এই সময়: গর্ভসঞ্চার হওয়ার পরেও বার বার মিসক্যারেজ হয়ে যাচ্ছিল তরুণীর। স্তনে ক্যান্সার সন্দেহে মহিলার প্রায় শুরুই হতে বসেছিল কেমোথেরাপি। ড্রাই আইজ়ের পাশাপাশি চোখে ভয়াবহ প্রদাহ কিছুতেই সারছিল না যুবকের। ত্বকে আলসার আর সেই সঙ্গে ফুসফুসে সংক্রমণের আলাদা আলাদা চিকিৎসা হচ্ছিল কিশোরীর।পরে এই চারটি ক্ষেত্রেই দেখা যায়, নেপথ্যে ভিলেন হলো অটো-ইমিউন ডিজ়িজ়। অর্থাৎ, এমন এক শারীরিক অবস্থা, যখন শরীরের ইমিউনিটি বা রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা ভুল করে বহিরাগত শত্রুর বদলে হামলা চালায় দেহেরই বিভিন্ন অঙ্গে। যার একটা বড় অংশ রিউম্যাটোলজি। কিন্তু এর চিকিৎসায় শুধু ইমিউন সিস্টেমের চিকিৎসা করলেই ষোলো আনা সাফল্য মেলে না সব সময়ে। বরং, তার সঙ্গেই দরকার হয় চিকিৎসাবিজ্ঞানের বিভিন্ন অঙ্গনির্ভর বিশেষ শাখার চিকিৎসার।
যেমন, কখনও অপথ্যালমোলজি তো কখনও নেফ্রোলজি— কখনও আবার কার্ডিয়োলজি কিংবা পালমোনোলজি। অথচ এমন একটি সুসংহত ব্যবস্থার অভাব বড় প্রকট। এ বার সেই আঁধার ঘুচিয়ে পূর্ব ভারতে তো বটেই, সম্ভবত দেশেও এই প্রথম একছাদের নীচে কলকাতাতেই খুলতে চলেছে ইমিউনোলজি আর রিউম্যাটোলজির স্পেশালাইজ়্ড চিকিৎসা কেন্দ্র।
রাজারহাটের সেই ‘এশিয়ান ইনস্টিটিউট অফ ইমিউনোলজি অ্যান্ড রিউম্যাটোলজি’ (এআইআইআর) প্রতিষ্ঠানে থাকবেন ৪০ জন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক, যাঁদের তত্ত্বাবধানে ‘মাল্টি-ডিসিপ্লিনারি অ্যাপ্রোচ’-এর মাধ্যমে চলবে ১৮টি অর্গ্যান-স্পেসিফিক অটো-ইমিউনি ডিজ়িজ় ক্লিনিক। মে মাসের প্রথম সপ্তাহে ওই চিকিৎসা প্রতিষ্ঠান চালু হবে বলে সোমবার আনুষ্ঠানিক ভাবে ঘোষণা করা হয় একটি সাংবাদিক বৈঠকে।
এআইআইআর-এর নেপথ্যে অর্থ সহায়তা করছে সুরক্ষা ডায়গনস্টিকস। সংস্থার অধিকর্তা সোমনাথ চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘মেডিসিন ও রিউম্যাটোলজির প্রখ্যাত চিকিৎসক সুকুমার মুখোপাধ্যায়ের মস্তিষ্কপ্রসূত এই প্রজেক্ট। স্যরের এই স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দিচ্ছেন দুই রিউম্যাটোলজিস্ট পার্থজিৎ দাস ও অর্ঘ্য চট্টোপাধ্যায়।’
সোমনাথ জানান, তাঁদের সম্মিলিত লক্ষ্য হলো— ইমিউনোলজি ও রিউম্যাটোলজি ক্ষেত্রে একছাতার নীচে এমন একটি উৎকর্ষকেন্দ্র গড়া, যার দৌলতে বঙ্গবাসীকে দক্ষিণ ভারতে দৌড়াতে হবে না, বরং ইমিউনোলজি ও রিউম্যাটোলজির চিকিৎসায় দেশ-বিদেশের রোগীদের নিশ্চিন্ত গন্তব্য হবে এআইআইআর।
এ দিনের সাংবাদিক বৈঠকে উপস্থিত চিকিৎসক সুকুমারবাবু জানাচ্ছেন, রিউম্যাটোলজি শাখা এ দেশে আত্মপ্রকাশ করে গত শতাব্দীর সাতের দশকে। গত পাঁচ দশকে ওষুধ ও রোগনির্ণায়ক ব্যবস্থার কল্যাণে এই শাখার প্রভূত উন্নতি হয়েছে, সে বিষয়ে সন্দেহ নেই। কিন্তু আক্ষেপ, যতটা বিস্তার লাভ প্রত্যাশিত ছিল, ততটা হয়নি।
ফলে আজও ২০-৪০ বছর বয়সি তরুণ-তরুণীদের ইমিউন সমস্যায় ভুগে জীবন জেরবার হয়ে যেতে দেখা যায়। সুকুমারবাবুর কথায়, ‘সুলভে হাতের কাছে যদি ভালো মানের রিউম্যাটোলজি চিকিৎসা না-মেলে, তা হলে কী লাভ! তার সঙ্গেই দরকার এ ক্ষেত্রে নিরন্তর গবেষণা, যাতে চিকিৎসা ব্যবস্থার ক্রমাগত উন্নতিসাধন সম্ভব হয়। সে জন্যই এই প্রকল্প এত যুগোপযোগী।’
প্রতিষ্ঠানের অধিকর্তা পার্থজিৎবাবু জানাচ্ছেন, আপাতত আউটডোর পরিষেবা মিললেও আগামী দিনে ২৫০ শয্যার একটি হাসপাতালও গড়ে তুলবেন তাঁরা। পাশাপাশি, জেলাস্তরে তৈরি হবে স্যাটেলাইট ক্লিনিক। যার মাধ্যমে শুধু রোগী পরিষেবাই নয়, স্থানীয় চিকিৎসকদের সচেতন করার কাজও লাগাতার করে চলবে তাঁদের প্রতিষ্ঠান।
সংস্থার অ্যাকাডেমিক ডিরেক্টর অর্ঘ্যবাবু জানান, সারা দুনিয়ায় ৪ শতাংশ মানুষ (ইউএসএ-তে প্রায় ৮ শতাংশ) অটো-ইমিউন সমস্যায় ভোগেন, অথচ সর্বত্র এর চিকিৎসা ও ডায়গনস্টিকস অধরা। রিউম্যাটোলজিস্ট অর্ঘ্য চট্টোপাধ্যায় বলছেন, ‘এর চিকিৎসায় রক্তপরীক্ষা-সহ স্বাস্থ্যের যে সব পরীক্ষা করাতে হয়, সেগুলি গোটা পূর্ব ভারতেই নেই। যেহেতু ওই সব ডায়গনস্টিকসে সরাসরি রোগীকেই পাঠাতে হয়, তাই দিল্লি এইমস বা পিজিআই চণ্ডীগড়ে গিয়ে টেস্টগুলো করিয়ে আনা রোগী-পরিজনের জন্য ব্যয়সাপেক্ষ ও সময় নষ্ট। এআইআইআর আগামী দিনে সেই ঘাটতি পাকাপাকি ভাবে পূরণ করবে।’