• ভোটে গিমিক দিতে এক বছর পিএফের সুদে বঞ্চনা মোদির
    বর্তমান | ২২ এপ্রিল ২০২৪
  • বাপ্পাদিত্য রায়চৌধুরী, কলকাতা: সুপারিশ ছিল। কোষাগারে দেওয়ার মতো অর্থও ছিল। তা সত্ত্বেও বছরভর প্রাপ্য সুদ থেকে বঞ্চিতই থেকে গেলেন দেশের ২৫ কোটি পিএফ গ্রাহক। কেন? অপেক্ষা ছিল লোকসভা ভোটের। তৃতীয় ইনিংসের জন্য ছুটছেন নরেন্দ্র মোদি। বাজেটে আয়কর ছাড় থেকে প্রকল্প ঘোষণা, মধ্যবিত্তের ঝুলি গত কয়েক বছরে শূন্যই। অন্তত পিএফের সুদের হার বৃদ্ধির ঘোষণা যদি ভোটের আগে হয়, তার কিছুটা প্রভাব অন্তত লোকসভা ভোটে পাওয়া যাবে। সেই কারণেই কি কার্যত নাকচ করা হয়েছিল অর্থ কমিটির সুপারিশ? গিমিক দেওয়ার জন্য? সরকারি তথ্যের ভিত্তিতেই কিন্তু মেগা ভোটপর্বের মধ্যে এই প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। মনে করা হচ্ছে, চমক দিতে মাত্র দু’মাস আগে পিএফে ৮.২৫ শতাংশ সুদ ঘোষণা করেছে মোদি সরকার। তার আগের অর্থবর্ষে সুদের হার ছিল ৮.১৫ শতাংশ। কেন্দ্রের তথ্য সাফ দেখিয়ে দিচ্ছে, এক বছর ধরে শুধুই বঞ্চনা করা হয়েছে গ্রাহকদের। সুদের খাতে যে অর্থ রাখা ছিল, তাতে সরকার অনায়াসে ২০২২-২৩ অর্থবর্ষে ৮.২০ শতাংশ হারে সুদ দিতে পারত। কিন্তু দেয়নি।

    সুদের হার কত হবে, সেই বিষয়ে পরামর্শ নিতে প্রতি বছরই বৈঠক ডাকে ইপিএফও। সেখানে অছি পরিষদের সদস্যরা যেমন পরামর্শ দেন, তেমনই অর্থ বিষয়ক উপদেষ্টার সুপারিশও পেশ করা হয়। দপ্তরের আয়-ব্যয়ের হিসেব কষেই সুদের হার প্রস্তাব করা হয় সেখানে। তার উপর ভিত্তি করে সিদ্ধান্ত নেয় সরকার।  ২০২২-২৩ সালে অছি পরিষদের বৈঠকে অর্থ বিষয়ক উপদেষ্টার সুপারিশে বলা হয়েছিল, ৮.২ শতাংশ হারে সুদ দেওয়ার ক্ষমতা সরকারের আছে। বরং এরপরেও যথেষ্ট টাকা উদ্বৃত্ত থাকবে। তারা জানায়, ২০২৩ সালের ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত পিএফ কর্তৃপক্ষ বিনিয়োগ করেছে প্রায় ১২ লক্ষ ৫৪ হাজার কোটি টাকা। সেই বাবদ ওই দিন পর্যন্ত সুদ মিলেছে  ৯০ হাজার ৪৯৮ কোটি টাকা। এর সঙ্গে ২০২১-২২ অর্থবর্ষ থেকেও উদ্বৃত্ত রয়ে গিয়েছে প্রায় ১৯৮ কোটি টাকা, যা ২০২২-২৩ অর্থবর্ষে আয়ের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে। কিন্তু মোদি সরকার এসবে কর্ণপাত করেনি। ঘোষণা হয়, সুদের হার থাকবে ৮.১৫ শতাংশ।

    ২০২৩-২৪ অর্থবর্ষের সুদের হার ঠিক করতে ফের বৈঠকে বসে ইপিএফও। সেখানে অর্থ-উপদেষ্টার তরফে সুপারিশে জানানো হয়, আর্থিকভাবে সব দিক খতিয়ে দেখলে ৮.২ শতাংশ হারে সুদ ঘোষণাই শ্রেয়। তারপর কিন্তু ভোটের আগে জনমুখী হওয়ার লক্ষ্যে কেন্দ্র ঘোষণা করে, সুদ মিলবে ৮.২৫ শতাংশ হারে। প্রশ্ন এখানেই। উপদেষ্টার সুপারিশ অমান্য করে সুদ বাড়ানো গেল, অথচ ২০২২-২৩ অর্থবর্ষে কোটি কোটি মানুষকে কেন বঞ্চিত করল মোদি সরকার? তাতে গ্রাহকরা যে শুধু ওই অর্থবর্ষে ক্ষতিগ্রস্ত হলেন, তা নয়। যেহেতু সুদের অঙ্ক আসলের সঙ্গে যুক্ত হয়, তাই সুদে-মূলে কম টাকা পেলেন তাঁরা। আগামী দিনের সুদ প্রযোজ্য হবে ওই কম টাকার উপরই। তবে শ্রমিক সংগঠন টিইউসিসির সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক তথা অছি পরিষদের সদস্য শিবপ্রসাদ তেওয়ারির কথায়, ‘আমরা চাই, গ্রাহকরা সর্বোচ্চ আর্থিক সুবিধা পান। সুদের ক্ষেত্রেও বৈঠকে সেই দাবি জানিয়েছি। তা মেনে সরকার সুদের হার বাড়িয়েছে। এতে আমরা খুশি।’
  • Link to this news (বর্তমান)