তৃণমূল কংগ্রেস বিরোধী ভোটারদের কার্যত প্রকাশ্যে হুমকি দেওয়ার অভিযোগ উঠেছিল তাঁর বিরুদ্ধে। আর এবার সেই অভিযোগেই উত্তর দিনাজপুরের চোপড়ার বিধায়ক হামিদুল রহমানকে শোকজ নোটিশ পাঠাল নির্বাচন কমিশন। সম্প্রতি এক নির্বাচনী সভায় শাসকদলের বিধায়ককে কার্যত হুঁশিয়ারির সুরে বলতে শোনা যায়, তৃণমূলকে ভোট না দিলে কেন্দ্রীয় বাহিনী চলে যাওয়ার তাঁদের 'ফোর্স'ই থাকবে, সেই সময় এই ফোর্সের সঙ্গেই থাকতে হবে, তখন কিছু হলে যেন তাঁরা যেন বলতে না আসেন। দার্জিলিং লোকসভা কেন্দ্রের তৃণমূল কংগ্রেস প্রার্থী গোপাল লামার সমর্থনে চোপড়া ব্লকের মাঝিয়ালি গ্রাম পঞ্চায়েতের চুয়াগাড়ি চৌরঙ্গী মোড়ে নির্বাচনী সভায় বক্তব্য রাখার সময় এমন বক্তব্য শোনা গিয়েছিল তাঁর মুখে।বিধায়কের এহেন মন্তব্যকে ঘিরে জোর চর্চা শুরু হয়। রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী চোপড়ার বিধায়কের এই মন্তব্যের প্রেক্ষিতে নির্বাচন কমিশনের কাছে অভিযোগ জানান। এবার এই অভিযোগের ভিত্তিতেই বিধায়ক হামিদুল রহমানকে শোকজ করল নির্বাচন কমিশন। বিজেপি শিবির এই ঘটনাকে তাদের নৈতিক জয় বলে দাবি করলেও, তৃণমূল কংগ্রেসের পক্ষ থেকে এই শোকজের সমালোচনা করা হয়েছে।
এই বিষয়ে বিধায়ক হামিদুল রহমানকে একাধিকবার ফোন করেও যোগাযোগ করা যায়নি। তবে তৃণমূল কংগ্রেসের জেলা সভাপতি কানাইয়ালাল আগরওয়াল বলেন, 'বিধায়কের বক্তব্যের বিকৃত অর্থ করা হয়েছে। তিনি বলতে চেয়েছেন, নির্বাচনের পর কেন্দ্রীয় বাহিনী এলাকা থেকে চলে গেলেও, তাঁর কর্মীরা আগের মতোই সাধারণ মানুষের সুখে, দুঃখে পাশে থাকবেন। তিনি ভোটারদের কোনওরকম হুমকি দেননি। তার বক্তব্যের বিকৃত অর্থ করে বিজেপি নির্বাচন কমিশনের কাছে অভিযোগ দায়ের করেছে। বিরোধী দলনেতার কাজই অবশ্য বিভিন্ন জায়গায় অভিযোগ জানান।' পালটা এই বিষয়ে প্রতিক্রিয়া গিয়েছে গেরুয়াশিবিরও। বিজেপির জেলা সভাপতি বাসুদেব সরকার বলেন, 'নিশ্চিত পরাজয় বুঝে গিয়েই তৃণমূল কংগ্রেসের নেতারা হুমকি দিতে শুরু করেছেন। পঞ্চাতের মত ভোটলুঠ এবার আমরা করতে দেব না।'
প্রসঙ্গত, গত পঞ্চায়েত নির্বাচনে রাজ্যের অন্যতম উত্তেজনাপ্রবন এলাকা ছিল চোপড়া। সিপিএম ও কংগ্রেস মিছিল করে মনোনয়নপত্র জমা দিতে যাওয়ার সময় তাদের উপর গুলি চালান ও বোমাবাজির অভিযোগও উঠেছিল গুলিবিদ্ধ হয়ে এক সিপিএম কর্মীর মৃত্যুও। আরও বেশ কয়েকজন গুরুতরভাবে আহতও হয়েছিলেন। এই ঘটনার পর উত্তাল হয়ে ওঠে রাজ্য রাজনীতি। বিরোধীদের উপর তৃণমূল কংগ্রেসের এই হামলার পর বিরোধীরা কেউ মনোনয়নপত্র দাখিল করতেই পারেননি। একপ্রকার বিনা প্রতিদ্বন্দ্বীতায় পঞ্চায়েত নির্বাচনে জয়লাভ করে তৃণমূল কংগ্রেস।