এক রামের দোসর দুই সুগ্রীব। অন্তত দার্জিলিং লোকসভা কেন্দ্রের ক্ষেত্রে তাই। ভোটে লড়ছেন রাজু বিস্ত। তাঁর সঙ্গে সামিল হয়ে নিজেদের অস্তিত্ব বাঁচানোর লড়াইয়ে নেমেছেন গোর্খা জনমুক্তি মোর্চার বিমল গুরুং ও জিএনএলএফ নেতা মন ঘিসিং। যদি রাজু বিস্ত হেরে যান, তাহলে ঘোর সঙ্কটে পড়তে পারেন পাহাড়ের এই দুই নেতা।এমনিতেই গোর্খা জনমুক্তি মোর্চার আন্দোলনের জেরে জিএনএলএফ সুপ্রিমো সুবাস ঘিসিংয়ের পাহাড় ছাড়ার পর থেকেই রাজনীতিতে কোণঠাসা জিএনএলএফ। এনডিএতে সামিল হয়ে কোনও মতে নিজেদের অস্তিত্ব টিঁকিয়ে রেখেছে। আর ২০১৭ সালের অশান্তির সময়ে বিমল গুরুং পাহাড় ছাড়ার পরে গোর্খা জনমুক্তি মোর্চার হালও তেমনই।
২০২০ সালে বিমল তৃণমূলের হাত ধরে পাহাড়ে ফিরলেও আগের মতো সেই ক্যারিশমা নেই তাঁর। ফলে ফলাফল উল্টো হলে খাদে পড়ে যাবেন বিমল ও মন ঘিসিং। অস্তিত্বের সঙ্কটে পড়বেন তাঁরা। কেন এই জল্পনা?
সম্প্রতি সাসপেন্ড হওয়া জিএনএলএফ নেতা মহেন্দ্র ছেত্রী মনে করেন, ‘এ বার পাহাড়ে বিজেপির হাওয়া একেবারেই নেই। কালিম্পংয়ে বিজেপির পাহাড় কমিটির নেতা কল্যাণ দেওয়ান কিছুটা ধরে রেখেছেন। কার্শিয়াংয়ে ভোটকেন্দ্রে পোলিং এজেন্ট খুঁজে বার করতে মাথার চুল ছেঁড়ার দশা সেখানকার নেতাদের। কার্শিয়াংয়ে বিজেপির মূল সমস্যা বিষ্ণুপ্রসাদ। বিজেপির ওই বিধায়ক এ বার লোকসভা ভোটে নিজেই নির্দল প্রার্থী হয়ে রাজু বিস্তকে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে বসে আছেন।’
তিনি বলেন, ‘তর্কের খাতিরেও যদি ধরে নেওয়া যায় যে রাজু বিস্ত নির্বাচনে হেরে যাবেন। তাতে বিজেপির খুব বেশি ক্ষতি হবে না। কিন্তু জিএনএলএফ ও গোর্খা জনমুক্তি মোর্চা সাইন বোর্ডে পরিণত হবে।’ প্রতিটি চা-বাগানে তাগড়া সংগঠন গড়ে তুলেছে অনীত থাপার ভারতীয় গোর্খা প্রজাতান্ত্রিক মোর্চা। অনীত থাপার দল তৃণমূল কংগ্রেসের জোটসঙ্গী। তৃতীয় শক্তি হিসাবে এ বার কার্শিয়াংয়ে উঠে এসেছে বাম-কংগ্রেস জোট প্রার্থী মুনিশ তামাংও।
কার্শিয়াংয়ে বিজেপির এই সাংগঠনিক দুর্বলতা সামাল দিতে আসরে নেমেছেন বিমল গুরুং এবং জিএনএলএফ নেতারা। দার্জিলিংয়ে অমিত শাহকে এনে জনসভা করিয়ে পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষরক্ষা হবে কি না সেই নিয়েই প্রশ্ন উঠেছে।জিএনএলএফ পাহাড়ে ষষ্ঠ তফসিলে স্বশাসন চেয়ে বিজেপির সঙ্গে হাত মিলিয়েছে। আবার ষষ্ঠ তফসিলে স্বশাসনের বিরোধী গোর্খা জনমুক্তি মোর্চার দাবি, পাহাড়ের সমস্যার রাজনৈতিক সমাধান।
দু’টি পরস্পর বিরোধী দল বিজেপির সঙ্গে এক ছাতার তলায় জড়ো হওয়ায় দলের অন্দরেও ক্ষোভ বাড়ছে। জিএনএলএফের বিক্ষুব্ধরা যেমন ইতিমধ্যেই হিল ষষ্ঠ তফসিল আন্দোলন কমিটি গড়ে পৃথক ভাবে আন্দোলনের প্রস্তুতি শুরু করেছে। লোকসভা ভোটের পরেই তাঁরা আত্মপ্রকাশ করবেন। দলের অন্দরে বিমল গুরুংকেও প্রশ্নের মুখে পড়তে হচ্ছে। এমন একটি পরিস্থিতিতে আশাবাদীর সংখ্যাও অবশ্য কম নয়।
কংগ্রেস নেতা বিনয় তামাং যেমন মনে করেন, রাজু বিস্ত এ বারের লোকসভা নির্বাচনে হারবেন, এ কথা তিনি মনে করেন না। তিনি বলেন, ‘যখন জিএনএলএফ কিংবা গোর্খা জনমুক্তি মোর্চার জন্ম হয় তখন পাহাড়ের রাজনীতিতে বিজেপির তেমন একটা অস্তিত্ব ছিল না। ফলে রাজু বিস্ত বা বিজেপি যদি এই আসনে হেরেও যায়, তাহলেও জিএনএলএফ কিংবা গোর্খা জনমুক্তি মোর্চার কোনও ক্ষতি হবে না।’ বিজেপির জেলা সভাপতি কল্যাণ দেওয়ান অবশ্য এই বিষয়ে মন্তব্যই করতে নারাজ। তিনি বলেন, ‘দার্জিলিং লোকসভা কেন্দ্রে বিজেপির হারার প্রশ্নই ওঠে না।’