• প্রকৃতি বদলে বাংলা ক্রমশ 'তিব্বত' হচ্ছে, তাই এই অসহ্য গরম! বলছেন বিশেষজ্ঞরা...
    ২৪ ঘন্টা | ২২ এপ্রিল ২০২৪
  • অয়ন ঘোষাল: তারপর বেড়ালটা খানিকক্ষণ আকাশের দিকে তাকিয়ে হঠাৎ বলে উঠল, 'গরম লাগে তো তিব্বত গেলেই পার।' আমি বললাম, কিন্তু বললেই তো আর যাওয়া যায় না?' বেড়াল বলল, 'কেন? সে আর মুশকিল কি?' আমি বললাম, 'কি করে যেতে হয় তুমি জানো?' বেড়াল একগাল হেসে বলল, 'তা আর জানিনে? কলকেতা, ডায়মন্ড হারবার, রানাঘাট, তিব্বত,- ব্যাস্‌! সিধে রাস্তা, সওয়া ঘণ্টার পথ, গেলেই হল।' কলকতারা আবহাওয়া সুকুমার রায়ের হ য ব র ল- কে মনে করিয়ে দিচ্ছে। কারণ দক্ষিণবঙ্গের আবহাওয়া এখন টিবেটিয়ান প্লেট বা তিব্বতি আবহাওয়া মন্ডলীর মতো আচরণ করছে। যা এতদিন করেনি। 

    এপ্রিলেই দীর্ঘ তাপপ্রবাহ কেন? কি বলছেন বিশেষজ্ঞরা? ২০২৪ সাল এল নিনো বা লা নিনা বছর হিসেবে চিহ্নিত না হওয়া সত্ত্বেও এই অকাল দীর্ঘ দহন জ্বলার কারণ বিশ্লেষণ করলেন বিশেষজ্ঞ। জার্মান আবহাওয়া বৈজ্ঞানিকরা বিশ্বের আবহাওয়াকে যে ৭ টি জোনে ভাগ করেছেন, তার মধ্যে তিব্বতি জোনের ফিচার বা লক্ষণ হল অত্যন্ত শুষ্ক এবং অতিরিক্ত তাপমাত্রা যুক্ত আবহাওয়া। হিমালয়ের সুউচ্চ দেওয়ালে মধ্যে এশিয়ার যে কোনও অঞ্চলে সৃষ্ট জলীয় বাষ্প বাধা পায় এবং আটকে যায়। এর সরাসরি প্রভাব পড়ে তিব্বতে। ঠিক একই পরিস্থিতির শিকার দক্ষিণবঙ্গের পশ্চিমাঞ্চল। এক্ষেত্রে হিমালয় নয়। ফ্যাক্টর হয়ে দাঁড়িয়েছে ছত্তিশগড়ের দণ্ডকারণ্য।পশ্চিমবঙ্গে মৌসুমী বায়ু ছাড়া অন্যান্য যে কারণে কালবৈশাখী বা শিলাবৃষ্টি হয়, তা হল ঝাড়খণ্ডের রাঁচি বেল্টের ওপর তৈরি সিস্টেমের ওপর ভিত্তি করে। আরব সাগর এবং পশ্চিম মধ্য বঙ্গোপসাগরে তৈরি হওয়া দুটি আলাদা তাপমাত্রার জলীয় বাষ্প পরস্পরের দিকে এগোয়। তারা ঝাড়খণ্ড বেল্টে বাধা পায়। আরব সাগরের দিক থেকে পূর্ব দিকে আসা বাষ্পের শক্তি বঙ্গোপসাগরের বাষ্পের শক্তির থেকে বেশি হয়। তাই গোটা সিস্টেম টা ক্রমাগত পূর্ব দিকে সরতে শুরু করে। যে জায়গায় বাধা পায়, সেখানে থিতু হয় এবং বৃষ্টিপাত ঘটায়। এবার পরিস্থিতি ঠিক উল্টো।এবার বঙ্গোপসাগরের জলীয় বাষ্প অত্যন্ত দুর্বল। ফলে আরব সাগরের জলীয় বাষ্প ঝাড়খণ্ড বেল্ট পর্যন্ত এগোচ্ছে না। থমকে যাচ্ছে দণ্ডকারণ্য এবং ছোটোনাগপুর মালভূমির লাগোয়া কোনও না কোনো জায়গায়। এর ফলে ছত্তিশগড় এবং মধ্যপ্রদেশ বৃষ্টি পাচ্ছে। বঞ্চিত হচ্ছে পশ্চিমবঙ্গের গাঙ্গেয় এবং পশ্চিমাঞ্চলের জেলা। এপ্রিলে সাধারণত যা ঘটেনা। আগামী অন্ততঃ আরও ১০ থেকে ১২ দিন বঙ্গোপসাগরের জলীয় বাষ্প দুর্বল থাকবে। তারপর একটা সামান্য সম্ভাবনা আছে। পূর্ব বাংলাদেশের চাকমা হিলস এলাকা থেকে একটি সিস্টেম পশ্চিমবঙ্গের দিকে এগোতে পারে। যদি এই সিস্টেম মাঝে কোথাও বাধা না পায়, তাহলে তা উত্তরবঙ্গের সমতলের জেলার দিকে যেতে পারে। আর যদি উচ্চচাপ বলয়ে বাধা পেয়ে সেটি ঢাকার দিকে টার্ন করে তাহলে তার অভিমুখ হবে ঢাকা। তারপর সেটি আরও পশ্চিম দিকে অগ্রসর হয়ে আসতে পারে হয় গাঙ্গেয় দক্ষিণবঙ্গের দিকে অথবা উপকূলের জেলার দিকে। 
  • Link to this news (২৪ ঘন্টা)