• দৃষ্টিহীন শিক্ষককে নির্বাচনের ডিউটি অব্যাহতি চেয়ে প্রশাসনের দোরে হত্যে
    বর্তমান | ২২ এপ্রিল ২০২৪
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, আরামবাগ: পুরশুড়ার পশ্চিমপাড়া হাইস্কুলের শিক্ষক সমীর ধাড়া। ভোট এলেই দৃষ্টিহীন মানুষটিকে সরকারি নিয়মের গেরোয় পড়তে হয়। এবারও তার ব্যতিক্রম হয়নি। লোকসভা নির্বাচনে প্রিসাইডিং অফিসার হিসেবে তাঁর নাম প্রস্তাব করা হয়েছে। অব্যাহতি চেয়ে প্রশাসনের কাছে আবেদন করেছেন। উত্তর আসেনি। ভোট এগিয়ে আসছে। স্ত্রীকে সঙ্গে নিয়ে দৃষ্টিহীন শিক্ষক এক অফিস থেকে আর এক অফিসে হন্যে হয়ে ঘুরছেন। 

    সরকারি কর্মচারী হিসেবে শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মীদের ভোটের কাজে নিয়োগ করা হয়। দৃষ্টিহীন ও শারীরিক প্রতিবন্ধীদের ক্ষেত্রেও কি একই নিয়ম প্রযোজ্য? প্রশাসনিকস্তরে বিষয়টি নিয়ে প্রশ্ন করা হলে কোনও উত্তর মেলেনি। যথেষ্ট সাধারণ শিক্ষক থাকা সত্ত্বেও কেন শারীরিক প্রতিবন্ধী তথা দৃষ্টিহীনদের অব্যাহতি দেওয়া হবে না তা নিয়েও প্রশ্ন উঠছে। সমীরবাবু নরেন্দ্রপুর রামকৃষ্ণ মিশন থেকে ব্রেল পদ্ধতিতে পড়াশুনো করেন। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলায় স্নাতকোত্তর নিয়ে উত্তীর্ণ হন। পড়াশোনা শেষ করে প্রথমে কলকাতার সোনারপুরে একটি স্কুলে বছর চারেক শিক্ষকতা করেন। এরপর গোঘাটের একটি হাইস্কুলে ১০ বছর শিক্ষকতা করেন। পশ্চিমপাড়া হাইস্কুলে একুশ সাল থেকে শিক্ষকতা করছেন। সবরকম প্রতিকূলতা উপেক্ষা করে শিক্ষকতা করছেন। ছাত্রছাত্রী মহলে জনপ্রিয় শিক্ষক হিসেবে তিনি পরিচিত। প্রতিবারের মতো এবারও ভোটের দায়িত্বের চিঠি পেয়েছেন। ব্লক ও মহকুমা শাসকের দপ্তরে ইতিমধ্যেই কাজের অব্যাহতি চেয়ে আবেদন করেছেন। মহকুমা প্রশাসনের তরফে সমীরবাবুকে জেলা প্রশাসনের কাছে যোগাযোগ করতে বলা হয়েছে। সমীরবাবু বলেন, গত বৃহস্পতিবার প্রশাসনের কাছ থেকে ডিউটির চিঠি পাই। স্ত্রীকে নিয়ে সেদিনই পুরশুড়ার বিডিওর সঙ্গে দেখা করি। উনি মহকুমা শাসকের সঙ্গে কথা বলতে বলেন। এসডিও সুভাষিনী ইর সঙ্গে দেখা করে সমস্ত বিষয়টি জানাই। তিনি জানান, এই বিষয়ে জেলা প্রশাসন পদক্ষেপ নিতে পারবে। ভোট এলেই আমাকে হয়রানির শিকার হতে হয়। প্রশাসনের দোরে দোরে ঘুরে অব্যহতি পাই। প্রশাসনের কাছে আমার নিয়োগপত্র ও প্রতিবন্ধী সার্টিফিকেট বহুবার জমা দিয়েছি। এমনকী প্রশাসনের নির্দেশমতো দৃষ্টিহীনতার প্রমাণস্বরূপ চুঁচুড়ার সরকারি হাসপাতালে পরীক্ষাও দিতে হয়েছে। তারপরেও কেন বারবার হয়রানি করা হয় তার কারণ জানি না। স্কুলের টিচার ইন চার্জ পার্থসারথি দত্ত বলেন, শিক্ষক হিসেবে পড়ুয়াদের কাছে উনি খুবই জনপ্রিয়। সাহিত্য ও বাংলা ব্যাকরণ বিষয়ে ওঁর দক্ষতা বিস্ময়কর। নির্বাচনে ওঁর ডিউটি পড়ায় কিছুটা অবাক হয়েছি। স্কুলের তরফে দৃষ্টিহীন সংক্রান্ত প্রমাণপত্র ওঁকে দেওয়া হয়েছে। সমীরবাবুর স্ত্রী মান্তু ধাড়া বলেন, স্বামীকে বাইকে চাপিয়ে স্কুলে পৌঁছে দিয়ে আসি। আবার ছুটি হলে নিয়ে আসি। ভোট এলেই ওঁকে যন্ত্রণায় পড়তে হয়। 

    এবারও দৃষ্টিহীন মানুষটিকে নিয়ে ব্লক অফিস ও মহকুমা প্রশাসনিক দপ্তরে ছোটাছুটি করছি। আমাদের চুঁচুড়ায় যেতে বলা হয়েছে। প্রশাসনের কাছে ভোটের কাজে অব্যাহতি চাওয়ার অবদান করা হয়েছে। উনি নিজের কোনও কাজ করতে পারেন না। আমরা চাই মানবিক দৃষ্টিতে প্রশাসন বিষয়টি দেখুক। আরামবাগের এসডিও সুভাষিনী ই বলেন, এই বিষয়ে যা সিদ্ধান্ত নেওয়ার, জেলাশাসক নেবেন। জেলা নির্বাচন দপ্তর থেকে জানানো হয়েছে, সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির আবেদন খতিয়ে দেখা হবে।  পুরশুড়ার পশ্চিমপাড়া হাইস্কুলের দৃষ্টিহীন শিক্ষক সমীর ধাড়া।-নিজস্ব চিত্র
  • Link to this news (বর্তমান)