নিশানায় ছিলেন অভিষেক? ধৃত রাজারামের পরিচয় জানলে চমকে উঠবেন!
এই সময় | ২৩ এপ্রিল ২০২৪
এই সময়: ডায়মন্ড হারবারের তৃণমূল প্রার্থী তথা দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় কি জঙ্গি গোষ্ঠীর নিশানায় ছিলেন? ২৬/১১ তাজ হানার মূল চক্রী ডেভিড কোলম্যান হেডলির সাহায্যকারী রাজারাম রেগিকে সোমবার গ্রেপ্তার করার পরে এমন আশঙ্কা করছে লালবাজার। ইতিমধ্যেই কলকাতা পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগ এবং এসটিএফ টেরর লিঙ্কের বিষয়টি নিয়ে তদন্ত শুরু করেছে।ওই হামলার ঘটনার ১৪ বছর পরে কেন এই শহরে রাজারাম এসেছিলেন, সে বিষয়ে জেরার জন্য অভিযুক্তকে মুম্বইয়ের মাহিম থেকে ট্রানজিট রিমান্ডে কলকাতায় আনা হয়েছে। লস্কর-ই-তৈবার ষড়যন্ত্রে ২০০৮ সালের নভেম্বরে মুম্বই অ্যাটাকের ঠিক আগে শহরের বিভিন্ন জায়গায় রেকি (অপরাধ সংগঠিত করার আগে গোপনে কোনও জায়গা দেখে আসা) করেছিলেন হেডলি।
অভিযোগ, সেই কাজে তাঁকে সাহায্য করেছিলেন রাজারাম। আর এবারে ঠিক একই কায়দায় গত ১৮ তারিখ শেক্সপিয়র সরণি এলাকায় দু’দিন হোটেলে থেকে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের বাড়ি এবং অফিসে সেই রাজারাম নিজেই রেকি করেন বলে পুলিশের দাবি। ছবি তোলার পাশাপাশি তিনি ভিডিয়োগ্রাফিও করেন বলে জানাচ্ছেন কলকাতা পুলিশের কর্তারা।
এমনকী, অভিষেক এবং তাঁর পিএ-র মোবাইল নম্বর সংগ্রহ করে তাঁদের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টাও করেন অভিযুক্ত। দু’দিন পর, ২০ তারিখ তিনি আবার মুম্বই ফেরত চলে যান। তাঁর এই কর্মকাণ্ড গোয়েন্দাদের র্যাডারে চলে আসে। এর পরেই, সোমবার মাহিম থেকে রাজারামকে গ্রেপ্তার করেন এসটিএফের গোয়েন্দারা। কেন তিনি এই কাজ করেছিলেন, কারও নির্দেশ ছিল কি না, তা খতিয়ে দেখছেন তদন্তকারীরা।
লোকসভা ভোটের সময়ে রাজারাম গ্রেপ্তার হওয়ায় রাজনৈতিক মহলেও চাপানউতোর শুরু হয়েছে। তৃণমূল এই ইস্যুতে সরাসরি বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীকে নিশানা করেছে। তৃণমূলনেত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য সোমবার বলেন, ‘মালদার রতুয়ায় শুভেন্দু বলছিলেন, পরের সপ্তাহে বড় বোমা বিস্ফোরণ হবে। আমরা দেখলাম, ২৬/১১-র ঘটনার অভিযুক্তের সঙ্গে যার যোগ রয়েছে, সেই রাজারাম গ্রেপ্তার হলেন। তা হলে, বোমা বিস্ফোরণ কোথায় হবে? বাংলায়। কে ফাটাবে? রাজারাম। তাই কি রেকি হলো? তা হলে আমাদের সর্বোচ্চ নেতা-নেত্রীর কী ভাবে জীবনহানি করা যায় সেই প্ল্যান হচ্ছে?’
তাঁর সংযোজন, ‘রাজারামের পক্ষে অভিষেকের নম্বর জোগাড় করা সম্ভব নয়। কে দিয়েছে, কারা দিয়েছে, তা পরে পুলিশ বলে দেবে।’ তৃণমূলের রাজ্যসভার দলনেতা ডেরেক ও’ব্রায়েনের কথায়, ‘কলকাতা পুলিশকে ধন্যবাদ যে ২৬/১১-র চক্রান্তে যুক্ত রাজারামকে তাঁরা ধরেছেন। বিজেপি রাজনৈতিক ভাবে লড়াই করতে না পেরে এই সব করছে। ভয়ঙ্কর কিছু ঘটানোর পরিকল্পনা ছিল, তা পুলিশ ভেস্তে দিয়েছে।’
যদিও রায়গঞ্জে এদিন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় শুভেন্দুর বোমা ফাটানো প্রসঙ্গে এসএসসির রায় নিয়ে বিরোধী দলনেতার আগাম মন্তব্যের কড়া সমালোচনা করেন। তবে, রাজারামের গ্রেপ্তারি নিয়ে এদিন কটাক্ষ করতে ছাড়েননি বিজেপি নেতা শমীক ভট্টাচার্য। তিনি বলেন, ‘পুলিশের কাজ পুলিশ করেছে। অতি দুর্বল চিত্রনাট্য।
হাইকোর্টের রায়ের পরে পুলিশকে দিয়ে পরিকল্পিত এই নাটক করানো হয়েছে। অভিষেকের বাড়ির সামনে তো পুলিশ দুর্গ করে রাখে, তা হলে রেকি হয় কী করে?’ রাজারামকে গ্রেপ্তারের পরে সোমবার দুপুরে লালবাজারে সাংবাদিক বৈঠক করেন অ্যাডিশনাল সিপি (১) মুরলীধর শর্মা এবং জয়েন্ট সিপি (এসটিএফ) ভি সলোমন নেশা কুমার।
তাঁরা জানান, সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় এবং তাঁর পিএ-র মোবাইল নম্বর সংগ্রহ করে, তাঁদের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেছেন অভিযুক্ত। কোথা থেকে, কার মাধ্যমে ফোন নম্বর পেলেন তিনি, তাঁর উদ্দেশ্য কী ছিল, সে বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। পুলিশ সূত্রের খবর, মহারাষ্ট্রের একটি রাজনৈতিক দলের সদস্য হিসেবে পরিচয় দিয়ে চলতি মাসের ১৮ তারিখে শেক্সপিয়র সরণি এলাকার হোটেলে উঠেছিলেন রাজারাম। সেখান থেকে তিনি রেকির কাজ করেন।
তাঁর গ্রেপ্তারি প্রসঙ্গে গোয়েন্দা বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত মুরলীধর শর্মা বলেন, ‘২৬/১১ মুম্বই হানার আগে যখন ডেভিড ভারতে আসেন, সে সময়ে রাজারামের সঙ্গে তিনি দেখা করেছিলেন। কলকাতায় আসার নেপথ্যে কোনও ষড়যন্ত্র থাকতে পারে। কোনও টেরর গ্রুপ এর পিছনে রয়েছে কি না, তা-ও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।’
রাজারামকে মুম্বই থেকে কলকাতায় আনার পরে এদিন ব্যাঙ্কশাল আদালতে পেশ করা হয়। ধৃতের বিরুদ্ধে ভারতীয় দণ্ডবিধির ষড়যন্ত্র, অপরাধমূলক ভীতি প্রদর্শন ছাড়াও ৯ ডব্লুবি মেন্টেনিং অফ পিস অ্যান্ড অর্ডার-এ মামলা দায়ের করা হয়।
সরকারি কৌঁসুলি সোমা বিশ্বাস আদালতে বলেন, ‘অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের বাড়ি এবং অফিসের সামনে রাজারাম রেকি করেন। লস্কর-ই-তৈবার ষড়যন্ত্রকারী ডেভিড হেডলির সঙ্গে তাঁর নাম জড়িয়েছিল। অভিযুক্ত যে হোটেলে ছিলেন, সেখানকার সিসিটিভি ফুটেজ এবং নথিপত্র বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে। তাঁকে ১৪ দিন হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের প্রয়োজন রয়েছে।’ এরপর বিচারক রাজারামকে ২৯ এপ্রিল পর্যন্ত পুলিশ হেফাজতের নির্দেশ দেন।