Oral Cancer Detection : ওরাল ক্যান্সার জানা যাবে ১০ মিনিটেই
এই সময় | ২৪ এপ্রিল ২০২৪
অনির্বাণ ঘোষচুপিসারে শরীরে কি বাসা বেঁধেছে ওরাল ক্যান্সার? ১০ মিনিটেই তা জেনে যাওয়ার রাস্তা চওড়া হলো এবার। কেন্দ্রীয় ওষুধ নিয়ন্ত্রক সংস্থার প্রাথমিক ছাড়পত্র মিলেছে ওরাল ক্যান্সার স্ক্রিনিং কিটের। অধিকাংশ ক্ষেত্রে প্রাথমিক অবস্থায় বোঝাই যায় না ক্যান্সারের অস্তিত্ব। যখন বোঝা যায় নানা শারীরিক উপসর্গের কারণে, তখন দেখা যায় রোগটা ডালপালা মেলেছে বিস্তর। ক্যান্সার চিকিৎসায় এটাকেই সবচেয়ে বড় অন্তরায় বলে মনে করেন চিকিৎসকরা। তাই দেরিতে রোগ ধরার পড়ার জেরেই বহু মৃত্যু ঠেকানো যায় না।
মুখগহ্বরের ক্যান্সারও তার ব্যতিক্রম নয়। দেশে প্রতি বছর অন্তত ৭৭ হাজার ওরাল ক্যান্সার চিহ্নিত হয়, যাঁর মধ্যে প্রায় ৫২ হাজার রোগীই মারা যান। তাই চিকিৎসকরা জানাচ্ছেন, একেবারে প্রাথমিক পর্যায়ে ব্যথাহীন ভাবে বাড়িতেই ১০ মিনিটে যদি ওরাল ক্যান্সারের অস্তিত্ব ধরে ফেলার পন্থা নাগালে চলে আসে, তা হলে বাঁচানো যায় অসংখ্য প্রাণ।
আর্লি-সাইন নামে নাগপুরের একটি বায়োটেক স্টার্ট-আপ ওরাল ক্যান্সারের এই ডায়াগনস্টিক কিটটি তৈরি করেছে। সংস্থা সূত্রে খবর, ঘুম থেকে ওঠার পরে শুধু জল দিয়ে মুখ কুলকুচি করে ওই কিটের মধ্যে ৫ মিলিলিটারের মতো লালা দিলে ১০ মিনিটের মধ্যেই ফলাফল পজ়িটিভ না নেগেটিভ, তা পরিষ্কার হয়ে যাবে। ঠিক যেমন, ইউরিন প্রেগন্যান্সি ডিটেকশন কিটে গর্ভসঞ্চার হয়েছে কি হয়নি, তা বোঝা যায়। ওরাল ক্যান্সার কিটে পজ়িটিভ রেজাল্ট এলে চিকিৎসকের পরামর্শে তার পর বায়োপসি করে নিশ্চিত হতে হবে ক্যান্সার সম্পর্কে।
১৫০ জনের উপর হওয়া ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের রিপোর্ট ওই সংস্থার তরফে জমা দেওয়া হয়েছিল সেন্ট্রাল ড্রাগ স্ট্যান্ডার্ড কন্ট্রোল অর্গানাইজশন (সিডিএসসিও)-এ। সেই রিপোর্টে ৯৮ শতাংশ কার্যকারিতা দেখা গিয়েছে ওই কিটের। এর পরেই ওই সংস্থাকে কিট তৈরি করে বাজারজাত করার পাশাপাশি আরও বড় আকারে দেশের বিভিন্ন শহরে ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল করার অনুমোদন দিয়েছে সিডিএসসিও। চিকিৎসকরা জানাচ্ছেন, মুখগহ্বর, গলা, ঠোঁট, মাড়ি ও জিভে টিউমার বা ক্ষত দেখা দেওয়ার আগেই কিটটি দ্রুত পরীক্ষা করে রোগীকে ক্যান্সারের অস্তিত্ব জানিয়ে দিতে পারছে, সেটাই সবচেয়ে বড় পাওনা। এতে দ্রুত চিকিৎসা শুরু করা গেলে নিরাময়ের সম্ভাবনাও বেড়ে যাবে অনেকটা।
ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল বিশেষজ্ঞ স্নেহেন্দু কোনার বলেন, ‘এক বছর ধরে ট্রায়াল চালিয়ে ১৫০টি ইনহাউসে টেস্ট স্যাম্পলের ফলাফল বিচার করে বলাই যায় যে, প্রাথমিক পর্যায়ের ট্রায়ালের কার্যকারিতা খুবই ভালো। ৯৮ শতাংশ সেনসিটিভিটি এবং ১০০ শতাংশ স্পেসিফিসিটি লক্ষ্য করা গিয়েছে। অর্থাৎ, ৯৮ শতাংশ ক্ষেত্রে সঠিক রোগনির্ণয় করতে পেরেছে এবং ১০০ শতাংশ ক্ষেত্রে নিরোগ ব্যক্তি চিহ্নিতকরণেও সফল হয়েছে ওই কিট।’ তিনি জানান, বৃহত্তর ট্রায়ালের জন্য ইতিমধ্যেই কলকাতার একাধিক হাসপাতালের ক্যান্সার বিভাগের সঙ্গে কথাবার্তা শুরু হয়ে গিয়েছে। তাঁর আশা, অচিরেই বাজারজাত হবে ওই কিট। দামও থাকবে নাগালের মধ্যে, সম্ভবত ১০০০ টাকার নীচেই।
সৈকত দেবের মতো ডেন্টাল সার্জেনরা জানাচ্ছেন, ওই কিট দারুণ উপকারে লাগবে মানুষের। কেননা, নিজে থেকেই যে কেউ বাড়িতে এই কিটের সাহায্যে ওরাল ক্যান্সার স্ক্রিনিং সেরে ফেলতে পারবেন। তাঁর কথায়, ‘রেজাল্ট পজিটিভ এলে তাড়াতাড়ি চিকিৎসা শুরু হবে বলে প্রাণহানির আশঙ্কা এড়ানো যাবে অনেকাংশে।’ ক্যান্সার বিশেষজ্ঞ দেবপ্রিয় মণ্ডলও মনে করেন, ওরাল ক্যান্সার চিহ্নিত ও চিকিৎসা এই কিটের দৌলতে আরও সহজ হয়ে যাবে আগামী দিনে। যদিও এখনই এই কিট নিয়ে বাড়াবাড়ি উচ্ছ্বাস দেখানোয় আপত্তি আছে হেড অ্যান্ড নেক অঙ্কোসার্জেন সৌরভ দত্তের। তিনি বলেন, ‘আরও বড় ট্রায়াল দরকার। তার পরেই কিটটির কার্যকারিতা নিয়ে নিশ্চিত হওয়া যাবে।’