প্রথম দফা নির্বাচনের পরই রাহুল গান্ধীকে নিশানা করে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বলেছিলেন, কংগ্রেসকে এবার রাজপুত্রের জন্য নতুন আসনের সন্ধান করতে হবে। কারণ ওয়েনাড়়ের ভোটের পর সেখান থেকেও পালিয়ে যাবেন তিনি। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের একাংশও মনে করছেন, ওয়েনাড়়ের লড়াই এ বছর রাহুলের জন্য ততটাও সহজ নয়। তাঁর সামনে দুই শক্তিশালী প্রতিদ্বন্দ্বী। BJP নিজেদের পার্টি সভাপতি কে সুরেন্দ্রকে ময়দানে নামিয়েছে। বামেদের তরফে টিকিট দেওয়া হয়েছে অ্যানি রাজাকে। মনে করা হচ্ছে এই টাফ ফাইট সামাল দিতে এবার আর দ্বিতীয় কোনও আসনে লড়ছেন না রাহুল গান্ধী। মনে করা হচ্ছে ওয়েনাড়ে আগামী ২৬ এপ্রিল ভোটগ্রহণের পর অনেক সমীকরণ বদলে যাবে।
অমেঠিকে আলবিদাঅমেঠি কংগ্রেসের পুরনো গড়। ১৯৭৭ সালে জনতা পার্টির টিকিটে রবীন্দ্র প্রতাপ সিং এবং ১৯৯৮ সালে BJP-র সঞ্জয় সিংকে বাদ দিয়ে বাকি সমস্ত লোকসভা নির্বাচনে কংগ্রেস জয় পেয়েছে। গান্ধী পরিবারও এই আসনের পিছনে যথেষ্ঠ সময় দিয়েছে। প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী রাজীব গান্ধী হোক কিংবা তাঁর ভাই সঞ্জয় গান্ধী অথবা প্রাক্তন কংগ্রেস সভাপতি তথা তাঁর স্ত্রী সোনিয়া গান্ধী সকলেই এই আসনে জয় এনে দিয়েছেন। ২০০৪ সালে রাহুল সংসদীয় রাজনীতিতে প্রবেশ করেন। তিনি অমেঠি থেকে নির্বাচনী জয়ী হয়ে প্রথমবার সাংসদ নির্বাচিত হন। এরপর ২০০৯ এবং ২০১৪ সালেও তিনি ভোটে জেতেন। ২০১৯ সালে তিনি কেন্দ্রীয় মন্ত্রী স্মৃতি ইরানির কাছে এই আসন থেকে পরাজিত হন। ৫৫ হাজারের বেশি ভোটের ফারাক ছিল তাঁদের।সম্ভবত এই হারের আশঙ্কা প্রথম থেকেই ছিল তাঁর। সে কারণেই কেরালার ওয়েনাড় আসন থেকে দাঁড়িয়েছিলেন রাহুল গান্ধী। এই সিদ্ধান্তে লাভ হয় তাঁর সাত লাখের বেশি ভোটে এই আসন থেকে জেতেন রাহুল গান্ধী। ২০০৯ সাল থেকে ওয়েনাড় আসন ধরে রেখেছে কংগ্রেস। ২০১৯-এর নির্বাচনে কেরালার ২০টি আসনের মধ্যে ১৯টিতেই জয় পায় কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন UDF।
রাহুলের জন্য সহজ লড়াই নয় ওয়েনাড়?মনোনয়ন জমা করার আগে রাহুল গান্ধী, প্রিয়াঙ্কা গান্ধী এবং কে সি বেণুগোপাল ওয়েনাড়ে একটি বড় ব়্যালি করেছিলেন। সেই ব়্যালিতে নজরে পড়েনি UDF-এর অন্তর্গত দল IUML-এর কোনও ঝাণ্ডা। যা নিয়ে চর্চা শিবিরের অন্দরে। একবার অমিত শাহ এই IUML দলের ঝাণ্ডা নিয়ে কটাক্ষ করে বলেছিলেন, যখন ওখানে কোনও জয়ের সেলিব্রেশনে ব়্যালি হয় এবং সবুজ ঝাণ্ডা দেখা যায়, বোধা মুশকিল হয় ভারতের মিছিল না পাকিস্তানের।
চলতি বছর ওয়েনাড়ে গিয়ে একাধিক প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন রাহুল গান্ধী। কৃষকদের জন্য ন্যূনতম সহায়ক মূল্য, পরাযায়ী শ্রমিকদের সামাজিক সুরক্ষা, স্টার্ট আপের জন্য ৫ হাজার কোটি টাকার সাহায্য, সরকারি চাকরির ক্ষেত্রে ভর্তির পরীক্ষায় পেপার লিক আটকাতে ব্যবস্থা, মহালক্ষ্মী গ্যারান্টি যোজনা গরিব মহিলাদের ব্যাঙ্কে ১ লাখ টাকা পৌঁছনোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন কংগ্রেস প্রার্থী।
প্রতিদ্বন্দ্বী কারা?কে সুরেন্দ্র NDA-র প্রার্থী। এর আগে ২০১৯ সালে পথনমথিট্টা লোকসভা কেন্দ্রে লড়াই করেছিলেন। যদিও হেরে গিয়েছিলেন তিনি। তৃতীয় স্থান অধিকার করেন তিনি। জিতেছিলেন কংগ্রেসের কে অ্যান্টনি। এরপর ২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনে তিনি দু'টি আসন থেকে লড়েছিলেন। মঞ্জেশ্বর এবং কোন্নী। দু'টিতেই হেরে যান তিনি। ২০১৬ বিধানসভা নির্বাচনেও তিনি মঞ্জেশ্বর আসন থেকে লড়েছিলেন। মাত্র ৮৯ ভোটে তিনি হেরে গিয়েছিলেন IUML প্রার্থীর কাছে।
লেফট ডেমোক্রেটিক ফ্রন্টের প্রার্থী অ্যানি রাজা। তিনি CPI-এর ন্যাশনাল ফেডারেশন অফ ইন্ডিয়ান ওম্যানের সম্পাদক। এ ছাড়াও দলের এক্সিকিউটিভ কমিটির সদস্য। CPI-এর সাধারণ সম্পাদক ডি রাজার স্ত্রী অ্যানি।
বিশ্লেষকদের একাংশ বলছেন, রাহুলের আসল লড়াই হবে অ্যানি রাজার সঙ্গেই। বামেদের অনুগত ভোটারদের সমর্থন তো তিনি পাবেনই, সঙ্গে IUML, UDF-এর অন্তর্গত, তারাও অ্যানিকে ভোট দিতে পারেন। তবে এর বিপরীত অবস্থানও রয়েছে। CPI এবং কংগ্রেস, দু'টি দলই ইন্ডিয়া জোটের অংশ। দিল্লিতে তাদের দোস্তি থাকলেও কেরালায় রয়েছে কুস্তি। মাত্র কিছুদিন আগেই রাহুল গান্ধী CPIM-এর পলিটব্যুরো সদস্য তথা কেরালার মুখ্যমন্ত্রী পিনারাই বিজয়নের গ্রেফতারি দাবি করেছিলেন।
বিশ্লেষকদের একাংশের মতে, ওয়ানাডে রাহুল গান্ধীর জন্য আগেরবারের মতো সমর্থন বা উচ্ছ্বাস আর তেমন নেই। পাঁচ বছর আগে কেরালার মানুষ বিশ্বাস করেছিলেন, কেন্দ্রে BJP-কে সরিয়ে কংগ্রেসের নেতৃত্বে দেশের সরকার হলে, রাহুলই হবেন প্রধানমন্ত্রী। কেরালা থেকে প্রথম প্রধানমন্ত্রী দেখার আশায় বুক বেঁধেছিলেন ওয়েনাড়বাসী। এখন আর প্রধানমন্ত্রিত্ব নিয়ে ভাবছেন না কেউ। গত বছর তাঁকে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দেখার আশায় অনেক বামপন্থী সমর্থকও ভোট দিয়েছিলেন রাহুলকে। কিন্তু, এবার রাহুলের প্রধানমন্ত্রী হওয়ার আশা ছেড়েছে ওয়েনাড়। তা হলে কি রাহুলের লোকসভায় যাওয়া নিয়ে সংশয় রয়েছে? শুক্রবার সেই জবাব দেবে ওয়েনাড়।