Indian Student Death : হত্যা নয়, ভারতীয় ছাত্রের প্রাণ কেড়েছে ‘ব্লু হোয়েল’
এই সময় | ২২ এপ্রিল ২০২৪
ওয়াশিংটন: এতদিন মনে হচ্ছিল, ঘটনাটা খুনের। কিন্তু মাস দেড়েক পেরোনোর পর জানা গেল, গত ৮ মার্চ ইউএসে যে ভারতীয় ছাত্রের দেহ উদ্ধার হয়, তিনি ‘ব্লু হোয়েল চ্যালেঞ্জ’ গেমের সূত্রে আত্মঘাতী হয়েছেন। ইউএসএ-র কোনও কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠরত ভারতীয় পড়ুয়ার এ ভাবে মৃত্যু এই প্রথম। এবং এই সূত্রে আরও একবার প্রাণঘাতী খেলাটি উঠে এসেছে শিরোনামে।যে খেলায় ভারতে প্রথম আত্মহত্যার ঘটনাটি ঘটে ২০১৭-য়। সে বছরই একটি অ্যাডভাইসরিতে ভারতের ইলেকট্রনিক্স ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রকের তরফে ‘ব্লু হোয়েল গেম’ (দ্য সুইসাইড গেম)-কে আত্মহত্যায় প্ররোচনামূলক বলে উল্লেখ করা হয়।
এ বার ইউএসএ-তে ভারতীয় ছাত্রের মৃত্যুর সূত্রে এ ব্যাপারে ফের সচেতন হওয়ার কথা বলা হচ্ছে পড়ুয়া ও অভিভাবকদের। বছর কুড়ির ওই মৃত তরুণ ইউনিভার্সিটি অফ ম্যাসাচুসেটস-এ প্রথম বর্ষের ছাত্র ছিলেন। তবে তাঁর পরিবারের আপত্তি থাকায় পরিচয় সামনে আনা হচ্ছে না। ব্রিস্টল কাউন্টি ডিস্ট্রিক্ট অ্যাটর্নির তরফে মুখপাত্র গ্রেগ মিলিয়োট জানান, ঘটনাটিকে আপাতত আত্মহত্যা বলে ধরে নিয়েই তদন্ত চালাচ্ছেন তাঁরা।
প্রাথমিক ভাবে ধারণা করা হয়েছিল, তিনি বস্টন ইউনিভার্সিটির স্টুডেন্ট। লুটপাট চালিয়ে তাঁকে খুন করা হয়েছে বলেও বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে খবর বেরোয়। এ-ও বলা হয় যে জঙ্গলে একটি গাড়ির মধ্যে দেহটি পাওয়া গিয়েছে। কিন্তু পরে বস্টনেরই একটি সংবাদপত্র তাঁর প্রকৃত পরিচয় সামনে আনে। সূত্রের খবর, এই তরুণের ‘চ্যালেঞ্জ’ ছিল দু’মিনিট শ্বাস বন্ধ করে রাখা। সম্ভবত এর জেরেই মৃত্যু বলে মনে করা হচ্ছে।
যদিও মুখপাত্র মিলিয়োট বিষয়টি নিয়ে প্রকাশ্যে কিছু জানাননি। তাঁর বক্তব্য, ‘আমাদের কাছে এখনও বিস্তারিত তথ্য নেই। তবে আপাত ভাবে এটিকে আত্মহত্যার ঘটনা হিসেবেই তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। কেস ক্লোজ় করার আগে মেডিক্যাল এগজ়ামিনারের চূড়ান্ত রিপোর্টের অপেক্ষায় আছি আমরা।’ এর পরে সরকারি তরফে সংবাদমাধ্যমে আর কোনও আপডেট দেওয়া হয়নি। মেসেজ বা কলেরও জবাব মেলেনি বলে খবর।
ব্লু হোয়েল গেম কী?
অনলাইন গেমটি আত্মপ্রকাশ করে ২০১৫-’১৬ নাগাদ। তৈরি করে ফিলিপ বুদেইকিন নামে এক ব্যক্তি। যাকে ২০১৩-য় দোষী সাব্যস্ত করেছিল রাশিয়া। অন্তত ১৬ জন কিশোর-কিশোরীকে সে আত্মহত্যায় প্ররোচনা দিয়েছিল। সে জন্য বছর তিনেক জেল খাটে ফিলিপ। তারপরে জন্ম ‘ব্লু হোয়েল গেম’ বা ‘দ্য সুইসাইড গেম’-এর। ৫০ দিনের গেমে শুরু থেকেই নানা কঠিন ‘চ্যালেঞ্জ’ দেওয়া হয় প্লেয়ারদের।
সোশ্যাল মিডিয়া ঘেঁটে সাধারণত ডিপ্রেশনে থাকা অল্পবয়সি ছেলেমেয়েদের টার্গেট করা হয়ে ‘প্লেয়ার’ হিসেবে। যারা চ্যালেঞ্জ বা টাস্ক দেয়, তাদের বলা হয় ‘কিউরেটর’। প্রথম দিকে একা হরর মুভি দেখার মতো সহজ চ্যালেঞ্জ থাকলেও ক্রমশ তা কঠিন হয়। শেষ পর্যায়ে আত্মহত্যার পথে ঠেলে দেওয়া হয় প্লেয়ারদের। অনলাইনে লাগাতার ‘ব্ল্যাকমেলিং’ এবং ‘সাইবারবুলিং’-এর শিকার হওয়ার ভয়ে প্লেয়াররা মাঝপথে গেম ছেড়ে বেরোতেও পারেন না। ভারত, ইউএস, চিন, রাশিয়া-সহ বিভিন্ন দেশে এ পর্যন্ত ১৩০-এরও বেশি ছেলেমেয়ের প্রাণ কেড়েছে ব্লু হোয়েল।
ভারতে প্রভাব কেমন?২০১৭-র জুলাই মাসে ভারতে ব্লু হোয়েলের জেরে প্রথম মৃত্যুটি ঘটে। সেই ঘটনায় মুম্বইয়ের এক বছর ১৪-র স্কুলছাত্র একটি বাড়ির সেভেনথ ফ্লোর থেকে ঝাঁপিয়ে আত্মহত্যা করে। পরে সেই তালিকা লম্বা হতে থাকে। পশ্চিমবঙ্গের এক দশম শ্রেণির ছাত্রের দেহ উদ্ধার শৌচালয়ে। তার মুখ প্লাস্টিকে মুড়ে দড়ি দিয়ে বাঁধা ছিল। দিল্লিতে এক প্রাক্তন মন্ত্রীর ছেলেও উঁচু থেকে ঝাঁপ মেরে আত্মঘাতী হয়। ব্লু হোয়েলের চ্যালেঞ্জ নিয়ে কেরালার এক কিশোর গলায় দড়ি দিয়ে আত্মহত্যা করেছিল। সে বছরই এ সংক্রান্ত অ্যাডভাইসরিটি প্রকাশ করে ভারত সরকার।