এই সময়: লোকসভা নির্বাচনে বাম-কংগ্রেস পশ্চিমবঙ্গে বিজেপির সঙ্গে সমঝোতা করে তৃণমূলের ভোট কাটতে নেমেছে বলে গত কয়েক দিনে একাধিক সভায় অভিযোগ করেছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সিপিএম ও কংগ্রেসকে একটিও ভোট না দেওয়ার জন্য আমজনতার কাছে আহ্বানও জানিয়েছেন তৃণমূলনেত্রী। রায়গঞ্জ লোকসভা কেন্দ্রে দ্বিতীয় দফার প্রচারে গিয়ে সোমবার তৃণমূলনেত্রী এবার আরও চড়া সুরে কংগ্রেসকে আক্রমণ করলেন।মমতা বিভিন্ন সভা থেকে এতদিন মূলত প্রদেশ কংগ্রেসকেই নিশানা করছিলেন, এ দিন রায়গঞ্জ লোকসভা কেন্দ্রের অন্তর্গত চাকুলিয়ার সভায় তৃণমূলনেত্রী সরাসরি বিঁধলেন কংগ্রেস হাইকম্যান্ডকে। রায়গঞ্জের কংগ্রেস প্রার্থী আলি ইমরান রামজ (ভিক্টর) ভোটের প্রচারে কী ভাবে বিপুল টাকা খরচ করছেন—সোমবার এনিয়ে প্রশ্ন তোলেন মমতা।
কিছু দিন আগে আয়কর দপ্তর এআইসিসি-র ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট ফ্রিজ় করেছিল। ভোটের মুখে ইনকাম ট্যাক্স বিভাগের এই পদক্ষেপের তীব্র বিরোধিতা করেছিলেন রাহুল গান্ধী। যদিও মমতা মনে করছেন, একটি অ্যাকাউন্ট ফ্রিজ় হলেও কংগ্রেসের অর্থের অভাব নেই। সেই কারণেই রায়গঞ্জে কংগ্রেস প্রার্থী প্রচারে বিপুল অর্থ খরচ করছেন বলে তৃণমূল নেতৃত্বের পর্যবেক্ষণ।
সোমবার চাকুলিয়ার সভায় মমতা বলেন, ‘বলছে, অ্যাকাউন্ট ফ্রিজ় করেছে, তাই টাকা নেই! একটা অ্যাকাউন্ট ফ্রিজ় করেছে, এটা করা উচিত হয়নি। আমি এটা সমর্থন করছি না। কিন্তু তোমাদের টাকার অভাব? কংগ্রেসের টাকার অভাব? তেলঙ্গানায় অত বড় খনি! ওখানে ক্ষমতায় কারা রয়েছে? কর্নাটকে কারা আছেন? ঝাড়খণ্ড, তামিলনাড়ুতে যৌথভাবে কারা আছেন? হিমাচলে সরকার কাদের রয়েছে? আমাদের তো একমাত্র বাংলা।’
রায়গঞ্জে ত্রিমুখী লড়াইয়ে কংগ্রেসের ভিক্টর, তৃণমূলের কৃষ্ণ কল্যাণী, বিজেপির কার্তিকচন্দ্র পালের মধ্যে মূলত ত্রিমুখী লড়াই হচ্ছে। একদা প্রিয়রঞ্জন দাশমুন্সির গড় হিসেবে পরিচিত থাকলেও রায়গঞ্জে কংগ্রেস আগের তুলনায় সাংগঠিক ভাবে অনেক দুর্বল হয়েছে। সেখানে ভিক্টরের প্রচারের এত ব্যাপ্তি কী ভাবে? সেই প্রশ্ন তুলেছেন মমতা।
তাঁর কথায়, ‘এখানে যে ছোকরা দাঁড়িয়েছে, ছোকরা নয় ভদ্রলোক, তিনি হচ্ছেন বিজেপির একটি পাখির চোখ। তার নাকি কিচ্ছু নেই! বেচারা! দেবো নাকি একটা লক্ষ্মীর ভাণ্ডার কিনে? আহা-রে কত গরিব, আপনাদের কাছে কোনও টাকা নেই! উত্তর দিনাজপুরের জায়গায় জায়গায় দেখেছি, আপনার টাকার ফসল চলছে। কোথা থেকে আসছে টাকা? বড় বড় কথা।’
মমতার আক্রমণের মুখে ভিক্টর বলেন, ‘আমি যদি বাচ্চা হতাম, তা হলে মুখ্যমন্ত্রীকে কেন রায়গঞ্জ কেন্দ্রে পাঁচ-পাঁচটি জনসভা করতে হলো? তেলঙ্গানা, কর্নাটক, হিমাচলপ্রদেশে কংগ্রেস জয়ী হওয়ায় উনি খুশি হননি, নিজেই বলে দিলেন। কিন্তু একটি রাজ্যে ক্ষমতায় থেকে তৃণমূল এত টাকার ইলেক্টোরাল বন্ড কী করে পেল?’ যদিও কংগ্রেসকে বিঁধে মমতার বক্তব্য, ‘বাংলায় কংগ্রেসের কী আছে? জি়রো।
আমি বলেছিলাম কংগ্রেসকে, তোমাদের বিধানসভায় একটিও সিট নেই, তা-ও আমি তোমাদের দু’টো সিট দিচ্ছি। তুমি দুটো সিট নিয়ে থাকো। ভোট কাটাকাটির রাজনীতিতে যেও না। সেই কথা শোনেনি। এরা তৃণমূল কংগ্রেসের ভোট কাটবে। তাই সুযোগ দেবেন না।’ মমতার প্রচারের মধ্যেই এ দিন উত্তর দিনাজপুরে কংগ্রেসে ভাঙন ধরেছে।
মমতার উপস্থিতিতে কংগ্রেসের তিনজন ব্লক সভাপতি জোড়াফুলে যোগ দিয়েছেন। এনিয়ে ভিক্টরের বক্তব্য, ‘বিজেপির যেখানে প্রভাব রয়েছে, সেই কালিয়াগঞ্জে উনি (মমতা) সভা করতে গেলেন না, পাছে বিজেপির ভোটে যাতে ভাঙন না ধরে সেজন্য।’