• ক্যান্সার সারিয়ে দু’জনকে চাকরিও দিল হাসপাতাল
    এই সময় | ২২ এপ্রিল ২০২৪
  • এই সময়: একজন কৈশোরে আর একজন যৌবনের গোড়াতেই পড়েছিলেন ক্যান্সারের কবলে। তবে যথাসময়ে ডাক্তারের হস্তক্ষেপে প্রাণসংশয় এড়ানো গিয়েছে। তবে শুধু তাঁদের সারিয়ে তোলাই নয়। অভিনব নজির গড়ল ঠাকুরপুকুরের বেসরকারি এক ক্যান্সার হাসপাতাল। ক্যান্সারজয়ী ওই দুই কর্মহীন যুবক-যুবতীর কর্মসংস্থানের ব্যবস্থাও নিজেদের হাসপাতালে করে দিয়েছেন কর্তৃপক্ষ।এখন ওই দু’জনের উপার্জনেই দিব্যি চলছে দুটো সংসার। বেনজির ঘটনাটি ঘটেছে সরোজ গুপ্ত ক্যান্সার সেন্টার অ্যান্ড রিসার্চ ইনস্টিটিউটে। ২০১৮-য় এগরার প্রত্যন্ত গ্রামের বাসিন্দা সঞ্চয়িনি গিরি রক্তের ক্যান্সারে আক্রান্ত হন। তখন তিনি একাদশের ছাত্রী। লম্বা চিকিৎসায় এক সময়ে তাঁর ক্যান্সারমুক্তি ঘটে। বাবা-মা-বোন আর তাঁর সংসারে কষ্ট করে জিএনএম পাস করেন তিনি বছর দুয়েক আগে।

    তাঁকে নার্স হিসেবে নিয়োগ করেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। ঠাকুরপুকুরের ওই ক্যান্সার হাসপাতালের অধিকর্তা অর্ণব গুপ্ত জানাচ্ছেন, যে ওয়ার্ডে এক সময়ে চিকিৎসা চলেছিল সঞ্চয়িনির, সেই ওয়ার্ডেই স্টাফ নার্স হিসেবে কর্মরত তিনি। উচ্ছ্বসিত তরুণী বলছেন, ‘আমি চেয়েছিলাম এখান থেকেই চাকরি জীবন শুরু করতে। আমার মতো অনেক রোগীর সেবা করতে পারব বলে।’

    এর ঠিক এক বছর আগে, ২০১৭-য় মলদ্বারের ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে ঠাকুরপুকুরের ওই বেসরকারি ক্যান্সার হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য আসেন ফলতার নিম্নবিত্ত পরিবারের তরুণ সৌমিত্র হালদার। তখন তাঁর বয়স ২৩, ভর্তি হয়েছেন বাংলা এমএ-তে। এত কম বয়সে মলদ্বারের ক্যান্সার চট করে সারে না। তাই চিন্তায় ছিলেন চিকিৎসকরাও। কেমোথেরাপি, রেডিয়েশন, সার্জারি—লম্বা চিকিৎসায় সেরে ওঠেন তিনি। শেষ করেন এমএ।

    তবে ঠিকঠাক চাকরি পাচ্ছিলেন না। ওই যুবকের অনুরোধে এগিয়ে আসেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। এখন সরোজ গুপ্ত ক্যান্সার হাসপাতালেই সিটি স্ক্যান বিভাগে ডেটা এন্ট্রির কাজ করেন তিনি। সেই উপার্জনেই বাবা, মাকে নিয়ে তিন জনের সংসার টানছেন সৌমিত্র। তাঁর কথায়, ‘স্যালারিটা অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ। তবে এই চাকরিটা পেয়ে আমি খুব খুশি অন্য কারণে। এখানেই আমি মারণরোগ থেকে সেরে উঠেছি। আমি জানি, ঠিক সময়ে চিকিৎসা হলে মৃত্যু এড়ানো যায়।

    তাই আমার মুখ থেকে যখন এই অভিজ্ঞতার কথা শোনেন সিটি স্ক্যান করাতে আসা ক্যান্সার রোগীরা, তখন তাঁরা মোটিভেটেড হন। বিশ্বাস করতে শুরু করেন, তিনিও সেরে উঠবেন।’ তিনি জানাচ্ছেন, সিটি স্ক্যান বিভাগে রিসেপশনিস্ট আর কম্পিউটার অপারেটরের কাজ করার পাশাপাশি রোগীদের মনোবল জোগানোর কাজটাও তিনি পাশাপাশি করে তৃপ্ত।

    তবে ওঁদের দু’জনের লড়াইকেই বাহবা দিচ্ছেন অর্ণববাবু। যে ভাবে আর্থিক অবস্থা এবং গ্রামের লোকের ক্যান্সার নিয়ে ছুৎমার্গের মধ্যে দিন কাটিয়েও ওঁরা যুদ্ধটা চালিয়ে গিয়েছেন, তা কুর্নিশ করার মতো। অর্ণববাবু বলেন, ‘ওঁদের কারও অসুখই খুব ভালো জায়গায় ছিল না। তবে ওঁদের মনোবল সঙ্গত করেছে চিকিৎসকদের আগ্রাসী চিকিৎসা করার পথে। যেখানে ওঁরা সেরে উঠেছেন, সেখানেই ওঁরা যখন কাজ করার ইচ্ছাপ্রকাশ করেন, ওঁদের যোগ্যতা বিচার করে আমরা আর না করতে পারিনি। ওঁরা দু’জনেই খুব ভালো কাজ করছেন।’
  • Link to this news (এই সময়)