তিন বছর ধরে কন্যাশ্রীর টাকা পাচ্ছে না বিশ্বভারতীর দুটি স্কুল
এই সময় | ২২ এপ্রিল ২০২৪
হেমাভ সেনগুপ্ত, শান্তিনিকেতন
গত তিন বছর ধরে ‘কন্যাশ্রী’ প্রকল্পের সুবিধা পাচ্ছে না রাজ্যের একমাত্র কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয় বিশ্বভারতীর ছাত্রীরা। অবিলম্বে যাতে এই প্রকল্পের সুবিধা মেলে, বিশ্বভারতীর উপাচার্য ও বোলপুর মহকুমা শাসককে চিঠি দিয়েছেন অভিভাবকরা। যদিও এই নিয়ে কোনও মন্তব্য করতে চাননি বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ।২০১৩ সালে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ‘কন্যাশ্রী’ প্রকল্পের সূচনা করার পর থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত গত আট বছর ধরে টাকা পেয়েছে বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠভবন ও শিক্ষাসত্রের ছাত্রীরা। ২০২১ সালে হঠাৎ করে বিশ্বভারতীতে মুখ্যমন্ত্রীর স্বপ্নের এই প্রকল্প বন্ধ হয়ে যায় অজানা কারণে। এর পিছনে ‘হাত’ রয়েছে তৎকালীন উপাচার্য বিদ্যুৎ চক্রবর্তীর। এমনটাই মনে করছেন অভিভাবকরা।
রাজ্যের মন্ত্রী চন্দ্রনাথ সিংহ বলেন, ‘আগে কন্যাশ্রীর সুবিধা পেত বিশ্বভারতীর দু’টি স্কুলের পড়ুয়ারা। বিদ্যুৎ চক্রবর্তীর সময়ে তা বন্ধ হয়ে যায়। বুঝতেই পারছেন কারণটা কী হতে পারে। আমরা চাই, বিশ্বভারতীর ছাত্রীরা সবাই কন্যাশ্রী পাক। বিশ্বভারতী প্রযোজনীয় ব্যবস্থা নিক।’
১৮ বছরের নীচে মেয়েদের পড়াশোনার জন্য এই প্রকল্পের মাধ্যমে আর্থিক সাহায্য করে রাজ্য সরকার৷ কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয় হলেও দেশের মধ্যে একমাত্র বিশ্বভারতীতে বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশাপাশি স্কুলও রয়েছে। পাঠভবন ও শিক্ষাসত্র দু’টি স্কুলের একটি আবাসিক, অন্যটিতে যাতায়াত করে পড়াশোনা করে ছাত্রছাত্রীরা। দু’টি স্কুলেই পঞ্চম থেকে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত পঠনপাঠন হয়৷
২০১৯ সালে বিশ্বভারতীর উপাচার্য হন বিদ্যুৎ চক্রবর্তী। তাঁর একাধিক সিদ্ধান্ত ও মন্তব্যের জন্য বিশ্বভারতীর সঙ্গে রাজ্য সরকার ও শাসকদলের সংঘাত চরমে পৌঁছয়। সংঘাতের জেরে বিশ্বভারতীকে দেওয়া রাস্তা ফিরিয়ে নেয় রাজ্য সরকার। মনে করা হচ্ছে, সেই সংঘাতের জেরেই ২০২১ সাল থেকে বিশ্বভারতীর পাঠভবন ও শিক্ষাসত্রের ছাত্রীরা ‘কন্যাশ্রী’ পাচ্ছে না।
কারণ, সরকারি নিয়ম অনুযায়ী, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে ছাত্রী সংখ্যা-সহ বিস্তারিত তথ্য দিয়ে রাজ্য সরকারের কাছে আবেদন করতে হয়। সেই আবেদনের ভিত্তিতে সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসনের মাধ্যমে ওই প্রকল্পের অর্থ ছাত্রীদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে পাঠিয়ে দেয় রাজ্য। বিশ্বভারতীর অবিভাবকরা এতদিন মৌখিক ভাবে আবেদন করলেও কোন কাজ হয়নি।
ইতিমধ্যেই বিদ্যুৎ চক্রবর্তীর কার্যকালের মেয়াদ শেষে বিশ্বভারতীর বর্তমান ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য হিসেবে দায়িত্ব পেয়েছেন সঞ্জয়কুমার মল্লিক। কয়েক দিন আগে পাঠভবন ও শিক্ষাসত্রের অবিভাবকরা কন্যাশ্রী প্রকল্পের সুবিধা পেতে তাঁকে চিঠিও দিয়েছেন। একটি কপি পাঠিয়েছেন বোলপুরের মহকুমা শাসক অয়ন নাথকে।
পাঠভবনের এক ছাত্রীর অবিভাবক অরিজিৎ মণ্ডল বলেন, ‘এই প্রকল্পের সুবিধা আগে পেত বিশ্বভারতীর ছাত্রীরা। ২১ সালে বন্ধ হয়ে যায়। আমরা তাই লিখিত ভাবে জেলা প্রশাসন ও বিশ্বভারতীর উপাচার্যকে এই প্রকল্প ফের চালু করার জন্য আবেদন করেছি। বিশ্বভারতী উদ্যোগী হলে রাজ্য সরকারের এই প্রকল্পের সুবিধা পাবে ছাত্রীরা।’ মহকুমা শাসক অয়ন নাথ বলেন, ‘চিঠি পেয়েছি। বিষয়টি দেখা হচ্ছে।’