প্রচারে জায়গা করে নিয়েছে বেকারত্ব, মোদীর ব্যর্থতা, চাকরির নিরাপত্তা, প্রশ্নপত্র ফাঁস ও কৃষকদের নানা ইস্যু। বাংলাতে তৃণমূলের ইস্যুতে সবচেয়ে বেশি প্রাধান্য পেয়েছে দিদির প্রতিশ্রুতি, জনগর্জন, লক্ষ্মীর ভাণ্ডারের ভাতা বৃদ্ধির মতো দিকগুলি।
এই বিপুল সংখ্যক টাকা শুধুমাত্র প্রথম দফার নির্বাচনে সোশ্যাল মিডিয়ায় খরচ হওয়া নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলির মধ্যে নানা তর্ক বিতর্কও শুরু হয়েছে। প্রদেশ কংগ্রেসের অর্গানাইজেশন ইনচার্জ নিলয় প্রামাণিকের বক্তব্য, 'সোশ্যাল মিডিয়াকে ব্যবহার করে বিজেপি আমাদের অনেক শব্দ শিখিয়েছে। যেমন, ফেক নিউজ, পোস্ট ট্রুথ, হোয়াটসঅ্যাপ ইউনিভার্সিটি। সামাজিক মাধ্যমে বিজেপির এই মিথ্যা ভাষণকে বন্ধ করতেই কংগ্রেস নিবিড় ভাবে সোশ্যাল মিডিয়াকে ব্যবহার করছে।' তৃণমূলের আইটি সেলের প্রধান ও তমলুকের প্রার্থী দেবাংশু ভট্টাচার্যের বক্তব্য, 'আমাদের বিজেপির মতো কাঁড়ি কাঁড়ি টাকা নেই। ক্ষমতায় যতটুকু কুলিয়েছে, ততটাই করা হয়েছে। গ্রাউন্ডে প্রচার আর সোশ্যাল মিডিয়া- দুইয়ের মধ্যে ভারসাম্য রেখেই প্রচার চলছে। কারণ, এখন শুধু যুব সমাজ নয়, মা-কাকিমা-দাদু-জ্যাঠারাও সামাজিক মাধ্যমে ব্যাপক ভাবে আছেন।' যদিও রাজ্য বিজেপির আইটি সেলের ইনচার্জ জয় মল্লিকের দাবি, 'বিজেপিই একমাত্র এবং প্রথম পার্টি যারা রাজনৈতিক বার্তা পৌঁছনোর জন্য সোশ্যাল মিডিয়াকে বহুদিন ধরে ব্যবহার করে আসছে। বিরোধীরা অনেক কথা বলবে, কিন্তু বিজেপির অফিশিয়াল পেজ বা বিজ্ঞাপন থেকে ওরা একটাও এমন পোস্ট দেখাতে পারবে না, যেখানে মিথ্যা কথা বা ঘৃণা অথবা অন্য কোনও বিতর্কিত প্রচার করা হয়েছে।'
কিন্তু সোশ্যাল মিডিয়ায় এত ভোকাল হয়েও কেন সিপিএমের নাম বিজ্ঞাপনদাতাদের তালিকায় নেই? দেবাংশুর কটাক্ষ, 'ওরা এতেও শূন্য পেয়েছে। তবে এটা ঠিক, ওদের একটা স্ট্রং বাহিনী রয়েছে সোশ্যাল মিডিয়াতে।' পাল্টা জবাব দিতে ছাড়েননি সিপিএমের আইটি টিমের কর্মী বরুণ বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর কথায়, 'আমরা এই শূন্যতে গর্বিত। আমাদের কাছে ইলেক্টোরাল বন্ডের টাকা নেই। তাই বিজ্ঞাপন দেওয়ারও টাকা নেই। কর্মী-কমরেডরা সামাজিক মাধ্যমে ভীষণ ভাবে আছেন। তাঁদের অর্গানিক রিচই আমাদের জন্য যথেষ্ট।'
সোশ্যালে প্রচারে, খরচ কত?শুধুমাত্র ফেসবুকে প্রচারে গত এক সপ্তাহে প্রচারে কোন দল কত টাকা খরচ করল-
দলটাকাবিজেপি ২ কোটি ১১ লক্ষ ৪৩ হাজারডিএমকে১ কোটি ৬৩ লক্ষ ২০ হাজারকংগ্রেস ৯৩ লক্ষ ৫২ হাজারতৃণমূল১৭ লক্ষ ৫৭ হাজার