• করিম ও কানাইয়াকে এক হয়ে লড়ার বার্তা মুখ্যমন্ত্রীর
    বর্তমান | ২৩ এপ্রিল ২০২৪
  • সন্দীপন দত্ত, রায়গঞ্জ:  লক্ষ্য একটাই। রাজ্য থেকে বিজেপিকে ধুয়েমুছে সাফ করতে হবে। রায়গঞ্জ আসনে প্রথমবার ঘাসফুল ফোটাতে তাই বর্ষীয়ান আব্দুল করিম চৌধুরী ও জেলা সভাপতি কানাইয়ালাল আগরওয়ালকে ঐক্যবদ্ধভাবে ভোটে লড়াইয়ের বার্তা দিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এমনভাবে লড়াই করুন, যাতে প্রতিপক্ষ সুযোগই না পায়।

    এদিন করণদিঘিতে সভামঞ্চে উঠে প্রথমেই করিম ও কানাইয়ার সঙ্গে কথা বলেন দলনেত্রী। সে প্রসঙ্গে কানাইয়ার মন্তব্য, নেত্রী আমাদের দু’জনকে বলেছেন, রায়গঞ্জ সিট জিততেই হবে। মার্জিন কতটা বেশি করা যায়, সেই চেষ্টা করো তোমরা।

    করিমের কথায়, দলকে জেতাতে হবে। দলের স্বার্থে সবাইকে এক হয়ে লড়তে হবে।  মমতা এদিন বলেছেন, ঠিক করে ভোট করে অনেক লিড দিতে হবে।

    মঞ্চ থেকে নামার সময়ও দু’জনের সঙ্গে কথা বলতে দেখা যায় মমতাকে। গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব, দলের একাংশের বিদ্রোহ নিয়ে জেরবার উত্তর দিনাজপুর জেলা বিজেপি। তার উপর বিদায়ী সাংসদ দেবশ্রী চৌধুরী পাঁচ বছর কাজ না করায় জেলায় গেরুয়া বিরোধী হাওয়া প্রবল। অন্যদিকে, দলের একাংশের মধ্যে দ্বন্দ্ব কাটিয়ে এককাট্টা তৃণমূল। এই নির্বাচনে বিরোধীরা যাতে কোনওভাবে দাগ না ফোটাতে পারে, সে ব্যাপারে নির্দেশ দিয়েছেন তৃণমূল সুপ্রিমো। 

    ইতিমধ্যেই অবশ্য পুরনো বিবাদ ভুলে দলের স্বার্থে একজোট হয়ে ময়দানে নেমেছেন করিম-কানাইয়া। তৃণমূল সুপ্রিমো ও দলের সেকেন্ড ইন কমান্ড অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় সহ বিভিন্ন সভায় তাঁদের পাশাপাশি বসে থাকতে দেখা যাচ্ছে। দু’জনের এই কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়া দেখে বাড়তি মনোবল পাচ্ছেন নিচুতলার কর্মী, সমর্থকরা। 

    রায়গঞ্জ লোকসভা কেন্দ্র এক সময় প্রয়াত কংগ্রেস নেতা প্রিয়রঞ্জন দাশমুন্সির গড় হিসেবে পরিচিত ছিল। ২০১৪ সালে সিপিএম নেতা মহম্মদ সেলিমের হাত ধরে রায়গঞ্জ হাতছাড়া হয় কংগ্রেসের। এরপর ২০১৯ লোকসভা নির্বাচনে বিজেপির দখলে যায় রায়গঞ্জ। প্রথমবার রায়গঞ্জ লোকসভা কেন্দ্র জয় করতে জেলা তৃণমূল যে ঐক্যবদ্ধভাবে ময়দানে ঝাঁপিয়েছে, তার সবথেকে বড় প্রমাণ জেলা সভাপতি কানাইয়ার সঙ্গে করিমের সারাক্ষণ কাছাকাছি থাকা।

    সোমবার রায়গঞ্জ লোকসভা কেন্দ্রে তৃতীয় দফায় জোড়া নির্বাচনী জনসভা করেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি প্রথম গিয়েছিলেন চাকুলিয়ায়। দ্বিতীয় সভা করেন করণদিঘিতে। যে মঞ্চে প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত পাশাপাশি দেখা যায় করিম-কানাইয়াকে।  যা নিয়ে জোর চর্চা শুরু হয়েছে রাজনৈতিক মহলে। এ প্রসঙ্গে তৃণমূল জেলা সভাপতি কানাইয়ালাল আগরওয়াল বলেন, আমরা এক সঙ্গেই আছি। এক সঙ্গেই কাজ করছি। সবাই মিলে এবার রায়গঞ্জ আসনও আমরা দখল করব।

    জেলায় তৃণমূল শিবিরে করিম চৌধুরী বিদ্রোহী নেতা হিসেবে পরিচিত। দলের গোষ্ঠী কোন্দলও দীর্ঘদিনের। একদিকে কানাইয়ার গোষ্ঠী। বিপক্ষে করিম চৌধুরী। দু’জনেই একসময় কংগ্রেস করতেন। তারপর তাঁরা তৃণমূলে যোগ দেন। করিমের সঙ্গে মাঝে দলের দূরত্ব বাড়ে। ওই প্রবীণ নেতা এতটাই বিদ্রোহী হয়ে উঠেছিলেন যে, পঞ্চায়েত ভোটের সময় নির্দল প্রার্থীও দাঁড় করিয়েছিলেন তৃণমূলের বিরুদ্ধে। সেই সঙ্গে বিভিন্ন ইস্যুতে দলের নেতৃত্বকে আক্রমণ করতেও ছাড়েননি। রায়গঞ্জ কেন্দ্র জয়ের লক্ষ্যে মমতা ঐক্যবদ্ধ থাকার বার্তা দেওয়ার পর অবশ্য করিম-কানাইয়া অনেকটাই কাছাকাছি এসেছেন। তাঁদের পাশাপাশি বসে থাকতেও দেখা যাচ্ছে। দলনেত্রীর দ্বিতীয় দফার নির্বাচনী জনসভাতেও একই ছবি দেখা গিয়েছে।  এদিন, মঞ্চে ওঠার আগে তাঁরা কার্যত একই সুরে জয়ের বার্তা দিয়েছেন। ভোটের মাত্র চারদিন আগে এই ছবি নিঃসন্দেহে তৃণমূলের কাছে তাত্পর্যপূর্ণ।
  • Link to this news (বর্তমান)