• মথুরায় ক’বার ঘুরেছেন? ক’টা ব্লক বলতে পারবেন? সঙ্ঘ-কর্মীর অপ্রিয় প্রশ্ন শুনেই কোনওমতে সরে পড়লেন হেমা
    বর্তমান | ২৩ এপ্রিল ২০২৪
  • দিব্যেন্দু বিশ্বাস, মথুরা: দিল্লি-আগ্রা জাতীয় সড়ক ধরে এগিয়ে যাওয়া অন্তত ২৫ কিলোমিটার। দু’পাশে পেরিয়ে যাচ্ছে একের পর এক গ্রাম, গম ক্ষেত। প্রায় আধ ঘণ্টা চলার পর ডানদিকে যে পিচ ঢালা কালো চকচকে রাস্তাটি পড়বে, হাইওয়ে ছেড়ে সেটি ধরতে হবে। আরও মিনিট দশেক পেরলে অবশেষে নির্ধারিত গন্তব্য। গ্রামের নাম নাগলা চন্দ্রভান। হালে তা পাল্টে হয়েছে দীনদয়াল ধাম। ব্লক ফারহা। নির্বাচনী আবহে মথুরা শহর ছেড়ে আচমকাই এই গ্রামে কেন? এক, সোমবার এখানে ভোট প্রচার সেরেছেন বিজেপি প্রার্থী হেমা মালিনী। দুই, পণ্ডিত দীনদয়াল উপাধ্যায়ের জন্মস্থান এই গ্রাম। এখানেই ছিল হেমা মালিনীর কর্মসূচি। জাঁকজমকে কমতি ছিল না। আচমকাই তাল কাটল জনৈক স্থানীয় বাসিন্দার কিছু ‘অপ্রিয়’ প্রশ্নে। ‘দশ বছরে মথুরা নিয়ে ক’টা প্রশ্ন সংসদে তুলেছেন?’ ‘জেতার পর গোটা মথুরায় ক’বার ঘুরেছেন?’ ‘মথুরায় ক’টা ব্লক বলতে পারবেন?’ জনৈক ভোটার কে কে শুক্লার প্রশ্নবাণে তখন রীতিমতো হতচকিত হেমা মালিনী। ‘মোদি-কি-গ্যারান্টি’র লিফলেট হাতে ধরিয়ে দ্রুত এলাকা ছাড়লেন বিজেপির তারকা-প্রার্থী। কে কে শুক্লা অবশ্য জানিয়ে দিলেন, ‘আমি আরএসএস সমর্থক। দীনদয়ালজি আমার পূজ্য। ভোটার হিসেবে কয়েকটি প্রশ্ন করেছি মাত্র।’ 

    ব্যতিক্রমী ঘটনা? সম্ভবত না। উষ্মা রয়েছে অন্যত্রও। আবারও পিছিয়ে ঢুকে পড়া যাক মথুরা শহরে। ওই যে তিন মাথার মোড়, তার একটি গিয়েছে শহরের ‘ধর্মতলা’ হোলি গেট মার্কেটের দিকে। আর একটি যাচ্ছে স্থানীয় পুলিস ক্যাম্পের দিকে। অন্যটি দিশা নির্দেশ করছে যমুনা ঘাটের দিকে। খানিক হেঁটে আর্য সমাজ রোড, লালা নওলকিশোর মার্গ পেরিয়ে ঠিক যে মোড়ে আপনি পৌঁছচ্ছেন, এক মুহূর্তে তাকে উত্তর কলকাতার কোনও পুরনো গলি বলে ভুল করা মোটেও অস্বাভাবিক নয়। এলাকার নাম বাঙালি ঘাট। পাশেই যমুনা নদী। পরের পর ভগ্নপ্রায় ধর্মশালা। কোনওটির নাম কাশীবাই, কোনওটি বা মোরবী অথবা কাশী বিশ্বনাথ আশ্রম। সেখানে দাঁড়িয়েই ক্ষোভ উগরে দিলেন মোরবীর বর্তমান কর্তা ব্রজকিশোর চতুর্বেদী। বললেন, ‘ভোটপ্রার্থী হেমা মালিনী এখানে আসবেন কেন? এলাকার অনুন্নয়ন চোখে পড়বে না? তিনি স্টার।’ কংগ্রেসের মুকেশ ধানগড় কিংবা বসপার সুরেশ সিং নন। 

    ২০১৪ এবং ২০১৯— দু’বার মথুরা থেকে বিজেপির সাংসদ হওয়ার পরেও স্টারডম ভাঙতে পারেননি হেমা। ধৌলি পিয়াউ রোডের বাসিন্দা অর্জুন সিং বললেন, ‘৫০ বছর এখানে রয়েছি। অনেক রাজনৈতিক ওঠাপড়াও দেখেছি। কিন্তু হেমা মালিনীর মতো সাংসদ আর দেখিনি। ভোটের বাকি কয়েকদিন। এখনও পর্যন্ত এই এলাকায় বিজেপির প্রার্থী আসেননি।’ হেমার এহেন হাবভাবই কিছুটা ব্যাকফুটে রাখছে বিজেপিকে। গেরুয়া শিবির যেন কিছুটা শঙ্কিতও। কারণ মথুরায় বিজেপির তারকা প্রার্থী নিজেও প্রচার করছেন কার্যত ঘড়ি মেপে। ভোটের মাত্র চারদিন আগে সোমবারই প্রথম নাগলা চন্দ্রভানে এলেন তিনি। সম্ভবত এই শেষ। বিজেপি মনে করছে, ভোট হচ্ছে নরেন্দ্র মোদির নামেই। মথুরায় দু’বার জয়ী হেমারও রন্ধ্রে রন্ধ্রে বোধহয় ঢুকে গিয়েছে এই বোধটাই। বৃন্দাবনে অভিজাত আবাসনে ফ্ল্যাট কিনে ‘আমি তোমাদেরই লোক’ বোঝানোর চেষ্টা করলেও দিনের শেষে হেমা মথুরার মেয়ে হয়ে উঠতে পারছেন না। বিজেপির ভরসা সেই মোদি-কি-গ্যারান্টিই!
  • Link to this news (বর্তমান)