তাঁর কাছে প্রথম শব্দ মা। প্রথম স্পর্শও মা। স্কুলে ভর্তি, সিনেমায় অভিনয়, রাজনীতি, মা-ছাড়া কখনও কিচু ভাবতে পারেননি শতাব্দী রায়। সোমবারও তার ব্যতিক্রম হল না। তবে সশরীরে নয়, চতুর্থবার মায়ের ছবি বুকে নিয়ে মনোনয়ন জমা দিলেন বীরভূম লোকসভা কেন্দ্রের তৃণমূল প্রার্থী। গত তিন বার মনোনয়ন জমা দেওয়ার সময়ে তাঁর পাশে থেকেছেন মা লালিমা রায়।কলকাতা থেকে শতাব্দীর রামপুরহাটের বাড়িতে আসার আগে সঙ্গে নিয়ে আসতেন সাধক গৌর বসাকের দেওয়া প্রসাদি পুষ্প। মনোনয়ন জমা দিতে বের হওয়ার আগে সেই পুষ্প মাথায় ঠেকিয়ে মেয়ে জিন্দার হাতে তুলে দিতেন তিনি। ২০২০ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি প্রয়াত হন লালিমা দেবী। সেই থেকে মা-ছাড়া শতাব্দী।
সোমবার সকালে রামপুরহাটের বাড়ি থেকে বেরোনোর সময়ে শতাব্দী তাঁর গাড়িতে তুলে নিয়েছিলেন মায়ের বড় একটা ছবি। সঙ্গে ছিলেন বাবা শৈলেন। আর ছিলেন তাঁর সব সময়ের সঙ্গী রেখা রায়। প্রথমে তাঁরা পুজো দেন সাঁইথিয়ার নন্দীকেশ্বরী তলায়। রেখা বলেন, 'এই প্রথম মাকে ছাড়া মনোনয়ন দিতে এলেন শতাব্দী। যে কোনও শুভ কাজে মাকে ছাড়া এক পাও ফেলতেন না তিনি। আজ মায়ের ছবি বুকে নিয়ে বাড়ি থেকে রওনা দিয়েছেন।'
ছোটবেলায় শতাব্দী সরোজিনীদেবী হিন্দু বালিকা বিদ্যালয়ে পা রেখেছিলেন মায়ের হাত ধরে। ক্লাস এইটে পড়ার সময়ে প্রথম সিনেমায় সুযোগ পাওয়ার ক্ষেত্রে মূল ভূমিকায় ছিলেন মা লালিমা। মা তাঁকে আদর করে জিন্দা বলে ডাকতেন। পরিচালক দীনেন গুপ্ত তাঁর টিনা সিনেমার জন্য একটা মেয়েকে খুঁজছিলেন। লালিমা দেবী নিজে তাঁকে ফোন করে মেয়ের কথা বলেন।
দীনেনবাবুর ডাক পেয়ে মেয়েকে নিয়ে তাঁর বাড়িতে হাজির হন তিনি। তারপর আর ফিরে তাকাতে হয়নি শতাব্দীকে। রাজনীতিতে আসার ভাবনা মাথায় এলে মাকে খুলে বলেন তিনি। লালিমা নিজেই উদ্যোগ নিয়ে মেয়েকে সঙ্গে করে মমতার সঙ্গে দেখা করেন। তারপর থেকে টানা ১৫ বছর বীরভূমের তৃণমূল সাংসদ তিনি।
এ দিন মনোনয়ন জমা দেওয়ার পরে মায়ের কথা বলতেই চোখ চিকচিক করে ওঠে শতাব্দীর। তিনি বলেন, 'আমার জীবনে উন্নতির মূলে মা। আমার কাছে তিনি খুবই লাকি। তাই যে কোনও ভালো কাজে মা আমার সঙ্গে থাকেন। আজ মা সশরীরে না থাকলেও তিনি সব সময় আমার কাছে আছেন, এটা অনুভব করি। তাই মায়ের ছবি বুকে জড়িয়ে আজ মনোনয়নপত্র জমা দিলাম।'