এই সময়: লোকসভা ভোটপর্বের মধ্যেই এসএসসির নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় আজ, সোমবার রায় দিতে চলেছে কলকাতা হাইকোর্ট। চলতি লোকসভা ভোটে পশ্চিমবঙ্গ তো বটেই, এমনকী দেশের বিভিন্ন প্রান্তে এই নিয়োগ দুর্নীতিকে হাতিয়ার করে আক্রমণ শানিয়েছেন খোদ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী থেকে শুরু করে গোটা গেরুয়া শিবির এবং অন্য বিরোধীরা। বাংলার ভোটে এবার এটা অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুও।এই পরিস্থিতিতে আজ হাইকোর্ট কী রায় দেয়, সে দিকে যেমন শিক্ষামহলের নজর থাকবে, তেমনই নজর রাখবেন তাবড় রাজনীতিকরাও।
হাইকোর্টের প্রকাশিত মামলার তালিকা অনুযায়ী, বিচারপতি দেবাংশু বসাক ও বিচারপতি সব্বার রশিদির ডিভিশন বেঞ্চ আজ সকাল সাড়ে দশটায় মামলার রায় ঘোষণা করবেন।
প্রাথমিক থেকে উচ্চ মাধ্যমিক—রাজ্যের শিক্ষায় বিভিন্ন স্তরে নিয়োগে দুর্নীতির অভিযোগে হাইকোর্টের নির্দেশে অনেকগুলি মামলার তদন্ত করছে দুই কেন্দ্রীয় এজেন্সি সিবিআই ও ইডি। তারমধ্যে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ—২০১৬ সালে এসএসসির নবম-দশম, একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণিতে শিক্ষক নিয়োগ এবং ওই বছরেই স্কুলে তৃতীয় এবং চতুর্থ শ্রেণির কর্মী নিয়োগে দুর্নীতির মামলা।
সেই মামলাতেই তার রায় জানাবে হাইকোর্ট। সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে কলকাতা হাইকোর্ট এইসব মামলা একত্রিত করে শোনার জন্য বিচারপতি বসাকের নেতৃত্বে স্পেশাল বেঞ্চ গঠন করে। গত বছর ৫ ডিসেম্বর থেকে অন্তত ২৫ দিন এই মামলার শুনানি হয়েছে। সব মিলিয়ে প্রায় ৩০ লক্ষ আবেদনকারী এই চারটি স্তবে পরীক্ষা দিয়েছিলেন। শুনানি চলাকালীন আদালতের পর্যবেক্ষণ ছিল, সব মিলিয়ে প্রায় ২২ হাজার নিয়োগ হলেও প্রতারণা হয়ে থাকলে তা ওই ৩০ লক্ষ চাকরিপ্রার্থীর সঙ্গেই হয়েছে।
বঞ্চিত চাকরিপ্রার্থীদের পাশাপাশি যাঁদের বিরুদ্ধে বেআইনিভাবে চাকরি পাওয়ার অভিযোগ উঠেছে, সবটা মিলিয়ে লক্ষ লক্ষ চাকরিপ্রার্থীর ভবিষ্যৎও জড়িয়ে রয়েছে আদালতের রায়ের উপর। যাতে কোনওভাবেই এই রায়কে কেন্দ্র করে হাইকোর্ট চত্বরে কোনওরকম গোলমাল না হয়, সেজন্য আগে থেকেই বাড়তি নিরাপত্তার বন্দোবস্ত করা হচ্ছে।
হাইকোর্টের রায় কোন দিকে যেতে পারে, সে দিকে নজর রয়েছে আইনজ্ঞদেরও। তাঁদের তরফ থেকে তিন ধরনের ব্যাখ্যা উঠে আসছে। প্রথমত, যদি আদালত মামলার সব আবেদন খারিজ করে দেয়, সেক্ষেত্রে বেআইনিভাবে চাকরি পাওয়ার অভিযোগেরই আর সারবত্তা থাকবে না। ফলে যাঁরা নিয়োগ পেয়েছেন এবং যাঁরা বঞ্চিত হয়েছেন, প্রত্যেকের বিষয়টিই স্থিতাবস্থায় থাকবে।
তাহলে গত কয়েক বছর ধরে নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় ধৃত অভিযুক্তদের খালাস পাওয়া শুধু সময়ের অপেক্ষা। দ্বিতীয়ত, ডিভিশন বেঞ্চ যদি এসএসসির বিভিন্ন স্তরে নিয়োগের গোটা প্যানেল বাতিল করে দিয়ে এই মামলার তদন্তে সিবিআই যেসব ওএমআর শিট খুঁজে বার করে এসএসসি-কে দিয়েছিল, সেগুলি পুনরায় খতিয়ে দেখতে বলে কমিশনকে, সেক্ষেত্রে বৈধ ওএমআর-এর ভিত্তিতে যাঁরা নিয়োগ পেয়েছিলেন, তাঁদের বাদ দিয়ে বাকিদের নিয়োগ বাতিল হওয়ার সম্ভাবনা বেশি।
আইনজীবীদের বক্তব্য, বিতর্কিত চাকরিপ্রাপক হিসেবে নবম-দশম শ্রেণিতে ৮০৮, একাদশ-দ্বাদশে ৭৭১ জন শিক্ষক এবং গ্রুপ-সি পদে ৭৮৩ ও গ্রুপ-ডি পদে ১৭৪১ জনের চাকরি নিয়ে সংশয় রয়েছে। তৃতীয়ত, এই নিয়োগ বাতিল হলে বৈধ চাকরিপ্রার্থীদের মধ্যে থেকে কীভাবে বাকি নিয়োগ করা হবে, সেটা নিয়েও আদালত দিক নির্দেশ করে কি না, সেটাও দেখার।
নিয়োগ মামলার ইতিবৃত্ত
* জুন, ২০২১—শুনানি শুরু তৎকালীন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের এজলাসে
* ২২ নভেম্বর, ২০২১—সন্দীপ প্রসাদের মামলায় গ্রুপ-ডি নিয়োগে প্রথম সিবিআই তদন্তের নির্দেশ
* ৬ ডিসেম্বর, ২০২১—বিচারপতি হরিশ ট্যান্ডন ও বিচারপতি রবীন্দ্রনাথ সামন্তের ডিভিশন বেঞ্চ সিবিআই-নির্দেশ স্থগিত করে অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি রণজিৎ বাগের অনুসন্ধান কমিটি গড়ে
* ১৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২২—সাবিনা ইয়াসমিনের মামলায় গ্রুপ-সি নিয়োগে সিবিআই তদন্তের নির্দেশ তৎকালীন বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের। ডিভিশন বেঞ্চ সেই নির্দেশও স্থগিত করে বাগ কমিটিকে অনুসন্ধানের নির্দেশ দেয়
* ৭ এপ্রিল, ২০২২—নবম-দশম শিক্ষক নিয়োগের তদন্তও সিবিআই-কে
* ১৭ মে, ২০২২—রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী পরেশ অধিকারীর মেয়ে অঙ্কিতা অধিকারীর বেআইনি নিয়োগ চিহ্নিত করে তাঁকে সরিয়ে দেওয়ার নির্দেশ। একাদশ-দ্বাদশ নিয়োগের তদন্তও সিবিআই-কে
* ১৮ মে, ২০২২—বিচারপতি সুব্রত তালুকদারের ডিভিশন বেঞ্চ বাগ কমিটির রিপোর্ট গ্রহণ করে সব নিয়োগ দুর্নীতির মামলা সিবিআই-কে তদন্তের নির্দেশ দেয়
* ২২ জুলাই, ২০২২—নিয়োগ মামলায় ইডির হাতে গ্রেপ্তার প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়
* ২৮ সেপ্টেম্বর, ২০২২—সিবিআই আদালতে প্রথম রিপোর্ট জমা দিয়ে জানাল বিভিন্ন ভাবে নিয়োগে দুর্নীতি হয়েছে
* ডিসেম্বর, ২০২২ থেকে মার্চ, ২০২৩—কর্মী ও শিক্ষক মিলিয়ে বেআইনি নিয়োগ চিহ্নিত করে ধাপে ধাপে প্রায় পাঁচ হাজার নিয়োগ বাতিল সিঙ্গল বেঞ্চে
* ৯ নভেম্বর, ২০২৩—কলকাতা হাইকোর্টকে বিশেষ বেঞ্চ গঠন করে এসএসসি-র সব নিয়োগ মামলা একত্রিত করে শুনানির নির্দেশ সুপ্রিম কোর্টের। ছ’মাসের মধ্যে ফয়সালার সময় বেঁধে দেয় শীর্ষ আদালত