• ভিভিপ্যাট কত? কারচুপি বিতর্কে কুলুপ কমিশনের, ৭ কোটি ভোটার বাড়লেও ইভিএম একই!
    বর্তমান | ২২ এপ্রিল ২০২৪
  • সন্দীপ স্বর্ণকার, নয়াদিল্লি: লোকসভা নির্বাচনের নির্ঘণ্ট ঘোষণার বহু আগে থেকেই বিরোধীরা দাবি তুলে এসেছে, ভোটে কারচুপি ঠেকাতে এবং স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে ১০০ শতাংশ ভিভিপ্যাটের ব্যবস্থা করতে হবে। অর্থাৎ, যে ক’টি ইভিএমে ভোটদান হবে, তার সম সংখ্যক ভিভিপ্যাট থাকলে স্লিপ থেকে ভোটাররা বুঝতে পারবেন, তাঁদের ভোট সঠিক জায়গায় পড়ল কি না। ভোটপর্ব শুরু হয়ে গিয়েছে। কমিশনও নির্বাচন পরিচালনাকে ‘গোল্ড স্ট্যান্ডার্ড’ বলে আখ্যা দিয়ে নিজেরাই নিজেদের পিঠ চাপড়াচ্ছে। কিন্তু সুষ্ঠু ও কারচুপিহীন ভোট নিশ্চিত করতে ভিভিপ্যাট নিয়ে যে প্রশ্ন বিরোধীরা বারবার তুলছে, সে ব্যাপারে মুখে কুলুপ এঁটেছে কমিশন। তারা জানাতেই পারছে না, এই ভোটে কত সংখ্যক ভিভিপ্যাট ব্যবহার করা হচ্ছে। একইসঙ্গে উঁকি মারছে আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন, ২০১৯ সালের তুলনায় ৭ কোটি ভোটার বাড়লেও ইভিএম এবং ভিভিপ্যাটের কি বেড়েছে? কমিশন বিস্তারিত হিসেব না দেওয়ায় হিসেব কিন্তু মিলছে না। আর তাই প্রশ্ন উঠছে, গতবারের তুলনায় বেড়ে যাওয়া ১৫ হাজার বুথের ক্ষেত্রে কী ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে?

    ইভিএমে থাকে মূলত দু’টি ইউনিট। ব্যালট (বিইউ) ও কন্ট্রোল ইউনিট (সিইউ)। ব্যালট ইউনিটে ভোটাররা তাঁদের পছন্দের প্রার্থীর নাম, ছবি আর প্রতীক চিহ্নের পাশে থাকা বোতাম টিপে ভোট দেন। সেই ভোট জমা হয় কন্ট্রোল ইউনিটে। সেটিই গণনার দিন খোলা হয়। ভোটারদের ভোট ঠিক জায়গায় যাচ্ছে কি না, সেই সন্দেহ নিবারণে ব্যালট ইউনিটের সঙ্গে যুক্ত থাকে ভিভিপ্যাট (ভোটার ভেরিফায়েবল পেপার অডিট ট্রেইল) মেশিন। সাত সেকেন্ড দৃশ্যমান হয়ে সেই স্লিপ মেশিনে জমা হয়। আর এটি নিয়েই সন্দেহ। বিরোধীদের দাবি, কন্ট্রোল ইউনিটের ভোট সংখ্যা এবং স্লিপের ভোট মিলছে কি না, সেটা গুনতে হবে। যদিও কমিশন তাতে রাজি নয়। তাই এবার লোকসভা নির্বাচনে ভিভিপ্যাট ইস্যু বড় হয়ে দেখা দিয়েছে। অথচ সেই মেশিনই কত ব্যবহার হচ্ছে, স্পষ্ট করেনি কমিশন। 

    নির্বাচন কমিশনের তথ্য বলছে, ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে সাত দফায় ভোটগ্রহণ কেন্দ্র ছিল ১০ লক্ষ ৩৫ হাজার। বিইউ ব্যবহার হয়েছিল ২৩.৩ লক্ষ। সিইউ ১৬.৩৫ লক্ষ। আর ভিভিপ্যাট ১৭.৪ লক্ষ। সবটা যোগ করলে ৫৭.০৫ লক্ষ। ভোটারের সংখ্যা ছিল ৮৯ কোটি ৮৭ লক্ষ ৬৮ হাজার ৯৭৮ জন। এবার লোকসভা এবং সঙ্গে চার রাজ্যের বিধানসভা ভোটের জন্য ভোটগ্রহণ কেন্দ্রের সংখ্যা সাড়ে ১০ লক্ষ। ভোটার ৯৬ কোটি ৮৮ লক্ষ ২১ হাজার ৯২৬ জন। আর ইভিএমের সংখ্যা? নির্বাচন কমিশন বিবৃতিতে জানিয়েছে ৫৫ লক্ষ। ব্যালট ইউনিট, কন্ট্রোল ইউনিট আর ভিভিপ্যাট মেশিনের সংখ্যা কত? আলাদা করে জানায়নি। এ ব্যাপারে নির্বাচন কমিশনের জনসংযোগ আধিকারিক বি নারায়ণন কিংবা কমিশনের বিবৃতি প্রকাশে প্রেস ইনফরমেশন ব্যুরোর দায়িত্বপ্রাপ্ত আধিকারিক রাজেন্দ্র প্রসাদকে বারবার জিজ্ঞাসা করেও কোনও জবাব মেলেনি। চুপ থাকা নিয়েই বাড়ছে রহস্য। 

    উল্লেখযোগ্য বিষয় হল, ইভিএম বলতে স্রেফ বিইউ আর সিইউ যোগ করলে গতবার সংখ্যাটি দাঁড়ায় ৩৯.৬৫ লক্ষ। এবার যা ৫৫ লক্ষ। বলছে কমিশনই। সেখানেও রয়ে যাচ্ছে সওয়াল। গতবারের চেয়ে মাত্র ১৫ হাজার ভোটদান কেন্দ্র বাড়লে কেন প্রয়োজন হচ্ছে অতিরিক্ত ১৫.৩৫ লক্ষ ইভিএম (বিইউ এবং সিইউ)? আবার ভিভিপ্যাট মেশিন যোগ করলেও গতবারের সঙ্গে হিসেব মিলছে না। গতবারের চেয়ে মোট সংখ্যাটি হয়ে যাচ্ছে ২.০৫ লক্ষ  কম। তাই ধোঁয়াশা থেকেই যাচ্ছে।
  • Link to this news (বর্তমান)