এই সময়: তাঁদের বড় অংশই স্কুল সার্ভিস কমিশনের ২০১৬ সালের পরীক্ষায় সফল হয়ে ইন্টারভিউ পেরিয়ে প্রথম দফার কাউন্সেলিংয়ে চাকরি পেয়েছেন। সোমবার কলকাতা হাইকোর্টের রায়ে স্কুলের যে ২৫ হাজার ৭৫৩ জনের চাকরি গিয়েছেন, সেই তালিকায় আছেন এঁরাও। এসএসসি-র মাধ্যমে বিভিন্ন স্কুলে নিয়োগ পাওয়া এই যোগ্য প্রার্থীদের বড় অংশের প্রশ্ন, তাঁদের রিক্রুটমেন্ট খারিজ হলো কেন, কী ভাবে!
এই পর্যায়ে নদিয়ার চাপড়ার বাসিন্দা, জলপাইগুড়ির একটি স্কুলে ইতিহাসের শিক্ষক ইলিয়াসের তথ্য উল্লেখ করা যায়। ইলিয়াসের কথায়, 'সিবিআই-তদন্তে মাধ্যমিক স্তরে সাড়ে ৮ শতাংশ নিয়োগে দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছিল। তা হলে ৯২ শতাংশ ক্ষেত্রে দুর্নীতি হয়নি। উচ্চ মাধ্যমিক স্তরেও সাড়ে ১৪ শতাংশ শিক্ষকের নিয়োগ নিয়ে প্রশ্ন উঠেছিল। সিবিআই-তদন্ত অনুযায়ীই ৮৬ শতাংশ প্রার্থীকে যোগ্য ধরে নেওয়া যায়। তারপরেও সবার সঙ্গে আমরাও চাকরিহারা!'সোমবার রায়ে বিচারপতিরা জানিয়েছেন - অযোগ্যদের খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না বলেই গোটা নিয়োগ প্যানেল বাতিল করা হয়েছে! সিবিআই-কে আরও তদন্তের নির্দেশও দেওয়া হচ্ছে। এমন অবস্থায় নিযুক্ত হওয়ার পাঁচ বছরেরও বেশি সময় পেরিয়ে যোগ্য প্রার্থীরাও কাজ হারিয়েছেন। পাশাপাশি, বেআইনি ভাবে নিযুক্ত হাজার পাঁচেক প্রার্থীকে তাঁদের গোটা বেতনই ১২ শতাংশ সুদ-সহ ফেরাতে হবে।
হিসেব অনুযায়ী, মাধ্যমিক স্তরের একজন শিক্ষককে গড়ে ২২ লক্ষ এবং উচ্চ মাধ্যমিক স্তরের টিচারদের গড়ে ২৮ থেকে ৩০ লক্ষ টাকা ফেরাতে হবে। এঁরাই বা কী করবেন ভেবে পাচ্ছেন না। কিন্তু যোগ্যদের ক্ষেত্রে সমস্যাটা শুধুই চাকরি হারানো বা আর্থিক নয়। এঁদের অনেকে মধ্যশিক্ষা পর্ষদ এবং এসএসসি-র আপলোড করা পরীক্ষার ওএমআর শিট নিজেদের কাছে রেখেছেন।
যেখানে দেখা যাচ্ছে, তাঁদের পরীক্ষায় কোনও কারচুপি হয়নি। এখন আদালতের রায়ে চাকরি গেলে তাঁদের সামাজিক মান-সম্মান নিয়েই টানাটানির জোগাড়। জলপাইগুড়ির এক হাইস্কুলের শিক্ষক দেবব্রত ভৌমিক জানান, কেন্দ্রীয় এজেন্সির তদন্তে ও আদালতের রায়ের ভিত্তিতে এসএসসি এবং মধ্যশিক্ষা পর্ষদের আপলোড করা ওএমআর শিট তিনি ডাউনলোড করে রেখেছেন। সেখানে কারচুপির কোনও বিষয় নেই।
এখন চাকরি হারিয়ে দেবব্রতর প্রশ্ন, 'কেন আমাদের মান-সম্মান নিয়ে এখনও টানাটানি হবে?' দক্ষিণ ২৪ পরগনার এক হাইস্কুলের ভৌতবিজ্ঞানের শিক্ষিকা মঞ্জু পাল বলেন, 'আমাদের বিরুদ্ধে এতদিন কোথাও কোনও অভিযোগ ছিল না। তারপরও চাকরি গেল? পাঁচ বছরের বেশি সময় চাকরির পর আদালতের রায়ে আমাদের মাথায় আকাশ ভেঙে পড়েছে।'
২০১৬-র ওয়েটিং লিস্টে নাম থাকলেও চাকরি না-পাওয়া প্রার্থীরা কলকাতায় ১১৩৫ দিন ধরে অবস্থান করছেন। নিয়োগ প্রক্রিয়া বাতিলের সঙ্গে সঙ্গে এঁদেরও চাকরি পাওয়ার সম্ভাবনা কার্যত নেই। তার পরেও আন্দোলনরত 'বঙ্গীয় ন্যায্য অধিকার প্রতিষ্ঠা মঞ্চ'-এর তরফে রাসমণি পাত্রর প্রশ্ন, 'আমরা চাকরিটা কবে পাব?'
চাকরির দাবিতে মাথা নেড়া করে রাস্তায় প্রতিবাদ দেখিয়ে ছিলেন রাসমণি। আন্দোলনরত 'এসএসসি যুব ছাত্র অধিকার মঞ্চ'-এর স্টেট কো-অর্ডিনেটর সুদীপ মণ্ডল বলেন, 'আমরা আরও অথৈ জলে পড়লাম।'