• এসএসসি মামলায় হাইকোর্টের রায়, চাকরিহারা ২৬ হাজার
    বর্তমান | ২৩ এপ্রিল ২০২৪
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা: এক কথায় নজিরবিহীন। অপ্রত্যাশিতও। কলকাতা হাইকোর্টের নির্দেশে চাকরি হারালেন প্রায় ২৬ হাজার শিক্ষক ও অশিক্ষক কর্মী। সোমবার এসএসসি গ্রুপ-ডি, গ্রুপ-সি, নবম-দশম ও একাদশ-দ্বাদশে নিয়োগ দুর্নীতি সংক্রান্ত মামলায় ২০১৬ সালের গোটা প্যানেল বাতিল করে দিল বিচারপতি দেবাংশু বসাক ও বিচারপতি মহম্মদ শাব্বার রশিদির বিশেষ বেঞ্চ। এর ফলে শুধুমাত্র বেআইনিভাবে নিয়োগপ্রাপ্তরাই নন, এক মুহূর্তে চাকরিহারা হলেন মোট ২৫ হাজার ৭৫৩ জন। স্বাভবিকভাবেই বিভিন্ন মহলে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে, দোষীদের জন্য যোগ্যরা কেন বঞ্চিত হবেন? যদিও হাইকোর্টের এই নির্দেশ চ্যালেঞ্জ করে সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হচ্ছে রাজ্য সরকার ও স্কুল সার্ভিস কমিশন। 

    সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশেই এসএসসি নিয়োগ দুর্নীতি সংক্রান্ত যাবতীয় মামলা ফেরত এসেছিল হাইকোর্টে। শীর্ষ আদালতের নির্দেশে বিচারপতি বসাক ও বিচারপতি রশিদির বিশেষ বেঞ্চে মামলার দীর্ঘ শুনানি হয়। এরপর এদিন রায় ঘোষণা করতে গিয়ে বেঞ্চ বলে, আদালতের কাছে তিনটি বিকল্প বিবেচনাধীন ছিল। এক, মামলার গ্রহণযোগ্যতা যাচাই। দুই, একই নিয়োগ প্রক্রিয়া থেকে বেআইনি ও স্বচ্ছ নিয়োগ বাছাই করা। তিন, গোটা প্যানেলই বাতিল করা। এক্ষেত্রে আদালত সবপক্ষের সওয়াল-জবাব শোনার পর তৃতীয় বিকল্প বেছে নিয়েছে। রায়ে বেঞ্চ বলেছে, ২০১৬ সালের গোটা নিয়োগ প্রক্রিয়া সংবিধানের ১৪ এবং ১৬ নম্বর অনুচ্ছেদের পরিপন্থী। তাই তা বাতিল করা হচ্ছে। এছাড়াও একগুচ্ছ নির্দেশিকা জারি করে বেঞ্চ জানিয়েছে, যাঁরা মেয়াদ উত্তীর্ণ প্যানেল থেকে চাকরি পেয়েছেন এবং যাঁরা সাদা খাতা জমা দিয়ে চাকরি পেয়েছেন, তাঁদের ৪ সপ্তাহের মধ্যে ১২ শতাংশ সুদ-সহ বেতন ফেরত দিতে হবে। সংশ্লিষ্ট জেলাশাসকরা এই নির্দেশ কার্যকর করবেন। ভোটের ফলাফল ঘোষণার ১৫ দিনের মধ্যে এসএসসিকে স্বচ্ছভাবে টেন্ডার প্রক্রিয়ার মাধ্যমে শূন্যপদ অনুযায়ী নয়া নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু করতে হবে। 

    এছাড়াও ২৮২ পাতার ওই রায়ে আরও উল্লেখ, সব ওএমআর শিট বা উত্তরপত্র স্কুল সার্ভিস কমিশনের ওয়েবসাইটে আপলোড করতে হবে। একইসঙ্গে আদালত জানিয়েছে, এই মামলার তদন্ত চালিয়ে যাবে সিবিআই। এছাড়াও সুপার নিউমেরারি বা অতিরিক্ত শূন্যপদ তৈরিতে যাঁরা যুক্ত, তাঁদের হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদও করতে পারবে কেন্দ্রীয় সংস্থা।

    হাইকোর্টের এই নির্দেশের পরই চাকরিহারাদের পাশে থাকার আশ্বাস দিয়ে  এই রায়ের বিরুদ্ধে রাজ্য সুপ্রিম কোর্টে যাচ্ছে বলে জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। পাশাপাশি এসএসসির চেয়ারম্যান সিদ্ধার্থ মজুমদার বলেছেন, ‘২০ শতাংশের জন্য ৮০ শতাংশ কেন ভুক্তভোগী হবেন, এই প্রশ্ন তুলে আমরা সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হচ্ছি।’ পর্ষদও শীর্ষ আদালতে যাওয়ার সম্ভাবনার কথা জানিয়েছে। তবে রায়কে স্বাগত জানিয়েছেন মামলাকারীর আইনজীবী বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য, সুদীপ্ত দাশগুপ্ত, বিক্রম বন্দ্যোপাধ্যায় ও ফিরদৌস শামিমরা। চাকরিহারাদের আইনজীবী অনিন্দ্য লাহিড়ী বলেন, ‘এবার টেন্ডার ডেকে গোটা প্রক্রিয়াই নতুনভাবে করতে হবে এসএসসিকে।’
  • Link to this news (বর্তমান)