এই সময়: বধূ নির্যাতনের অভিযোগে ভারতীয় দণ্ডবিধির ৪৯৮এ ধারার অপব্যবহার হচ্ছে বলে বিভিন্ন সময়ে সুপ্রিম কোর্ট ও একাধিক হাইকোর্ট পুলিশকে সতর্ক হতে বলেছে। বিবাহিত মহিলাদের গার্হস্থ্য হিংসার হাত থেকে সুরক্ষার জন্য এই আইন হলেও তা যেন অকারণে কাউকে হেনস্থা করার জন্য ব্যবহৃত না-হয়, সেই ব্যাপারেও বারবার বার্তা দিয়েছে আদালত।এবার একটি বধূ নির্যাতনের মামলায় মিথ্যা অভিযোগ করা হয়েছে—এই যুক্তিতে মামলা খারিজের পাশাপাশি অভিযোগকারীকে পাঁচ লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণের নির্দেশ দিল সুপ্রিম কোর্ট। ঘটনার সূত্রপাত বছর নয়েক আগে। পাত্রী রাজস্থানের উদয়পুরের তৎকালীন ডিএসপি, হরিয়ানার হিসারের বাসিন্দা পাত্র পেশায় চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্ট। ২০১৫-এর মার্চে উদয়পুরে দু’জনের বিয়ে হয়।
অভিযোগ, বিয়ের পর থেকেই নাকি পণের দাবিতে স্বামী শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন চালাতেন স্ত্রীর উপর। বিয়ের সাত মাস পরে প্রথমে হিসার থানায় স্বামীর বিরুদ্ধে বধূ নির্যাতনের মামলা রুজু হয়। তার দিন পাঁচেকের মধ্যে উদয়পুর মহিলা থানাতেও পাত্রের বিরুদ্ধে একই অভিযোগে মামলা দায়ের করেন মেয়ের বাবা। অভিযুক্ত স্বামী পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হন। পরে জামিন পান।
কিন্তু আদালতে চলতে থাকে মামলা। হিসারের আদালত উপযুক্ত তথ্যপ্রমাণের অভাবে অভিযুক্তকে বেকসুর খালাস করলেও উদয়পুরের আদালতে একটি মামলা চলতে থাকে অভিযুক্তের বিরুদ্ধে। এর বিরুদ্ধে প্রথমে রাজস্থান হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয়েছিলেন স্বামী। হাইকোর্ট সেই আর্জি খারিজ করে দিলে তিনি রায় চ্যালেঞ্জ করে শীর্ষ আদালতে আবেদন করেন।
সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি বিক্রম নাথ ও বিচারপতি প্রশান্তকুমার মিশ্রের ডিভিশন বেঞ্চ সেই আবেদনের উপর শুনানি শেষ করে কিঞ্চিৎ উষ্মা প্রকাশ করে বলেছে, ‘যেভাবে অসৎ উদ্দেশ্যে এবং অভিযুক্ত পক্ষকে হেনস্থা করার জন্য স্টেট মেশিনারিকে ব্যবহার করা হয়েছে, আমরা তা অনুমোদন করছি না। এবং মামলাকারীকে (স্ত্রীর বাবাকে) জরিমানা করা হচ্ছে।’
এক্ষেত্রে শীর্ষ আদালত পাঁচ লক্ষ টাকা জরিমানা ধার্য করেছে। বেঞ্চের নির্দেশ, এরমধ্যে আড়াই লক্ষ টাকা পাবেন স্বামী এবং বাকি টাকা সুপ্রিম কোর্টের লিগ্যাল সার্ভিসেস কমিটির অ্যাকাউন্টে যাবে। এরপরে উদয়পুরে দায়ের হওয়া এফআইআরটিও খারিজ করেছে সর্বোচ্চ আদালত।
কেন এক্ষেত্রে জরিমানা ও মামলা খারিজের সিদ্ধান্ত নিল সুপ্রিম কোর্ট?
বেঞ্চ তার রায়ে স্পষ্ট বলেছে, যেভাবে হিসারে একটি এফআইআর দায়ের করার পরে সেই তথ্য না-জানিয়ে উদয়পুরে একই অভিযোগে একই ধরনের মামলা করা হয়েছে, সেটা মোটেই ঠিক হয়নি। এখান থেকে পরিষ্কার, মামলাকারীর আসল উদ্দেশ্যই ছিল অভিযুক্তকে হেনস্থা করা। এই কথা বলতে গিয়ে রাজস্থান পুলিশ ও রাজস্থান হাইকোর্টের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছে।
সুপ্রিম কোর্ট বলেছে, ‘উদয়পুর পুলিশের জানা উচিত ছিল, যে একই অভিযোগে হিসারে অন্য একটি মামলা দায়ের হয়েছে। হাইকোর্ট ও রাজস্থান পুলিশের এই অভিযোগপত্র ভালো করে পড়া উচিত ছিল।’ শীর্ষ আদালতের বক্তব্য, এক্ষেত্রে অভিযোগকারী স্ত্রী ও তাঁর বাবা অভিযোগ দায়েরের ক্ষেত্রে তাঁদের ক্ষমতার অপব্যবহার করেছেন এবং অভিযুক্ত স্বামী হিসারে একই অভিযোগে একদফা ট্রায়ালের মুখোমুখি হওয়ার পরে ফের উদয়পুরে তাঁকে টেনে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।