• মেরিন ড্রাইভ ও তিনটি ব্রিজ লোকসভা ভোটে তৃণমূলের প্রচারের অন্যতম অস্ত্র
    বর্তমান | ২৫ এপ্রিল ২০২৪
  • সংবাদদাতা, কাঁথি: মুম্বইয়ের ধাঁচে দীঘা-শৌলা (কাঁথি) উপকূলে ঝকঝকে মেরিন ড্রাইভ  আর তিনটি বিশালাকার ব্রিজ এবার লোকসভা নির্বাচনে তৃণমূলের প্রচারের অন্যতম হাতিয়ার। শুধু তাই নয়, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায়ের স্বপ্নের প্রকল্পগুলির মধ্যে অন্যতম মেরিন ড্রাইভ ‘সৈকত সরণি’ তৈরি হওয়ার পর সংশ্লিষ্ট এলাকাগুলির আর্থ-সামাজিক ব্যবস্থারও  অনেকটাই পরিবর্তন হয়েছে। রাস্তার ধারে আরও হোটেল-লজ, দোকানপাট গড়ে উঠছে। বেকার যুবকদের কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি হয়েছে। প্রচারে এই সাফল্যের কথা‌ই তুলে ধরছে শাসকদল। 

    উল্লেখ্য, দীঘা থেকে শঙ্করপুর, তাজপুর, মন্দারমণি হয়ে কাঁথির শৌলা পর্যন্ত গিয়েছে প্রায় ৩০ কিলোমিটার দীর্ঘ মেরিন ড্রাইভ। এই যাত্রাপথে রয়েছে তাজপুর, শঙ্করপুর ও শৌলায় তিনটি বিশালাকার ব্রিজ। যা যথাক্রমে জলধা খাল, শঙ্করপুর খাল ও শৌলা খালের উপর অবস্থিত। এর ফলে পর্যটকরা দীঘা থেকে যাত্রা শুরু করে সমুদ্রের শোভা উপভোগ করতে করতে খুব সহজেই শঙ্করপুর, তাজপুর, মন্দারমণি হয়ে কাঁথির শৌলায় পৌঁছে যাচ্ছেন। তেমনি শৌলা থেকে শুরু করে মন্দারমণি, তাজপুর, শঙ্করপুর হয়ে দীঘা চলে আসছেন। 

    প্রশাসনিক সূত্রে খবর, তিনটি ব্রিজ তৈরি করতে পূর্তদপ্তরের ১৬০ কোটি টাকা খরচ হয়েছে। মেরিন ড্রাইভ তৈরিতে এ পর্যন্ত ৫০ কোটিরও বেশি টাকা খরচ হয়েছে। রাস্তাটি দীঘা-শঙ্করপুর উন্নয়ন সংস্থার তত্ত্বাবধানে তৈরি হয়েছে। আগেই দীঘা থেকে শঙ্করপুর পর্যন্ত রাস্তা সম্প্রসারিত হয়েছে। বর্তমানে শৌলার দিক থেকে মন্দারমণি পর্যন্ত সম্প্রসারণের কাজ চলছে। আগামীদিনে মন্দারমণি ও তাজপুর এলাকায়ও রাস্তা সম্প্রসারণ  হবে এবং শঙ্করপুরে গিয়ে শেষ হবে। রাস্তার দু’দিকে সৌন্দর্যায়ন করা হবে। পর্যটকরা যাতে বসে সমুদ্রের ঢেউ উপভোগ করতে পারেন, তার জন্য রাস্তার পাশে কংক্রিটের আসন এবং পানীয় জলের জলাধার, শৌচালয় সহ অন্যান্য পরিকাঠামো গড়ে তোলা হবে। সব মিলিয়ে আরও ঝাঁ-চকচকে হয়ে উঠবে মেরিন ড্রাইভ। অথচ যখন ব্রিজগুলি ছিল না, তখন দীঘা থেকে শঙ্করপুরে আসতে হলে রামনগরের চৌদ্দমাইল দিয়ে ঘুরে আসতে হতো। আবার তাজপুর থেকে মন্দারমণি যেতে হলে চাউলখোলা দিয়ে ঘুরে যেতে হতো। কাঁথি থেকে মন্দারমণি যেতে হলেও চাউলখোলা দিয়ে ঘুরে যেতে হতো। তিনটি ব্রিজ তৈরি হওয়ায় সেই যন্ত্রণা থেকে মুক্তি পেয়েছেন পর্যটকরা। তাঁদের যাতায়াতের ক্ষেত্রে সুবিধা হয়েছে এবং খুব সহজেই গন্তব্যে পৌঁছে যাচ্ছেন। তেমনি  সংশ্লিষ্ট এলাকার বাসিন্দাদের নিজেদের এলাকায় যাতায়াত সহজ হয়েছে। শুধু তাই নয়, মেরিন ড্রাইভ তৈরি হওয়ায় দীঘা মোহনা কিংবা অন্যান্য মৎস্য কেন্দ্র থেকে মাছ সহ আনুষঙ্গিক অন্যান্য পণ্য পরিবহণের ক্ষেত্রেও যথেষ্ট সুবিধা হয়েছে। মেরিন ড্রাইভ চালু হওয়ায় দীঘা-নন্দকুমার ১১৬বি জাতীয় সড়কে গাড়ির চাপ কমেছে। জাতীয় সড়কে দুর্ঘটনার হারও আগের তুলনায় কমেছে। 

    দীঘা থেকে মন্দারমণি পর্যন্ত এলাকা রামনগর বিধানসভার মধ্যে পড়ে। রামনগর বিধানসভা তৃণমূল নির্বাচনী কমিটির আহ্বায়ক তথা রামনগর-১ পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি নিতাইচরণ সার বলেন, দীঘা একটি  আন্তর্জাতিক মানের পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে উঠেছে। মেরিন ড্রাইভ এবং তিনটি ব্রিজ তৃণমূল সরকারের একটি বড় সাফল্য এ ব্যাপারে কোনও সন্দেহ নেই। পর্যটকরা তো বটেই, উপকূল এলাকার বাসিন্দারা যাতায়াতের ক্ষেত্রে বিশেষভাবে উপকৃত হচ্ছেন। আমরা প্রচারে বেশি করে বিষয়টি তুলে ধরছি। বিজেপির কাঁথি সাংগঠনিক জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক চন্দ্রশেখর মণ্ডল বলেন, দীঘাকে গোয়া করার কথা ঘোষণা করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। দীঘা গোয়া হয়নি। সারা দেশের মধ্যে দীঘা একটি গুরুত্বপূর্ণ সমুদ্রতট হওয়া সত্ত্বেও যেটুকু হওয়ার কথা ছিল, তা হয়নি। হলে মেদিনীপুরের একটি বড় অংশের মানুষের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন হতো। মেরিন ড্রাইভ তৈরি করে মুখরক্ষার চেষ্টাই করেছে সরকার।  

     দীঘা নায়েকালী ব্রিজ।-নিজস্ব চিত্র
  • Link to this news (বর্তমান)