নিরুফা খাতুন: তীব্র থেকে তীব্রতর। দুঃসহ থেকে দুঃসহতর।
দক্ষিণবঙ্গে চব্বিশের গ্রীষ্মকে বর্ণনা করতে গিয়ে সব বিশেষণের ভাঁড়ার ফুরিয়ে যাওয়ার জোগাড়। পূর্বাভাস সত্যি করে পারদের ঊর্ধ্বগতি শনিবারও অব্যাহত, এবং আগামী অন্তত চারদিন কোথাও তীব্র, কোথাও অতিতীব্র তাপপ্রবাহ চলবে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অফিস। আগামী সপ্তাহের শুরুতে সামান্য ঝড়জলের সম্ভাবনা থাকলেও স্বস্তির আশা দুরাশাই। ইতিমধ্যে হিট স্ট্রোকে কয়েকজনের মৃত্যু হয়েছে। হিট স্ট্রোক থেকে কীভাবে বাঁচতে হবে তার একটি গাইডলাইন কেন্দ্রীয় মন্ত্রকের পক্ষ থেকে দেওয়া হয়েছে।
এই মুহূর্তে মারাত্মক দহনে তামাম গাঙ্গেয় বঙ্গ ছারখার, রাঢ়ভূমিতে কোথাও কোথাও সর্বোচ্চ তাপমাত্রা শনিবার ৪৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস টপকে গিয়েছে। খাস মহানগর কলকাতায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা প্রায় ৪১ ডিগ্রি ছুঁইছুঁই। আদ্রর্তাবিহীন শুখা গরমের আগুনের হলকায় মরুরাজ্য রাজস্থানকেও টেক্কা দিচ্ছে দক্ষিণবঙ্গ। জয়সলমেঢ়ের থেকেও কলকাতার পারদ বেশি ছিল এদিন। জয়সলমেরে এদিন সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৩৬ ডিগ্রি। সেখানে কলকাতায় ছিল ৪০.২ ডিগ্রি। সবচেয়ে বেশি গরম ছিল পানাগড়ে। পারদ এখানে ৪৫.১ ডিগ্রিতে পৌঁছে যায়। যা স্বাভাবিকের থেকে ৮.৩ ডিগ্রি বেশি। দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে বাঁকুড়া। এদিন বাঁকুড়ার তাপমাত্রা ছিল ৪৪.৬ ডিগ্রি। মেদিনীপুর ও বাঁকুড়ার তাপমাত্রা এদিন প্রায় এক ছিল। বুধবার পর্যন্ত অতিতীব্র তাপপ্রবাহের লাল সতর্কতা জারি করা হয়েছে।
তাপপ্রবাহে হিট স্ট্রোকের সম্ভাবনা বেড়ে যায়। হিট স্ট্রোকে মোকাবিলা করতে একটি গাইডলাইন কেন্দ্রীয় মন্ত্রকের পক্ষ থেকে দেওয়া হয়েছে। এই মারাত্মক তাপপ্রবাহ মোকাবিলা করতে রাজ্য সরকারও প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছে। হিট স্ট্রোক রোগীদের যাতে দ্রুত চিকিৎসার ব্যবস্থা হয় সেজন্য প্রতিটি হাসপাতালে দুটি করে শয্যা রাখা হয়েছে। এছাড়া জরুরি বিভাগেও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থাপনা করে রাখা হচ্ছে।
হিট স্ট্রোকে দেখা গিয়েছে, শরীর কুলিংয়ের অভাবেই বিভিন্ন বয়সে ৪০-৬৪% ক্ষেত্রে মৃত্যু এড়ানো সম্ভব হয় না। তাই মনে করিয়ে দেওয়া হয়েছে, অসুস্থকে দ্রুত বাতানুকূল ঘরে নিয়ে গেলে যতটা লাভ হয়, তার চেয়েও বেশি লাভ হয় স্নান করলে কিংবা ঘাড়ে, কানে, বগলে বা কুঁচকিতে আইস প্যাক দিলে। বিশেষজ্ঞ কমিটির তৈরি গাইডলাইন বলছে, শরীরের তাপমাত্রা ৯৭.৭-৯৯.৫ ডিগ্রি ফারেনহাইট রেঞ্জে স্বাভাবিক থাকে। তাপমাত্রা ১০০ ডিগ্রি পেরোলেই শুরু হয় শারীরিক-মানসিক পরিবর্তন। একদিকে যেমন শরীরের বিপাক প্রক্রিয়া বিঘ্নিত হয়, অন্যদিকে তেমনই মস্তিষ্কের সেরিবেলাম অংশে গোলযোগ দেখা দেয় বলে মানসিক বিভ্রান্তি এবং সিদ্ধান্তহীনতা ভর করে। সঙ্গে অসম্ভব দুর্বল লাগে, মাথা ঘোরে, গা গুলায়, ভারসাম্য হারিয়ে যায়।