• বাবাকে প্রণাম করে প্রয়াত মায়ের ছবি হাতেই মনোনয়ন, চোখে জল শতাব্দীর
    বর্তমান | ২৩ এপ্রিল ২০২৪
  • সৌম্যদীপ ঘোষ, সিউড়ি:  এক হাতে প্রয়াত মায়ের ছবি। পার্টিঅফিসে বৃদ্ধ বাবার পায়ে হাত দিয়ে প্রণাম। সেই মুহূর্তে চোখের কোণ চিকচিক করে উঠল! বলে উঠলেন ‘আজ মা থাকলে!’...তারপর তড়িঘড়ি চোখ থেকে গড়িয়ে পড়া জল মুছলেন। বৃদ্ধ বাবাও মেয়ের মাথায় হাত দিয়ে আশীর্বাদ করলেন। ক্ষণিকের সেই দৃশ্য যেন গোটা পরিবেশটাই আবেগঘন করে তুলল। সোমবার বীরভূমের তৃণমূল প্রার্থী হিসেবে চতুর্থবার মনোনয়ন জমা করতে যাওয়ার আগে এভাবেই আবেগতাড়িত হয়ে পড়লেন শতাব্দী রায়। মায়ের ছবি সঙ্গে নিয়ে জেলাশাসকের কাছে মনোনয়ন জমা করলেন। পাশাপাশি এদিনই বিরোধী জোট প্রার্থী মিল্টন রশিদের মনোনয়ন জমা দেওয়ার ছিল। একথা কানে আসতেই জেলাশাসকের অফিসে মনোনয়নের পর বেশ কিছুক্ষণ অপেক্ষা করলেন শতাব্দী। বিরোধী প্রার্থীর সঙ্গে সৌহার্দ্য বিনিময় করে তবেই ফিরলেন। উপস্থিত সকলের মনে জায়গা করে নিল সৌজন্যবোধের রাজনীতির এই বাঁধিয়ে রাখার মতো ছবি।

    সোমবার মনোনয়নের আগে শতাব্দী সাঁইথিয়ায় নন্দিকেশ্বরীতলায় পুজো দেন। সতীপীঠে পুজো দিয়ে ফের সিউড়িতে এসে রক্ষাকালীতলায় পুজো দেন প্রার্থী। বিকেলে পাথরচাপুড়ির দাতাবাবার মাজারে চাদর চড়ান। তিনি দলের সকলকে জানিয়ে দিয়েছিলেন, দুপুর ১২টা ১৮মিনিটের আগে মনোনয়ন জমা করবেন। সেইমতো আগেভাগেই জেলা পার্টিঅফিসে চলে এসেছিলেন। সেখানে উপস্থিত ছিলেন তাঁর বয়স্ক বাবা শৈলেন রায়। মনোনয়ন জমা করতে যাওয়ার আগের মুহূর্তে বাবাকে জড়িয়ে ধরেন মেয়ে শতাব্দী। এরপর মেয়ে বাবার পায়ে হাত দিলেন। সেই মুহূর্তে চোখের জল গড়িয়ে পড়ল দু’জনেরই। একসময় মেয়েকে অভিনয় জগতে কাজ করতে সাহস জুগিয়েছিলেন বাবা। পরে আবার রাজনীতির জগতেও সর্বদা পাশে থেকেছেন। তাই মেয়ের জন্য গর্বিত বাবাও এদিন নিজেকে আটকে রাখতে পারলেন না। বাধ মানল না চোখের জল। ২০২০ সালে মাকে হারিয়েছেন শতাব্দী। এই বিশেষ দিনে তিনি না থাকার আক্ষেপ মেয়ের কথাতেই স্পষ্ট। এরপর শতাব্দী মনোনয়ন জমা করার ফাইলের সঙ্গে মায়ের ছবি হাতে নিয়ে র‌্যালিতে বের হলেন। 

    কিছুটা আবেগতাড়িত হয়ে শতাব্দী বলেন, এই সময়টা মা থাকুক সেটা কোন মেয়ে না চায়! কিন্তু তা তো আর সম্ভব নয়। এবারের মনোনয়ন জমা করার দিনটা আমার কাছে সত্যিই বিশেষ। বাবার আশীর্বাদ নিয়েছি। মা থাকলে কী ভালোই হতো! 

    কথা বলতে বলতেই ফের চোখে জল তৃণমূলের তারকা প্রার্থীর। এরপর নেতা, কর্মীদের সঙ্গে নিয়ে আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে মনোনয়ন জমা করলেন। এদিনই কংগ্রেস প্রার্থী মিল্টন রশিদ মনোনয়ন জমা করতে আসছেন শুনে জেলাশাসক কার্যালয়ের বাইরে অপেক্ষা করলেন শতাব্দী। কংগ্রেস প্রার্থী আসতেই শতাব্দী বললেন, তোমার জন্য দাঁড়িয়ে রয়েছি অনেক্ষণ! উল্টোদিক থেকে মিল্টন হাত বাড়িয়ে এগিয়ে এসে বললেন, দিদি! আপনার হয়ে গিয়েছে? পাশে দাঁড়িয়ে থাকা প্রাক্তন তৃণমূল বিধায়ক স্বপনকান্তি ঘোষকে পায়ে হাত দিয়ে প্রণাম করেন মিল্টন। গোটা চত্বরে সৌজন্যের পরিবেশ তৈরি হল। এলাকার অনেকেই বলছেন, রাজনীতিতে এমন সৌজন্যের ছবিই সবসময় প্রয়োজন।  মনোনয়ন জমা দিতে যাওয়ার আগে বাবার আশীর্বাদ নিচ্ছেন শতাব্দী। নিজস্ব চিত্র
  • Link to this news (বর্তমান)