সম্প্রতি এক সমাবেশে কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধীর ভাষমের একটি ক্লিপিং ভাইরাল হয়েছে সোশ্যাল মিডিয়ায়। ওই ভিডিয়োতে রাহুল গান্ধীকে বলতে শোনা যায়, 'রাস্তা ঘুরে বেড়ানো যুবক যাঁরা ইনস্টাগ্রাম এবং ফেসবুক ব্যবহার করছে, তাদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে বছরে এক লাখ টাকা অর্থাৎ মাসে ৮৫০০ টাকা জমা হবে। টকাটক, টকাটক প্রত্যেকের অ্যাকাউন্টে জমা পড়বে এই টাকা।'সম্প্রতি ওই পোস্টটি শেয়ার করা হয়েছে মেঘ আপডেট এবং ঋষি বাগ্রী এবং ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) সোশ্যাল মিডিয়ার প্রধান রিচা রাজপুত এক্স অ্যাকাউন্ট থেকে। মেঘ আপডেটস ভিডিয়োটি শেয়ার করে ক্য়াপশনে লিখেছে, 'যেসব যুবকরা ২৪ ঘণ্টা ইনস্টাগ্রাম, ফেসবুক ব্যবহার করেন কংগ্রেস ক্ষমতায় আসলে তাদের অ্যাকাউন্টে প্রতি মাসে ৮৫০০ টাকা করে জমা করবে। টাকাটাক...টাকাটক। একই দাবিতে ভিডিয়োটি একাধিকবার শেয়ার করা হয়েছে। সত্যি কি রাহুল গান্ধী এমন কথা বলেছেন? ফ্য়াক্ট চেকের মাধ্যমে উঠে এল সত্যিটা।
অনুসন্ধান
রাহুলের বক্তৃতার দীর্ঘ সংস্করণে, গান্ধী কংগ্রেসের 'শিক্ষার অধিকার' প্রকল্পের কথা বলছিলেন। বিষয়টি ২০২৪ সালের কংগ্রেসের লোকসভা নির্বাচনী ইস্তেহারেও উল্লেখ করা হয়েছে ।
কংগ্রেসের ইস্তেহারে বলা হয়েছে, ক্ষমতায় এলে ২৫ বছরের কম বয়সী প্রতিটি ডিপ্লোমাধারী বা কলেজ স্নাতকদের জন্য একটি বেসরকারি বা সরকারি সেক্টরের কোম্পানিতে এক বছরের প্রশিক্ষণের জন্য নতুন শিক্ষানবিশ আইনের গ্যারান্টি মিলবে। এছাড়া কেন্দ্রীয় সরকারের বিভিন্ন স্তরে অনুমোদিত প্রায় ৩০ লাখ শূন্য পদ পূরণ করা হবে। এই সময়ের মধ্যে, অংশগ্রহণকারীরা এক লাখ টাকা বার্ষিক বৃত্তি পাবেন বলে ঘোষণা করা হয়েছে।
কী ভাবে ভিডিয়োটি খুঁজে পাওয়া গেল?
প্রথমে ভিডিয়োটির দীর্ঘ সংস্করণ অনুসন্ধান করা হয়েছিল। ২৯ এপ্রিল বিহারের ভাগলপুরে রাহুল গান্ধীর জনসভার একটি লাইভ স্ট্রিম খুঁজে পাওয়া যায়।
ভিডিয়োর ৯ মিনিট ৩০ সেকেন্ডের মাথায় রাহুল গান্ধী বলেন, নরেন্দ্র মোদী ভারতকে বেকারত্বের কেন্দ্রে পরিণত করেছেন। আপনারা যে কোনও যুবককে জিজ্ঞাসা করতে পারে তারা বর্তমানে কী করছে। প্রত্যেকেই বলবে তারা বেকার, কিছুই করে না। তারা দিনে ছয়-সাত ঘন্টা ইনস্টাগ্রাম এবং ফেসবুক ব্যবহার করে। কেন মোদীজি সারা দেশে বেকারত্ব ছড়িয়ে দিয়েছেন?'
এরপর রাহুল গান্ধী আরও বলেন, 'নরেন্দ্র মোদীজির নোটবন্দীকরণ এবং জিএসটির (গুডস অ্যান্ড সার্ভিসেস ট্যাক্স) নিয়মের গুঁতোয় কর্মসংস্থান ধ্বংস হয়ে গিয়েছে। এই কারণে ভারতে কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা যাবে না।'
রাহুল বলেন, 'ধনী পরিবারের পড়ুয়ারাই স্কলারশিপ পায়। চাকরি পায়। শিক্ষানবিশ হিসেবে এক বছর ট্রেনিং পায়। একটি অস্থায়ী চাকরি পায়, প্রশিক্ষণ পায় এবং বেতন পায়।'
১০ মিনিট ৩৯ সেকেন্ডের মাথায় রাহুল বলেন, 'এই ধরনের সুবিধা ভারতের বেকার যুবকদের জন্য উপলব্ধ নয়। শিক্ষানবিশ হয়ে বৃত্তির সুবিধা কেবল ধনী পরিবারের পড়ুয়ারাই পায়।'
১০ মিনিট ৫৬ সেকেন্ডে রাহুল গান্ধী বলেন, 'ধনীদের ছেলের যা করতে পারে তা দেশের যুবক করতে পারে না। ক্ষমতায় এলে এটাই হবে আমাদের দ্বিতীয় স্কিম। আমদের অগ্রাধিকার 'পেহলি চাকরি পাক্কি (শিক্ষার অধিকার) (প্রথমে চাকরি পাকা)।'
তারপরে তিনি এই স্কিমটি ব্যাখ্যা করে রাহুল বলেন, 'এই স্কিমে ভারতের সমস্ত স্নাতক বা ডিপ্লোমাধারীদের শিক্ষানবিশ হওয়ার অধিকার থাকবে।ট
১১ মিনিট ৩৭ সেকেন্ডে কংগ্রেস নেতাকে বলতে শোনা যায়, 'ক্ষমতায় এলে আমাদের সরকারই প্রথম যুবকদের চাকরির অধিকার দিতে চলেছে। আমরা যেমন এর আগে MNREGA (মহাত্মা গান্ধী জাতীয় গ্রামীণ কর্মসংস্থান গ্যারান্টি আইন)-এর অধীনে কর্মসংস্থানের অধিকার দিয়েছিলাম, একইভাবে অধিকার দেওয়া হবে পড়ুয়াদের। আমরা স্নাতকদের প্রথম চাকরির অধিকার দেব।'
১১ মিনিট ৫৯ সেকেন্ডের পর রাহুল গান্ধী বলেন, 'এক বছরের জন্য, সমস্ত স্নাতক এবং ডিপ্লোমাধারীরা শিক্ষানবিশ হতে পারবেন। শিক্ষানবিশ থাকাকালীন এক বছরের জন্য এক লাখ টাকা পাবে তারা (প্রতি মাসে ৮,৫০০ টাকা), যা তাদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে জমা হবে।'
১২ মিনিট ২০ সেকেন্ডের মাথায় রাহুল গান্ধী বলেন, 'তাদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে এবং প্রথম বছরে ভালো কাজ করলে তারা স্থায়ী চাকরি পাবে। এগুলো হবে শিক্ষানবিশের চাকরি। বেসরকারি খাতে এবং সরকারি খাতের ইউনিটে চাকরি পাবে তারা। সরকারি সংস্থায় যুবকরা প্রশিক্ষণ পাবে।'
১২ মিনিট ৪১ সেকেন্ডে রাহুল গান্ধী বলেনস 'আমাদের যুবকরা যারা রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে বেড়ায়, শুধু ইনস্টাগ্রাম এবং ফেসবুক ব্যবহার করে, তারা বছরে এক লাখ টাকা (মাসে ৮,৫০০ টাকা) পাবে। আমাদের সরকার ক্ষমতায় এলে এটি করবে।' এর অর্থ রাহুল বোঝাতে চেয়েছেন, শুধুমাত্র ইনস্টাগ্রাম এবং ফেসবুক ব্যবহার করে সময় নষ্ট করতে হবে না তাদের। শিক্ষনবিশ হয়ে টাকা রোজগারের সুযোগ মিলবে তাদের জন্য।
কংগ্রেসের ২০২৪ সালের নির্বাচনী ইস্তেহারেও বিষয়টির উল্লেখ রয়েছে ।
এক্ষেত্রে রাহুল গান্ধীর বক্তৃতার একাংশ কেটে বিভ্রান্তিকর দাবিতে তা ভাইরাল করা হয়েছে। যে ভিডিয়ো দেখে মনে হচ্ছে তিনি যেন বেকারত্বের বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য সারা দিন সোশ্যাল মিডিয়ায় ব্যবহাকারী যুবকদের অর্থ প্রদান করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। আসলে বিষয়টি মোটেও সেরকম নয়। বক্তব্যের আগের ও পরের অংশ ছেঁটে ফেলা হয়েছে বলেই বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে।
সিদ্ধান্ত
এত সব কিছুর থেকে এটাই প্রমাণিত হয় যে বিহারে রাহুল গান্ধীর সাম্প্রতিক বক্তৃতার একটি ক্লিপ করা ভিডিয়ো মিথ্যা দাবি সহ শেয়ার করা হচ্ছে।
(This story was originally published by The Quint and translated and edited by Ei Samay Digital as part of the Shakti Collective)