তাপপ্রবাহে পুড়ছে ভারত, ২০২৪-এ রেকর্ড ভাঙা গরমের ভবিষ্যদ্বাণী বিজ্ঞানীদের
এই সময় | ২২ এপ্রিল ২০২৪
২০২৩ সাল বিশ্বের ইতিহাসে সবচেয়ে উষ্ণ বছরের তকমা পেয়েছিল। তবে মনে করা হচ্ছে, ২০২৪ সেই রেকর্ড হেসেখেলে ভেঙে ফেলবে। নয়া রেকর্ড তৈরি হতে পারে চলতি বছর। সমস্ত রেকর্ড চুরমার করে সর্বকালের সর্বাধিক উষ্ণ বছর হতে চলেছে এটি। এমনটাই মনে করছেন বিজ্ঞানী এবং জলবায়ু বিশেষজ্ঞরা।বিজ্ঞানীদের আশঙ্কাগত বছর বিজ্ঞানীদের গণনা অনুযায়ী, ০.২ ডিগ্রি তাপমাত্রা বেড়ে গিয়েছিল পৃথিবীতে। নাসার জলবায়ু বিশেষজ্ঞ গোবিন স্মিট বলেন, 'গত বছর বিজ্ঞানীরা হতবাক হয়ে গিয়েছিলেন। তবে আমার ধারণা চলতি বছর ২০২৩-এর থেকেও বাড়বে সার্বিক তাপমাত্রা। এবার আমরা আগে থেকেই নিশ্চিত ২০২৪ সাল বিশ্বের সমস্ত রেকর্ড ভেঙে ফেলবে।'
এই জলবায়ু বিশেষজ্ঞ আরও বলেন, 'বিশ্বে বিগত ৪০ বছরে আবহাওয়ার বদলের উপর গুরুত্ব সহকারে গবেষণা চালানো হচ্ছে। আমরা স্যাটেলাইট ডেটাও জোগাড় করছি। চার দশকের ইতিহাসে বৈজ্ঞানিকদের রীতিমতো চমকে দিয়েছে বর্তমান আবহাওয়ার গতিপ্রকৃতি। গত বছর আমাদের সমস্ত গণনা বিফলে গিয়েছিল। ২০২৩ সালের প্রথম মাসে রেকর্ড ভাঙা গরম পড়েছিল গোটা বিশ্বে। পারদ পতনের নামগন্ধও ছিল না। আর এই সবটাই হয়েছে এল নিনোর জন্য। এখন আমরা গরম এবং তাপমাত্রা বৃদ্ধি পাওয়ার একটি অজ্ঞাত ক্ষেত্রে পড়ে গিয়েছি। আমরা জানি না এরপর তাপমাত্রা ঠিক কতটা বৃদ্ধি পাবে। আদৌ কমবে কি না, তাও জানা নেই কারও। চার বছরে এমন এমন ঘটনা ঘটেছে যাতে হু হু করে বেড়েছে পৃথিবীর সার্বিক তাপমাত্রা। ২০২০ সালে বাতাসে এয়ারোসোলের মাত্রা অত্যধিক পরিমাণে বৃদ্ধি পেয়েছিল।'
২০২২ সালে হুংকা টোংগা আগ্নেয়গিরি ফেটে যাওয়ার কারণে মাত্রাতিরিক্ত গরম পড়েছিল। ২০২৩ সালে এল নিনোর আগমণ, সূর্যের তাপ বেড়ে যাওয়া সোলার সাইকেলের মধ্যে সর্বাধিক তাপমাত্রা বৃদ্ধির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এর জেরেই বন্যা, করা, দাবানল, ঝড়বৃষ্টি হচ্ছে ঘন ঘন।
কী এই এল নিনো?এল নিনো আসলে ENSO জলবায়ু সাইকেলের অন্তর্গত। ভূমধ্য রেখার পূর্ব দিকে এগিয়ে চলা গরম হাওয়াই হল এল নিনো। যা প্রশান্ত মহাসাগরের উপরিভাগকে উষ্ণ করে তোলে। এরপর এই উষ্ণ জলস্তর ভারত এবং আমেরিকার দিকে অগ্রসর হয়। যা সার্বিকভাবে আবহাওয়াকে গরম করে তোলে।
এল নিনোর হট মেকানিজম তাপমাত্রা বৃদ্ধির প্রক্রিয়াকে দুনিয়াতে বদলে ফেলেছে। এর জেরে সমুদ্রের উপরিভাগের তাপমাত্রা বৃদ্ধি পেতে শুরু করে। এর জেরে আবহাওয়ার ঘন ঘন পরিবর্তন হতে থাকে। বর্তমানে যে এল নিনো চলছে তা ২০২৩ সালেই শুরু হয়েছিল। চলতি মরশুমে সর্বোচ্চ মাত্রায় পৌঁছে যায় এল নিনো। গোটা বিশ্বেই ভয়ানক গরম পড়েছে। এল নিনোর দোসর হয়েছে কার্বোন ডাই অক্সাইড এবং গ্রিন হাউস গ্যাস। যা জলবায়ু পরিবর্তন এবং তাপমাত্রা বৃদ্ধিতে আরও সহায়ক ভূমিকা পালন করছে।
চলতি বছর মাত্রাতিরিক্ত গরম নিয়ে যে ভবিষ্যদ্বাণী হয়েছে যা ভয়ানক। জলবায়ু মডেলগুলি থেকে আশঙ্কা করা হচ্ছে, চলতি বছর বিশ্বের ইতিহাসে সর্বাধিক উষ্ণ বছর হতে চলেছে। এর কারণ এক এবং একমাত্র এল নিনো। পৃথিবীর তাপমাত্রা ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে এই ২০২৪ সালে।
ভারতে এল নিনোর সবচেয়ে বেশি প্রভাব পড়বে। এল নিনোর জেরে বর্ষাকাল দুর্বল হয়ে যাবে। তবে ভারতের মৌসম বিভাগ যদিও আশাবাদী স্বাভাবিকের থেকে এ বছর বেশি বৃষ্টি হবে।