• একবার সভা করতে এলে মোদির ব্যক্তিগত খরচ ২৫ কোটি: শত্রুঘ্ন
    বর্তমান | ২২ এপ্রিল ২০২৪
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, আসানসোল: ফের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে একহাত নিলেন আসানসোল লোকসভা কেন্দ্রের তৃণমূল প্রার্থী শত্রুঘ্ন সিনহা। শনিবার রানিগঞ্জের এক কর্মিসভায় তিনি বলেন, মানুষের দৃষ্টি ঘোরাতে নির্বাচনের সময় তিনি মাছ-মাংস না খাওয়ার প্রসঙ্গে বলছেন। তিনি নিরামিষভোজী। তিনি প্রতিদিন যে মাসরুম খান তা ৫০ হাজার টাকা কিলো। কাশ্মীর থেকে তাঁর জন্য বিশেষভাবে তা আনানো হয়। যাইহোক, উনি প্রধানমন্ত্রী খেতেই পারেন। তিনি আরও বলেন, প্রধানমন্ত্রীর প্রতিটি সভাতে শুধু তাঁর পিছনে খরচ হয় ২৫ কোটি টাকা। কর্মিসভায় উপস্থিত ছিলেন রানিগঞ্জের বিধায়ক তাপস বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি আবার বিজেপি প্রার্থী সুরেন্দ্র সিং আলুওয়ালিয়ার শ্যালক। এদিন তাৎপর্যপূর্ণ মন্তব্য করেন তাপসবাবু। তিনি বলেন, একজন রাজনীতিকের কাছে ভোটের ফলাফলই তাঁর মূল পরিচয়। শিক্ষা, পারিবারিক সম্পর্ক আপনার রাজনীতির কোনও পরিচয় দেয়না। তাপসবাবুর এই মন্তব্য যে জামাইবাবুকে উদ্দেশ্য করে, সে ব্যাপারে একরকম নিশ্চিত রাজনৈতিক মহল। 

    আলুওয়ালিয়াকে আসানসোলে প্রার্থী করার পরই তাপসবাবুর ভূমিকা নিয়ে বিভিন্ন মহলে জল্পনা তৈরি হয়। কিন্তু তাপস যাবতীয় জল্পনায় আগেও জল ঢেলে দিয়েছেন। এদিনও নিজের অবস্থান স্পষ্ট করে দিলেন এডিডিএ’র চেয়ারম্যান। তাপসবাবু বলেন, যেভাবেই দলকে জেতাতে হবে। নিজের নিজের এলাকায় লিড সুনিশ্চিত করুন। পাশের ওয়ার্ডে বা পাশের পঞ্চায়েতে কি হচ্ছে আপনার দেখতে যাওয়ার প্রয়োজন নেই। আরেকটা জিনিস মনে রাখবেন, আপনি সবচেয়ে ভালো জানেন কোন মানুষ আপনাকে পছন্দ করেন,  আর কোন মানুষ অপছন্দ করেন। যিনি পছন্দ করেন  তাঁর বাড়িতে গিয়েই ভোট প্রার্থনা করুন। সব সময় মাথায় রাখবেন, আপনার ভূমিকা যেন দলের প্রচারের অন্তরায় না হয়। তাপসবাবু ঘুরিয়ে দলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব রোখার বার্তা দিলেন বলে মনে করা হচ্ছে। 

    তৃণমূলের স্টার ক্যাম্পেনারদের তালিকা প্রকাশ করেছে দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের পর তিন নম্বরে নাম রয়েছে বলিউডের একদা সুপারস্টার শত্রুঘ্ন সিনহার। এদিন কর্মিসভায় তাঁকে দেখতে রানিগঞ্জের বহু মানুষ রাস্তায় ভিড় জমিয়েছিলেন। নির্বাচনী প্রচারে কমিশনের অনুমতি নিয়ে বিভ্রান্তির সৃষ্টি হয়। ফলে, রোড শো বাতিল করে তড়িঘড়ি কর্মিসভার আয়োজন করে তৃণমূল। তাতেও ভিড় সামাল দেওয়া মুশকিল হয়ে পড়ে। মহিলাদের ভিড় জমায়েত ছিল দেখার মতো। সেই সভাতে এসেই প্রধানমন্ত্রীকে নিশানা করেন বিহারীবাবু। তিনি প্রধানমন্ত্রীর খাবার নিয়ে প্রশ্ন তোলার পাশাপাশি বলেন, পেশাক নিয়েও ভীষণ সৌখিন আমাদের প্রধানমন্ত্রী। কতবার যে পোশাক পরিবর্তন করেন! আমি একটা সময় ওঁদের সঙ্গে ছিলাম। খুব ভালো করে জানি ওঁদের আচার ব্যবহার। তিনি আরও বলেন, প্রধানমন্ত্রীর আগ্রাসন বাংলা মেনে নেয়নি বলে একশোদিনের প্রকল্প, আবাস যোজনার টাকা সহ কেন্দ্রের নানা প্রকল্পের টাকা আটকে দেওয়া হয়েছে। চিন্তা করবেন না, এবার আর মোদি সরকার আসবে না। আমাদের সরকার হবে। বাংলা নিজের প্রাপ্য পাবে। 

    এরপরই বিজেপির ‘সন্দেশখালি’ অস্ত্রকে ভোঁতা করে দিতে শত্রুঘ্ন উত্তরপ্রদেশের হাতরাস, উন্নাও মণিপুরের প্রসঙ্গ টেনে আনেন। সেই সঙ্গে উপস্থিত মহিলাদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, কোনও সন্দেহ নেই, সন্দেশখালিলর ঘটনা নিন্দনীয়। কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি। কিন্তু তা নিতে গিয়ে প্রচণ্ড সময় লেগে যাচ্ছে। এর পিছনে সিবিআই তদন্তের জটিলতাই মূলত দায়ি। এদিনের কর্মিসভায় উপস্থিত ছিলেন রানিগঞ্জের তৃণমূল কংগ্রেসের শহর-সভাপতি রুপেশ যাদব সহ রানিগঞ্জের অন্যান্য নেতারা। শত্রুঘ্নের বক্তব্যের সমালোচনা করেছে বিজেপি। দলের জেলা সাধারণ সম্পাদক তাপস রায় বলেন, ওদের কিছু ইস্যু নেই। তাই ব্যক্তিগত আক্রমণের আশ্রয় নিয়েছে।
  • Link to this news (বর্তমান)