• হার্মাদগড় শুনিয়ায় সিপিএমের দাগী নেতারাই বিজেপির মুখ
    বর্তমান | ২২ এপ্রিল ২০২৪
  • শ্রীকান্ত পড়্যা, শুনিয়া: একসময়ের হার্মাদগড় দেশপ্রাণ ব্লকের শুনিয়ায় সিপিএমের দাগী নেতারাই এখন বিজেপির ভোট কাণ্ডারী। দেশপ্রাণ ব্লকের আঁউরাই, আমতলিয়া এবং ধোবাবেড়িয়া গ্রাম পঞ্চায়েতে বাম থেকে রামে আসা নেতা-কর্মীরাই এলাকার বিজেপির মুখ। এখানে নব্য বিজেপি কিংবা দাদার অনুগামীরা ম্লান। সিপিএম এখানে নিজেদের পার্টিকে বিজেপির কাছে এককথায় বন্ধক দিয়ে ফেলেছে। খেজুরি, নন্দীগ্রাম থেকে তাড়া খেয়ে রসুলপুর নদীর তীরে শুনিয়ায় একসময় আশ্রয় নিয়েছিল হার্মাদ বাহিনী। সেই শুনিয়ায় এখন সিপিএম বলে কিছু নেই। একচেটিয়া হার্মাদরাই এখন বিজেপির শেষ কথা।

    শুনিয়া সংলগ্ন কলাগেছিয়া গ্রাম। এই গ্রামের বাসিন্দা সুবল বর একসময় সিপিএমের লোকাল কমিটির সদস্য ছিলেন। শুনিয়া পর্বে হিংসার ঘটনায় তাঁর বিরুদ্ধে মোট ১০৭টি অভিযোগ দায়ের হয়েছিল। সেই সুবলবাবু গত পঞ্চায়েত ভোটে বিজেপির প্রার্থী হয়েছিলেন। আঁউরাই গ্রাম পঞ্চায়েতের সংরক্ষিত আসনে তাঁকে প্রধান মুখ করে লড়াই করেছিল বিজেপি। যদিও ভোটে হেরে যান সুবল বর। বিজেপির উত্তর কাঁথি-১ মণ্ডল কমিটির সহ সভাপতি সুবল বর এখন আঁউরাই পঞ্চায়েতে বিজেপির ভরসা। এই গ্রাম পঞ্চায়েতের বাসিন্দা অমর গুড়িয়া সিপিএমের তিনটি টার্মের পঞ্চায়েত প্রধান ছিলেন। তিনি বিজেপির অঞ্চল কনভেনারের দায়িত্বে। শনিবার কলাবেড়িয়া গ্রামে নিজের বাড়িতে বসে সুবলবাবু বলেন, আমরা একসময় সিপিএম করতাম। এখন এখানে দূরবীন দিয়ে সিপিএমকে খুঁজতে হবে। এখানে দাদার অনুগামী শক্তি বলে কিছু নেই। সিপিএম থেকে আসা আমরাই বিজেপির মূল শক্তি।

    একইভাবে আমতলিয়া গ্রাম পঞ্চায়েতে একসময় সিপিএমের দাপুটে নেতা ছিলেন অজয় সামাই। শুনিয়ার এই নেতার বিরুদ্ধে ৪০টির বেশি মামলা হয়েছিল। তিনি এখন বিজেপির মণ্ডল কমিটির সহ সভাপতি। ওই গ্রাম পঞ্চায়েতের আর এক বিজেপি নেতা রতন প্রধান সিপিএম করতেন। এখন তিনি বিজেপির মণ্ডল কমিটির সাধারণ সম্পাদক। চন্দন শীট বিজেপির আমতলিয়া অঞ্চল কনভেনার। তাঁর বাবা ছিলেন সিপিএমের সদস্য। ধোবাবেড়িয়া গ্রাম পঞ্চায়েতের বিজেপির মুখ হলেন বিষ্ণুপদ খাটুয়া ও কাজল শীট। বিষ্ণুপদ মণ্ডল কমিটির সাধারণ সম্পাদক। কাজল অঞ্চল কনভেনার। দু’জনেই এলাকায় সিপিএমের প্রথম সারির নেতা ছিলেন।

    সিপিএমের দাগী নেতারাই বিজেপির সাংগঠনিক পদে রয়েছেন। তিনটি গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায় তাঁরাই বিজেপির মূল শক্তি। একসময় তাঁদের নামে এলাকা কাঁপত। এখন তাঁরা বিজেপিকে জেতানোর পণ করে লড়াই করছেন। ২০১৯লোকসভা ভোটের সময় থেকেই শুনিয়া সংলগ্ন এলাকার সিপিএম নেতা-কর্মীরা দলত্যাগ করে বিজেপিতে নাম লেখানো শুরু করেন। সুবল বর বলেন, ২০২১সালে দাদার অনুগামী হিসেবে পরিচিত এই তল্লাটে দু’জন নেতা দেশপ্রাণের বসন্তিয়ায় বিজেপির সভায় যোগদানের জন্য গিয়েছিলেন। আমাদের চরম বিরোধিতায় তাঁরা যোগ দিতে পারেননি। এখানে আমাদের কথাই দলের শেষ কথা। দেশপ্রাণের নামালডিহার বাসিন্দা পেশায় অবসরপ্রাপ্ত স্বাস্থ্যকর্মী সুবিমল জানা বলেন, সিপিএম করার সময় ওই নেতাদের স্বরূপ আমরা দেখেছি। তাই ওরা জার্সি বদল করলেও মানুষের আস্থা পাবে না। আঁউরাই পঞ্চায়েতের করপুরার বাসিন্দা রঞ্জিত গিরি বলেন, আমি আগে সিপিএম করতাম। এখন এই তল্লাটে সিপিএম নেই। তাই বিজেপি করি। কর্মসূত্রে কেরলে থাকি। ভোটের জন্য এসেছি। ভোট মিটে গেলে আবার কেরলে ফিরব। দেশপ্রাণ ব্লক তৃণমূল কংগ্রেসের সহ সভাপতি দেবাশিস ভুঁইয়া বলেন, সুবল বর, অজয় সামাই, অমর গুড়িয়াদের এই এলাকার মানুষজন ভালো করেই চেনেন। তাঁদের নতুন করে চেনার কিছু নেই। পঞ্চায়েত ভোটে ওদের মানুষ প্রত্যাখ্যান করেছেন। লোকসভাতেও বিজেপিকে এখানকার মানুষ বর্জন করবেন।
  • Link to this news (বর্তমান)