Lok Sabha Election 2024: অমুকের স্ত্রী-তমুকের মা নয়! স্ব-পরিচয়ে মহিলাদের ভোটার কার্ডে নাম তোলার কারিগর এই বাঙালি, জানেন তিনি কে?
এই সময় | ২১ এপ্রিল ২০২৪
দেশ জুড়ে চলছে লোকসভা নির্বাচন। প্রায় ৯৭ কোটি রেজিস্টার্ড ভোটার রয়েছে দেশজুড়ে বলে জানিয়েছে নির্বাচন কমিশন। দেশের প্রথম সাধারণ নির্বাচন আজও বহু কথা অজানা। সেই প্রতিবেদনে প্রথম নির্বাচনের এক অজানা দিকে উঠে আসবে।
প্রথম দিকে ভোটার তালিকায় মহিলাদের নাম তাঁদের নিজস্ব নাম দিয়েছে উল্লেখ করা হয়নি। তালিকায় তাঁদের পরিচয় উল্লেখ করা হয়েছিল 'অমুকের স্ত্রী, অমুকের মা বা অমুকের মেয়ে' হিসেবে। প্রথম সাধারণ নির্বাচনের সময় দেশের নির্বাচনে সময় দেশের নির্বাচনে ভোটার তালিকায় সরাসরি নারীদের নাম লেখা হত না। তবে শেষমেশ একজনের চেষ্টা এছবি পালটায়। বলাবাহুল্য তিনি ছিলেন বাঙালি।তিনি ছিলেন দেশের প্রথম নির্বাচন কমিশনার সুকুমার সেন। বরাবরই বলিষ্ঠ সিদ্ধান্তের জন্য় পরিচিত ছিলেন সুকুমার সেন।
২৬ জানুয়ারি ১৯৫০ সালে সংবিধান কার্যকর হয়। তখন অন্তর্বর্তী সরকার চলছিল। এমতাবস্থায় গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত সরকার দ্বারা দেশ পরিচালনার কথা ভাবা হয়েছিল। প্রথমে দেশবাসী ভেবেছিল এ হয়তো কয়েক সপ্তাহের ব্য়াপায়। তবে নতুন সরকার গঠন মোটেও সহজ ছিল না। ১৯৫০ সালের জানুয়ারিতে, নির্বাচন কমিশন গঠিত হয়। প্রতিশ্রুতিশীল সুকুমার সেনকে দেশের প্রথম নির্বাচন কমিশনারের দায়িত্ব দেওয়া হয়।
অনেক পরিশ্রমের পর যখন ভোটার তালিকার প্রথম খসড়া প্রকাশ করা হয়, তখন দেখা যায় তাতে ৪০ লাখ নারীর নাম নিবন্ধন থেকে বাদ পড়েছে। এই সমস্ত মহিলারা নিজেদের নামে নয় বাঁচতেন অন্যের পরিচয়ে। অমুকের মেয়ে কিংবা অমুকের স্ত্রী হিসেবে তাঁদের নাম রেকর্ড করা হয়েছিল। সুকুমার সেনই বিষয়টিতে প্রথম হস্তক্ষেপ করেন। মহিলাদের শুধুমাত্র নিজের দাবিতে পরিচয়ের বিষয়ে অনড় ছিলেন তিনি। এরপর সাধারণ নির্বাচনে নারী ভোটারদের নামই হয়ে ওঠে তাদের নিজস্ব পরিচেয়ে।
স্বাধীনতার সময় দেশে ভোটার ছিল ১৭ কোটি, যা আজ প্রায় ৯৮ কোটিতে দাঁড়িয়েছে। সুকুমার সেন ভোটারদের ক্ষমতায়নের উদ্যোগ নেন। ১৭ কোটি ভোটারকে লোকসভার জন্য ৩২০০ জন বিধায়ক এবং ৪৮৯ জন সাংসদ নির্বাচন করতে হয়েছিল। এই ভোটারদের মধ্যে মাত্র ১৭ শতাংশই শিক্ষিত। এমন পরিস্থিতিতে নির্বাচন কমিশনকে ভোট দেওয়ার বিশেষ পদ্ধতি উদ্ভাবন করতে হয়েছে। নির্বাচন পরিচালনার জন্য কমিশন তিন লাখের বেশি কর্মকর্তা ও নির্বাচনী কর্মীদের প্রশিক্ষণ দিয়েছিল।
তবে সাহসী পদক্ষেপের জন্য় সমালোচনার মুখোমুখি হতে হয়েছে সুকুমার সেনকে। কেউ কেউ সে সময় তাঁর পদক্ষেপের সমালোচনা করে বলেছিলেন ভবিষ্যতে বিশ্ববাসী লাখ লাখ অশিক্ষিত মানুষের ভোট দেওয়ার অযৌক্তিক নাটক দেখবে। কেউ আবার মন্তব্য করেছিলেন, ভারতে সার্বজনীন ভোটাধিকার থাকার ধারণাটির বাস্তবায়ন মোটেও ঠিক হয়নি। কারণ তখনও পর্যন্ত নিজেকে গণতন্ত্রের মহান প্রতিনিধি বলে অভিহিত করত যারা সেই ইউরোপের অনেক দেশে এমনকি আমেরিকাতেও মহিলাদের ভোটাধিকার ছিল না। তবে কোনও সমালোচনা, উপহাসের পরোয়া করেননি সুকমার সেন। সফল নির্বাচন পরিচালনার জন্য কোনও আপসও করেননি।