এই সময়: গত শুক্রবার লোকসভা ভোটের প্রথম দফার নির্বাচনের দিনই কেন্দ্রীয় বাহিনীর ভূমিকা নিয়ে তীব্র অসন্তোষ প্রকাশ করেছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এবার সাত দফায় নির্বাচনের প্রক্রিয়া চলার মধ্যেই কেন্দ্রীয় বাহিনী বিএসএফের বিরুদ্ধে নির্বাচনী প্রচার চালানোর অভিযোগ তুললেন তৃণমূলনেত্রী। এই ঘটনায় বিএসএফের বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ দায়ের হয়েছে বলেও মমতা জানিয়েছেন।পাশাপাশি এনিয়ে নির্বাচন কমিশনেরও দ্বারস্থ হচ্ছে তৃণমূল। যদিও রবিবার এই বিষয়ে বিএসএফের তরফে কোনও প্রতিক্রিয়া দেওয়া হয়নি।
বালুরঘাটের তৃণমূল প্রার্থী বিপ্লব মিত্রের সমর্থনে রবিবার নির্বাচনী সভার মঞ্চ থেকে মমতা একটি অভিযোগপত্রের প্রতিলিপি দেখান।
এই কাগজ দেখিয়ে তিনি বলেন, 'বিএসএফের বিরুদ্ধে পুলিশে দায়ের হওয়া একটি এফআইআর (এর কপি) পেলাম। এটা গত ১৯ তারিখের। আমাদের এক ভাইকে বিএসএফ গুলি করে দিয়েছে। আফতাবউদ্দিন মিঞাঁ অভিযোগ করেছেন। এটা ভিক্টিম পরিবারের অভিযোগপত্র। যাঁর গুলি লেগেছে বিএসএফের, তিনি বলেছেন, বিএসএফ তাঁকে বলেছে, বিজেপিকে ভোট দাও, না হলে গুলি করে দেবো।'
এফআইআরের এই প্রতিলিপি দেখিয়ে নির্বাচন কমিশনকে অবিলম্বে পদক্ষেপ গ্রহণ করতে বলেছেন মমতা। তৃণমূলের প্রার্থী বিপ্লব মিত্রকে কমিশনে লিখিত অভিযোগ দায়ের করার নির্দেশও দিয়েছেন মমতা। যদিও এটা কোন থানার ঘটনা, তা সভায় উল্লেখ করেননি মমতা।
ঠিক কী অভিযোগ রয়েছে এফআইআরে? মমতা এই এফআইআরের প্রতিলিপি সবার সামনে পড়ে শোনান। তাঁর কথায়, 'গত ১৯ তারিখ দুপুরে বিএসএফের চার-পাঁচ জন ক্যাম্প থেকে গ্রামে আসে। ওই সময়ে গ্রামের লোকজন মাঠে ছিলেন। বিএসএফ ডাকলে কিছু লোক যায়, বিজেপিকে ভোট দেওয়ার জন্য তাদের উপর চাপ সৃষ্টি করতে থাকে। তখন গ্রামের উপপ্রধান ঘটনাস্থলে আসেন। তিনি এর প্রতিবাদ করেন। বিএসএফ বন্দুক, লাঠি দিয়ে বেধড়ক মারধর করে। জখম করে। বলে, বিজেপিকে ভোট না দিলে সবাইকে গুলি করে মারব।'
কেন্দ্রীয় সরকারের অধীনে থাকা বাহিনী বিজেপির হয়ে কাজ করছে বলে তৃণমূল নেতৃত্ব অভিযোগ করলেও বিধানসভার বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী পাল্টা রাজ্য প্রশাসনের বিরুদ্ধে জোড়াফুলের হয়ে কাজ করার অভিযোগ তুলেছেন। মহিষাদলে তিনি এ দিন বলেন, 'উনি এই নির্বাচনে রাজ্য সরকারকে ব্যবহার করছেন। ওঁর নির্বাচনী সভা কোথায় হবে, তা প্রশাসনের মাধ্যমে জানানো হচ্ছে। লোকপ্রসার শিল্পীদের ওঁর সভায় আসার জন্য ফোন করা হচ্ছে।'
শুভেন্দু পাল্টা অভিযোগ করলেও তৃণমূল নেতৃত্বের দাবি, অতীতে কখনও কেন্দ্রীয় বাহিনীর এমন রাজনীতিকরণ হয়নি। তাই নির্বাচন কমিশন ও বিএসএফের উদ্দেশে মমতার বার্তা, 'নির্বাচন কমিশনকে বলব, চোখ খুলে দেখুন এবং প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করুন। আমি দেখতে চাই, বিএসএফ বড়, না মানুষ বড়? আপনারা ভালো করে কাজ করুন, ঘরের খাবার খাইয়ে দেবো। মেয়েরা বিয়েতে নেমন্তন্ন করে খাওয়াবে। ভালো করে দেশরক্ষা করুন।
যখন গোরু পাচার হয়, তখন কী করেন? আপনাদের দায়িত্ব, গোরু পাচার রোখা। আমাদের দায়িত্ব নয়।' আগামী ২৬ এপ্রিল রাজ্যে দ্বিতীয় দফার নির্বাচন রয়েছে। সেই ভোটের আগে কেন্দ্রীয় বাহিনী নিয়ে আমজনতাকে নির্দিষ্ট পরামর্শও দিয়েছেন তৃণমূলনেত্রী। মমতার কথায়, 'বাহিনী নিয়ে গুন্ডামি করলে রুখে দাঁড়াবেন তো? মুখে কিচ্ছু বলবেন না।
আপনার যদি পথ আটকায়, বলবেন, আমি ভোট দিতে যাচ্ছি। আমাদের পার্টি অফিসগুলোতে খবর দেবেন। আমরা সঙ্গে সঙ্গে টেক-আপ করব। পুলিশ গিয়ে আপনাকে পৌঁছে দিয়ে আসবে।'