সিএএ কার্যকর হলে সংবিধান ধ্বংস হবে, ভারতে বিভাজনের রাজনীতির বিরুদ্ধে মার্কিন তোপ
বর্তমান | ২৩ এপ্রিল ২০২৪
নয়াদিল্লি: ধর্মীয় স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ, মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ আগেই ছিল। এবার সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন (সিএএ) নিয়েও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সমালোচনার মুখে মোদি সরকার। এতদিন দেশেই বিষয়টি নিয়ে সরব ছিল বিরোধীরা। এবার মার্কিন কংগ্রেসের স্বশাসিত গবেষণা সংস্থা কংগ্রেসনাল রিসার্চ সার্ভিস (সিআরএস) সামনে আনল বিস্ফোরক রিপোর্ট—সিএএ কার্যকর হলে লঙ্ঘিত হতে পারে ভারতের সংবিধান। শুধু তাই নয়, এই আইন দেশের মুসলিম জনসংখ্যার উপরও বিরূপ প্রভাব ফেলতে পারে বলে সম্প্রতি প্রকাশিত একটি গবেষণামূলক রিপোর্টে জানিয়েছে তারা।
১৯৫৫ সালের নাগরিকত্ব আইনকে সংশোধন করে ২০১৮ সালে ‘সিএএ’ পাশ করে মোদি সরকার। তারপর চার বছর সেটি পড়ে ছিল। আচমকাই গত মার্চে, লোকসভা ভোটের ঠিক মুখে তা কার্যকর করেছে কেন্দ্রীয় সরকার। সংশোধিত এই আইনে পাকিস্তান, বাংলাদেশ ও আফগানিস্তান থেকে শরণার্থী হিসেবে ভারতে আসা অ-মুসলিমদের নাগরিকত্ব প্রদানের বিধান রয়েছে। আর তা নিয়েই প্রশ্ন তুলেছে সিআরএসের ওই ‘ইন ফোকাস’ শীর্ষক রিপোর্ট। সেখানে বলা হয়েছে, ‘সিএএ’র মূল উদ্দেশ্য তিনটি দেশ থেকে উদ্বাস্তু হিসেবে আসা ছ’টি ধর্মের মানুষকে নাগরিকত্ব প্রদান করা। সেখানে মুসলিমদের জায়গা হয়নি। এতেই ভারতীয় সংবিধানের কয়েকটি ধারা লঙ্ঘিত হতে পারে। এমনকী ভারতীয় সংবিধানে উল্লিখিত ধর্মনিরপেক্ষতার আদর্শ এবং আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইনও ক্ষুণ্ণ হবে। সিএএ’র সঙ্গে এনআরসি কার্যকর হলে ভারতের ২০ কোটি মুসলিম জনসংখ্যার অধিকার খর্ব হবে বলেও দাবি মার্কিন কংগ্রেসের ওই গবেষণা সংস্থার।
নিজেদের দাবির সপক্ষে সিআরএস ভারত-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে কর্মরত এক মার্কিন কূটনীতিবিদের কথাও টেনে এনেছে। বলা হয়েছে, গোটা বিষয়টি নিয়ে ২০১৯ সালেই আশঙ্কা প্রকাশ করেছিলেন ওই কূটনীতিক। তাঁর মতে, ‘মুক্ত এবং স্বাধীন ভারত-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চল’-এর ভাবনা বাস্তবায়িত করার পথে সিএএ ভারতের জন্য অন্তরায় হয়ে উঠবে। এছাড়া ১১৮ তম মার্কিন কংগ্রেসেও এই ‘বৈষম্যমূলক’ নাগরিকত্ব আইন’ সংশোধনের জন্য নয়াদিল্লির কাছে আর্জি জানানো হয়েছিল।
আন্তর্জাতিক স্তরে ঘটে চলা প্রাসঙ্গিক নানা বিষয়ে রিপোর্ট তৈরি করাই সিআরএসের মূল কাজ। তার উপর ভিত্তি করে মার্কিন কংগ্রেস সদস্যরা আলাপ-আলোচনা চালাতে পারেন। রিপোর্টটি মার্কিন কংগ্রেসের সরকারি পর্যবেক্ষণ হিসেবে গণ্য হয় না বটে। কিন্তু, তাতে আন্তর্জাতিক মহলে মোদি সরকারের বিড়ম্বনা কিছুটা হলেও বাড়বে বলে মত কূটনৈতিক মহলের। বাইডেন প্রশাসন অবশ্য সিএএ-র বিজ্ঞপ্তি জারির পরেই বিষয়টির উপর নজর রাখার কথা জানিয়েছিল। তবে মোদি সরকার বরাবরই যাবতীয় অভিযোগ উড়িয়ে জানিয়েছে, ‘এই আইন নাগরিকত্ব কাড়ার নয়, নাগরিকত্ব দেওয়ার আইন।’