Rajaram Rege : 'রাজারামের সঙ্গে পরিচয় শিবসেনা দপ্তরে'
এই সময় | ২৩ এপ্রিল ২০২৪
ডেভিড কোলম্যান হ্যাডলি
২০০৬-০৭ সালের এপ্রিল মাস নাগাদ দাদারে শিবসেনার দপ্তরে আমার সঙ্গে রাজারামের (রেগি) মাত্র দু'মিনিটের জন্য দেখা হয়েছিল। আমি প্রথম থেকেই তাঁর সঙ্গে সম্পর্ক তৈরি করতে চেয়েছিলাম। আমার সঙ্গে ছিলেন জিম ইনস্ট্রাকটর বিলাস ওয়ারকেও। মূলত তাঁর মাধ্যমেই রেগির সঙ্গে আমার আলাপ হয়। আমি বলি, ভিতরে গিয়ে ছবি তুলতে চাই।কারণ, আমার ধারণা ছিল, এমন ছবি তুলতে পারলে ভবিষ্যতে লস্কর-ই-তৈবা শিবসেনা ভবনে হামলা চালিয়ে দলের প্রধান বালাসাহেব ঠাকরেকে হত্যার ছক করতে পারবে। পরের দিনই রাজারামের সঙ্গে পরিচয়ের বিষয়টি নিয়ে লস্কর নেতা সাজিদ মীরের সঙ্গে ইমেলে আমার দীর্ঘ আলোচনা হয়। আমি সাজিদকে জানাই, এই লোকটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তিনি ওই দলের পিআরও-র কাজ করেন।
চাইলে তাঁর মাধ্যমে ভিতরে ঢোকা সম্ভব। কিন্তু আমাকে রাজারাম জানিয়েছিলেন, সেদিন বালা সাহেব অসুস্থ এবং তাঁর ছেলেরা দলের একটি কর্মসূচিতে ব্যস্ত রয়েছেন। ফলে ভিতরে যাওয়া সম্ভব নয়। এরপর সাজিদের পরামর্শ মেনে একদিন রেগিকে কলও করি। জানাই, শিবসেনার জন্য আমেরিকা থেকে ভালো ফান্ড কালেক্ট করা যেতে পারে।
সেজন্য বালা সাহেবকে কীভাবে আমেরিকা নিয়ে যাওয়া যায় তা নিয়েও আমাদের মধ্যে আলোচনা হয়। কিন্তু রেগি জানান, চিকিৎসকের পরামর্শে বালা সাহেবকে বিদেশে যেতে বারণ করা রয়েছে। সেই তথ্য আমি আবার মেজর ইকবালকে মেল করে জানাই। সেখান থেকে আমাকে নির্দেশ দেওয়া হয়, রেগির সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখতে।
এরপরেই মেলের মাধ্যমে আমার আর রাজারামের কথাবার্তা শুরু হয়। তাঁকে জানাই, আমাদের সংস্থা ভারতে পাওয়ার, মেডিসিন, এডুকেশন, কনস্ট্রাকশন সহ একাধিক ব্যবসায় কয়েকশো কোটি টাকা বিনিয়োগ করতে চায়। উত্তরে ২০০৮ সালের ১৯ মে আমাকে রাজারাম লেখেন, 'যদি আমেরিকার কেউ আমাদের দেশে ইনভেস্ট করতে চায়, তাহলে আমিই হচ্ছি তাদের জন্য সেই আদর্শ ব্যক্তি। সরকারের বরাদ্দ করা দশ হাজার কোটি টাকার প্রকল্প পকেটে নিয়ে বহুদিন ধরে বসে রয়েছি।
আপনি জানেন, আমি একজন রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব। মুম্বই, দিল্লি এবং গুজরাটে ভালো যোগাযোগ রয়েছে। ফলে এই তিনটি জায়গার প্রভাবশালী রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বদের সঙ্গে আমার স্ট্রং কানেকশনকে কাজে লাগানো যেতে পারে। আপনি যদি চান তাহলে আমি আমেরিকাতে গিয়ে প্রেজেন্টেশন দেখাতে পারি। যাতে ফান্ড কালেক্টও করা যায়। ইচ্ছুক হলে খুব দ্রুত আপনি প্রজেক্ট রিপোর্ট পাঠান, যাতে আমরা যৌথ উদ্যোগে ব্যবসা শুরু করতে পারি। আরও একটা কথা, ওখানে আইটি-র বাজার কেমন?
আমেরিকার বিভিন্ন তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থার সঙ্গে যদি আপনাদের সম্পর্ক ভালো থাকে তাহলে সে বিষয়ে এগোনো যেতে পারে। আমি ১৬ বছরের অভিজ্ঞতা সম্পন্ন একজন কম্পিউটার সায়েন্স ইঞ্জিনিয়ার।' ওই মেল পেয়েই পুরো বিষয়টি নিয়ে একদফা আলোচনা হয় লস্করের নেতা তাহাউর রানা এবং মেজর ইকবালের সঙ্গে। তাঁরা পরামর্শ দেন, রেগির সঙ্গে সম্পর্ক রেখে চলতে।
এরপর ফের ২৩ মে আমি তাঁকে পাল্টা মেল করি। তাতে লিখি, 'আমার বস মিস্টার স্যান্ডার্স এই মুহূর্তে ছুটি কাটাতে স্পেনে রয়েছেন। তিনি ফিরে আপনার সঙ্গে কথা বলবেন। তাঁর সঙ্গে এখানকার সরকারের বেশ ভালো সম্পর্ক রয়েছে, যা আমাদের দু'পক্ষের কাজে লাগবে। অন্য বিষয়ের ক্ষেত্রে বলতে পারি, ফান্ড সংগ্রহের জন্য আমরা নিউ ইয়র্ক, শিকাগো সহ বিভিন্ন শহরে অনুষ্ঠান করতে পারব। যেখানে বিপুল সংখ্যক অডিয়েন্স হাজির হতে পারবেন। ফলে আমার বস জানিয়েছেন, আপনার দলের(শিবসেনা) বড় বড় নেতাদের এখানে আনতে পারলে প্রচুর টাকা তোলা সম্ভব হবে। আপনি কি সেটা করতে পারবেন?'
এই মেলের বয়ান ফরোয়ার্ড করার পাশাপাশি আমি সাজিদ মীরকেও মেলে একটা নোট পাঠাই। তা হলো: 'আমি এই লোকটিকে এনগেজ করে রাখতে চাইছি। যদি তিনি বালা সাহেব এবং উদ্ধব ঠাকরেকে এখানে আনতে পারেন, তবে আমি ওদের আরও ঘনিষ্ঠ হতে পারব।' এর কিছুদিনের মধ্যে ফের মেল করে রাজারাম জানান, তাঁর একজন পরিচিত রয়েছেন, যাঁকে কিছু 'দিলে' টেবিলের নীচ দিয়ে সরকারি প্রজেক্ট পাওয়া যেতে পারে।
আর যদি প্রাইভেট সেক্টর হয়, তাহলে তো কথাই নেই। আমরা সব কাজ পেয়ে যাব। সেখান থেকে যে কোটি কোটি টাকা আয় হবে, তা আমার ট্রাস্টের মাধ্যমে শো করা হবে। খাতায় কলমে বলা থাকবে, সোশ্যাল ওয়ার্ক করার জন্য বিভিন্ন সংস্থা আমাদের কনসালটেন্সি ফি দিয়েছে।'
২০০৮-এর জুন মাসে গিয়ে এই কাজের কথা এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য আমার রাজারামকে দশ লক্ষ টাকা দেওয়ার কথাও ছিল। কিন্তু এরপরেই আচমকা লস্করের নেতাদের নির্দেশ আসায় আমি রেগির সঙ্গে যোগাযোগ বন্ধ করে দিই।