• রায়গঞ্জে প্রচারে গরহাজির দীপা, এই প্রথম ছেদ পড়ল ট্রাডিশনে
    এই সময় | ২৩ এপ্রিল ২০২৪
  • রণবীর দেব অধিকারী, রায়গঞ্জ

    সিকি শতকে এই প্রথম ট্রাডিশনে ছেদ! রায়গঞ্জের ভোটে নেই দাশমুন্সি পরিবার। প্রিয়রঞ্জনের পর তাঁর শূন্যস্থান পূরণ করে রায়গঞ্জে শক্ত হাতে কংগ্রেসের হাল ধরেছিলেন প্রিয়জায়া দীপা দাশমুন্সি। কিন্তু এ বার সেই দীপাও নেই ভোটযুদ্ধের ময়দানে। কার্যত এই প্রথম দীপাকে ছাড়াই রায়গঞ্জে ভোটে লড়ছে কংগ্রেস।দীপার অনুপস্থিতিতে অনেকের মনেই প্রশ্ন, তবে কি রায়গঞ্জের রাজনীতিতে দাশমুন্সি পরিবারের ইতি? রায়গঞ্জে শিলিগুড়ি মোড়ে স্ট্যাচু হয়ে দাঁড়িয়ে আছেন প্রয়াত সাংসদ ও কেন্দ্রীয় মন্ত্রী প্রিয়রঞ্জন দাশমুন্সি। প্রিয় নেতার পাথর-প্রতিমার দিকে তাকিয়ে কংগ্রেসের পুরোনো কর্মীদের মন কেঁদে ওঠে। স্মৃতির রঙে নানা ছবিও হয়তো আঁকেন তাঁরা।

    কেননা, একটা সময় প্রিয়-দীপাকে ঘিরেই রায়গঞ্জের মাটিতে উজ্জীবিত হয়ে উঠেছিল ১৪০ বছরের প্রাচীন দলটা। ভোট এলে কালিয়াগঞ্জের শ্রীকলোনিতে দাশমুন্সি বাড়িটাই হয়ে উঠত কংগ্রেসের ওয়ার-রুম। মানুষের ভিড়ে গমগম করত গোটা বাড়ি। অসুস্থ প্রিয়রঞ্জন রাজনীতিতে নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়লে, তারও পরে ২০১৭ সালে তিনি প্রয়াত হওয়ার পরেও দীপা দাশমুন্সির উপস্থিতিতে কংগ্রেসের সেই কার্যালয় ভরে থাকত কর্মীদের ভিড়ে।

    এখন সেই নির্জন বাড়ি জুড়ে শুধুই শূন্য ঘর, ফাঁকা উঠোন আর পিনড্রপ সাইলেন্স। ২০১৯-এর ভোটে হেরে সেই যে দীপা, প্রিয় গড়ের মাটি ছাড়লেন, মাঝে বিশেষ প্রয়োজন ছাড়া আর তিনি খুব একটা এমুখো হননি। শুধু তাই নয়, কংগ্রেসের অন্দরে কান পাতলে শোনা যায়, জেলার নেতা-কর্মীদের সঙ্গে সমস্তরকম যোগাযোগই ছিন্ন করে দিয়েছেন তিনি।

    ভোটের ভেঁপু বেজে উঠতেই দলের জেলা কার্যালয় রায়গঞ্জের গান্ধী ভবনে কর্মীদের আনাগোনা কিঞ্চিৎ বেড়েছে বটে। কিন্তু দীপার অনুপস্থিতি নিয়ে নানা রকম প্রশ্ন ও গুঞ্জন ছড়াচ্ছে জেলা কংগ্রেসের অন্দরমহলেই। নীচুতলার কর্মীদের প্রশ্ন, দীপা আসছেন না কেন? কোনও মান-অভিমান? নাকি পরপর দু’বার হেরে যাওয়া দীপাকে এবার রায়গঞ্জে দল প্রার্থী করেনি বলেই হাল ছেড়েছেন তিনি?

    মাথায় দাশমুন্সি পরিবারের হাত না থাকলে দলের প্রার্থীর কি জয়ের মুখ দেখা সম্ভব? লড়াইটা কি কঠিন হয়ে যাচ্ছে? দীপা দাশমুন্সির প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি। তাঁকে ফোন করা হলেও যথারীতি তিনি ফোন ধরেননি। তবে উত্তর দিনাজপুর জেলা কংগ্রেস সভাপতি মোহিত সেনগুপ্ত বলেন, ‘দীপা বৌদি থাকতে পারলে ভালো হতো। রাহুল গান্ধী এলেও কর্মীরা বাড়তি অক্সিজেন পেতেন।

    কিন্তু দীপা দাশমুন্সি তেলেঙ্গনা, কেরালা ও লক্ষদ্বীপে ভোটের দায়িত্বে থাকায় তিনি আসতে পারছেন না।’ কংগ্রেস প্রার্থী ভিক্টরের বক্তব্য, ‘শ্রদ্ধেয় নেতা প্রিয়রঞ্জন দাশমুন্সির মূর্তিতে মালা দিয়ে মাঠে নেমেছি। এখনও রায়গঞ্জের মানুষের কাছে প্রিয় নামের আবেগ অটুট। তিনি রায়গঞ্জের মানুষকে যে স্বপ্ন দেখিয়েছিলেন, আমি সেই স্বপ্নগুলো পূরণ করার লক্ষ্য নিয়েই লড়াই করছি।’

    আলি ইমরান রমজ ওরফে ভিক্টরের জয়-পরাজয়ের ভাগ্য সম্পূর্ণভাবে ন্যস্ত হয়েছে স্রেফ জেলার বাম-কংগ্রেস জোট নেতৃত্বের হাতেই। দলীয় প্রার্থীর সমর্থনে প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীররঞ্জন চৌধুরী একবার ঝটিতি প্রচার করে গিয়েছেন। কিন্তু ওই পর্যন্তই। কংগ্রেস সূত্রের খবর, রাহুল গান্ধী প্রচারে আসার কথা থাকলেও প্রয়োজনীয় মাঠ ও প্রশাসনের অনুমতি না মেলায় তা বাতিল হয়েছে।

    সিপিএমেরও কোনও বড় নেতাকে প্রচারে আসতে দেখা যায়নি। সাতটি বিধানসভা কার্যত জোটের জেলা নেতাদের নিয়েই চষে বেড়াচ্ছেন তরুণ তুর্কি ভিক্টর।
  • Link to this news (এই সময়)