SSC Recruitment : কোন পথে নতুন নিয়োগ, ধন্দে সব পক্ষই
এই সময় | ২৪ এপ্রিল ২০২৪
এই সময়: শুধু একলপ্তে প্রায় ২৬ হাজার নিয়োগ বাতিলই নয়, ২০১৬-এর নিয়োগ প্রক্রিয়া নতুন করে শুরু করার নির্দেশ সোমবার দিয়েছে কলকাতা হাইকোর্ট। বিচারপতি দেবাংশু বসাক ও বিচারপতি সব্বর রশিদির ডিভিশন বেঞ্চের নির্দেশ, লোকসভা ভোটের ফল প্রকাশের ১৫ দিনের মধ্যে এই প্রক্রিয়া নতুন করে শুরু করতে হবে। কিন্তু কীভাবে এই প্রক্রিয়া শুরু করা যাবে, তা নিয়ে আন্দোলনরত বঞ্চিত চাকরিপ্রার্থী থেকে শুরু করে এসএসসি-সব মহলেই সংশয় রয়েছে।এক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় প্রশ্ন হিসাবে উঠে আসছে-২০১৬ সালের এসএসসি-র বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী যে প্রায় ২৩ লক্ষ পরীক্ষার্থী নিয়োগ প্রক্রিয়ায় সামিল হয়েছিলেন, নতুন করে নিয়োগ হলেও কি এঁরাই শুধু অংশ নিতে পারবেন? তাঁদের অনেকেই বয়সসীমার যোগ্যতামান আর বর্তমান নিয়মে পূরণ করতে পারবেন না, সেক্ষেত্রে তাঁদের কী হবে? এই আট বছরে যে বিপুল সংখ্যায় নতুন চাকরিপ্রার্থী তৈরি হয়েছেন, তাঁরা কোথায় যাবেন?
বস্তুত, হাইকোর্টের রায়ের পরে এসএসসি ও রাজ্য সরকার যেমন সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হওয়ার কথা ভাবছে, তেমনই আদালতের নির্দেশ খতিয়ে দেখে এই ধোঁয়াশার জায়গাগুলি দূর করতে আইনি পরামর্শও নিচ্ছে। আর ধর্মতলায় ১১০০ দিনের বেশি যে বঞ্চিত চাকরিপ্রার্থীরা তাঁদের নিয়োগের দাবিতে আন্দোলন চালাচ্ছেন, তাঁরাও আদালতের রায়ে পড়েছেন অথৈ জলে। কারণ, নতুন যে নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু করার নির্দেশ দিয়েছে হাইকোর্ট, সেখানে তাঁরা কীভাবে সামিল হবেন-তা তাঁরাও বুঝে উঠতে পারছেন না।
বিকাশ ভবনের এক কর্তার ব্যাখ্যা, ২০১৬ সালের বিজ্ঞপ্তি মেনে নবম-দশম ও একাদশ-দ্বাদশে শিক্ষক এবং গ্রুপ-সি, গ্রুপ-ডি পদে শিক্ষাকর্মী পদে নিয়োগে সব মিলিয়ে প্রায় ২৩ লক্ষ প্রার্থী পরীক্ষায় বসেছিলেন। আদালতের নির্দেশ মেনে রাজ্য সরকার যদি পুরোনো চাকরিপ্রার্থীদেরই শুধু নিয়োগের ব্যবস্থা করতে চায়, তাহলে আইন সংশোধন করতে হবে। যেহেতু এই পরীক্ষার্থীদের অনেকেই বয়সসীমা পেরিয়ে গিয়েছেন, সেই ছাড়ের বন্দোবস্ত করতে হবে।
তারপরেও আরও বেশ কয়েক লক্ষ পরীক্ষার্থী যে নতুন করে নিয়োগ হলে তাতে সামিল হতে চাইবেন, সেটাই স্বাভাবিক। সেটার ক্ষেত্রে আইনিভাবে কী করা যাবে, তা এখনও স্পষ্ট নয়। শিক্ষা দপ্তরের আধিকারিকরা মনে করছেন, এই আট বছরে আরও অন্তত ১০ লাখ পরীক্ষার্থী ইতিমধ্যে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর উত্তীর্ণ হওয়ার পাশাপাশি বিএড প্রশিক্ষণও নিয়েছেন। ফলে আগের ২৩ লক্ষ এবং এখনকার অন্তত ১০ লক্ষ পরীক্ষার্থীকে ধরা হয়, তাহলে সব মিলিয়ে প্রতিযোগীর সংখ্যা ৩০ লাখ ছোঁবে।
হাইকোর্টের রায়ে স্পষ্ট করা নেই যে নতুন করে নিয়োগ হলে সেখানে নতুনরাও সুযোগ পাবেন কি না। নিয়োগ মামলার সঙ্গে যুক্ত এক আইনজ্ঞের ব্যাখ্যা, 'শুধু পুরোনো প্রার্থীদের জন্যই নিয়োগ শুরু করতে হলে নতুন সম্ভাব্য চাকরিপ্রার্থীরাও আদালতের দ্বারস্থ হতে পারেন। কারণ, একটা নিয়োগ প্রক্রিয়ায় এভাবে কাউকে বাদ দেওয়া যায় কি না, সে প্রশ্ন ওঠাটা খুব স্বাভাবিক।'
আরও একটা প্রশ্নও এক্ষেত্রে উঠেছে, তা হলো-২০১৬-এর চাকরিপ্রার্থীদের নিয়োগ নতুন করে শুরু করতে হলে সেটা কি তৎকালীন শূন্যপদের ভিত্তিতে হবে? নাকি এখনও পর্যন্ত থাকা শূন্যপদের ভিত্তিতে তাঁরা নিয়োগ পরীক্ষায় বসবেন?
এসএসসি-র এক আধিকারিক অবশ্য বলছেন, 'আমরা তো সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হচ্ছিই। শীর্ষ আদালত কী ব্যাখ্যা দেয় অথবা হাইকোর্টের রায়ের উপর কোনও নির্দেশ দেয় কি না, সেটার জন্য আমরা অপেক্ষা করছি।' তবে তাঁর সংযোজন, 'নতুন করে নিয়োগ করতে হলে আইন সংশোধন করতেই হবে। এবং আদালতের নির্দেশ মেনে নতুন করে টেন্ডার ডেকে ওএমআর তৈরি, মূল্যায়ন, সংরক্ষণের জন্য নতুন সংস্থাকে নিয়োগ করতে হবে। পাশাপাশি নতুন করে বিজ্ঞপ্তি জারি করে পরীক্ষা নিয়ে সফল প্রার্থীদের ইন্টারভিউয়ের জন্য ডেকেও পাঠাতে হবে। সেটা যথেষ্ট সময়সাপেক্ষ প্রক্রিয়া। ততদিনে এই চাকরিপ্রার্থীদের বয়স আরও বেড়ে যাবে।'
এসএসসি-র মাধ্যমে শিক্ষক নিয়োগের মাপকাঠিতে লিখিত পরীক্ষা ও ভাইভার পাশাপাশি শিক্ষাগত যোগ্যতাও গুরুত্ব পায়। সেই নিরিখে গত আট বছরে মাধ্যমিক, উচ্চ মাধ্যমিক, স্নাতক এবং স্নাতকোত্তরে প্রাপ্ত নম্বরে ঢল নেমেছে। ফলে ২০১৬ সালের পরীক্ষার্থীরা নতুন নিয়োগ প্রক্রিয়ায় কতটা প্রতিদ্বন্দ্বিতার সুযোগ পাবেন, তা নিয়ে প্রবল সংশয় তৈরি হয়েছে। গত পাঁচ বছরে তিন ধাপে রাস্তায় বসে ১১৩৬ দিন ধরে আন্দোলনরত 'বঙ্গীয় ন্যায্য অধিকার প্রতিষ্ঠা মঞ্চ'র তরফে অভিষেক সেন বলেন, 'আমরা ইতিমধ্যে যোগ্যতার প্রমাণ দিয়েছি। নতুন করে আবার পরীক্ষায় বসতে যাব কেন? ওএমআর, ভাইভা এবং অ্যাকাডেমিকের নম্বর এসএসসি-র কাছেই রয়েছে। সেগুলো খতিয়ে দেখে সহজেই আবার যোগ্যদের প্যানেল তৈরি করা যাবে।'
তাঁদের সঙ্গেই দীর্ঘদিন আন্দোলনরত মতিউর রহমানের কথায়, 'নতুন করে নিয়োগ পরীক্ষায় বসতে হলে তো আমারই বয়স পেরিয়ে গিয়েছে। এ রকম অনেকেই আছেন। তাঁদেরই বা কী হবে?' আবার নতুন নিয়োগ বিজ্ঞপ্তির দাবিতে করোনা অতিমারীর পর লাগাতার আন্দোলনরত পশ্চিমবঙ্গ এসএসসি এবং এসএলএসটি গ্রুপ সি-ডি একতা মঞ্চের শঙ্কর সামন্তর বক্তব্য, 'আদালত যদি ২০১৬ সালের সঙ্গে আপডেটেড সিট যুক্ত করে, তা হলে নতুনরাও ক্ষতিগ্রস্ত হবে। আমরা সব মিলিয়ে সাত-আট লাখ প্রার্থী আছি। পুরোনোরা আমাদের সিটেও ভাগ বসাবেন। একাধিকবার সুযোগ পাবেন তাঁরা। তাহলে তো আমরা বঞ্চিত হব।'
বিতর্কিত চাকরি প্রাপকদের আইনজীবী অনিন্দ্য লাহিড়ি অবশ্য দাবি করেছেন, পুরো নিয়োগ প্রক্রিয়াই নতুন করে শুরু করার কথা বলা হয়েছে হাইকোর্টের নির্দেশে। তিনি বলেন, 'এর অর্থ, প্রথম থেকে 'সিলেকশন' (চাকরিপ্রাপক নির্বাচন) প্রক্রিয়া চালাতে হবে। তার মানে নতুন করে বিজ্ঞাপন দিতে হবে। তাতে আজকের যাঁরা চাকরিপ্রার্থী, তাঁরাও অংশগ্রহণ করতে পারবেন।'
তাঁর সংযোজন, 'পাশাপাশি নতুন প্রক্রিয়ায় ওএমআর মূল্যায়নকারীদের টেন্ডার প্রক্রিয়ার মাধ্যমে বেছে নিতে হবে। কী কী যোগ্যতা থাকলে ওএমআর মূল্যায়নের প্রক্রিয়ায় অংশ নেওয়া যাবে, সেটিও এসএসসি-কে ওয়েবসাইটে দিতে হবে।'